০৯ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

ISER কলকাতায় গবেষক ছাত্রের আত্মহত্যা

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ৯ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
  • / 22

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : সোশ্যাল মিডিয়ায় সিনিয়রের বিরুদ্ধে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে চরম সিদ্ধান্ত নিলেন আইজারের এক গবেষক ছাত্র। অভিযোগ জানিয়েও মেলেনি কোনও সুরাহা। এই ক্ষোভ সোশ্যাল মিডিয়ায় উগরে দেন তিনি আইজার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। নদিয়ার কল্যাণীতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর)-এর গবেষক অনমিত্র রায় শুক্রবার আত্মহত্যা করেছেন।

মৃত্যুর আগে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দীর্ঘ আত্মহত্যাপত্র পোস্ট করে তিনি তুলে ধরেছেন সহকর্মীর নির্যাতন, গাইডের অবহেলা ও শৈশব থেকে চলা মানসিক আঘাতের কাহিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার হোস্টেলে অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অনমিত্র। সেখান থেকে তাঁকে দ্রুত কল্যাণী এইমসে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

তবে শুক্রবার সকালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরিবার সূত্রেও একই তথ্য মিলেছে। মৃতের দিদির অভিযোগ, র‍্যাগিংয়ের মানসিক চাপই অনমিত্রকে এই মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

শ্যামনগরের বাসিন্দা অনমিত্র লিখেছেন, তিনি অটিস্টিক এবং ছোটবেলা থেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। আইআইএসইআর-এ যোগ দেওয়ার পর সহপাঠী পিএইচডি গবেষক সৌরভ বিশ্বাস বারবার তাঁকে হেনস্তা করতেন। একাধিকবার অভিযোগ জানানোর পরও কোনো সুরাহা হয়নি।

উল্টে গাইড প্রকাশ্যে সেই সহপাঠীর প্রশংসা করেছেন, এমনকি তাঁর থিসিসে “বড় ধরনের অনিয়ম” থাকার অভিযোগও অনমিত্র তুলেছেন। সুইসাইড নোটে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল ল্যাবরেটরিতে তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে চিৎকার করে অপমান করা হয়। সেদিনই অ্যান্টি-র‌্যাগিং সেলে ইমেল ও অফিসিয়াল পোর্টালে অভিযোগ জানান, কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। ছাত্র পরিষদের এক সদস্য সহানুভূতি দেখালেও অন্য একজন চুপ থাকতে বলেন।

গাইডও একই মনোভাব পোষণ করেন এবং দোষ খুঁজে পান কেবল অনমিত্রর মধ্যেই। শৈশবের অবহেলা, কৈশোরের বিষণ্নতা, কলেজজীবনের হতাশা সব মিলিয়ে বহু বছর ধরে মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়ছিলেন অনমিত্র। তিনি লিখেছেন, “আমি এই পৃথিবীর জন্য তৈরি নই… আর পারছি না। জীবনে যে শান্তি পাইনি, মৃত্যুর পর যেন সেই শান্তি পাই।”

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তাধীন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

ISER কলকাতায় গবেষক ছাত্রের আত্মহত্যা

আপডেট : ৯ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : সোশ্যাল মিডিয়ায় সিনিয়রের বিরুদ্ধে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে চরম সিদ্ধান্ত নিলেন আইজারের এক গবেষক ছাত্র। অভিযোগ জানিয়েও মেলেনি কোনও সুরাহা। এই ক্ষোভ সোশ্যাল মিডিয়ায় উগরে দেন তিনি আইজার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। নদিয়ার কল্যাণীতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর)-এর গবেষক অনমিত্র রায় শুক্রবার আত্মহত্যা করেছেন।

মৃত্যুর আগে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দীর্ঘ আত্মহত্যাপত্র পোস্ট করে তিনি তুলে ধরেছেন সহকর্মীর নির্যাতন, গাইডের অবহেলা ও শৈশব থেকে চলা মানসিক আঘাতের কাহিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার হোস্টেলে অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অনমিত্র। সেখান থেকে তাঁকে দ্রুত কল্যাণী এইমসে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

তবে শুক্রবার সকালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরিবার সূত্রেও একই তথ্য মিলেছে। মৃতের দিদির অভিযোগ, র‍্যাগিংয়ের মানসিক চাপই অনমিত্রকে এই মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

শ্যামনগরের বাসিন্দা অনমিত্র লিখেছেন, তিনি অটিস্টিক এবং ছোটবেলা থেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। আইআইএসইআর-এ যোগ দেওয়ার পর সহপাঠী পিএইচডি গবেষক সৌরভ বিশ্বাস বারবার তাঁকে হেনস্তা করতেন। একাধিকবার অভিযোগ জানানোর পরও কোনো সুরাহা হয়নি।

উল্টে গাইড প্রকাশ্যে সেই সহপাঠীর প্রশংসা করেছেন, এমনকি তাঁর থিসিসে “বড় ধরনের অনিয়ম” থাকার অভিযোগও অনমিত্র তুলেছেন। সুইসাইড নোটে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল ল্যাবরেটরিতে তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে চিৎকার করে অপমান করা হয়। সেদিনই অ্যান্টি-র‌্যাগিং সেলে ইমেল ও অফিসিয়াল পোর্টালে অভিযোগ জানান, কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। ছাত্র পরিষদের এক সদস্য সহানুভূতি দেখালেও অন্য একজন চুপ থাকতে বলেন।

গাইডও একই মনোভাব পোষণ করেন এবং দোষ খুঁজে পান কেবল অনমিত্রর মধ্যেই। শৈশবের অবহেলা, কৈশোরের বিষণ্নতা, কলেজজীবনের হতাশা সব মিলিয়ে বহু বছর ধরে মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়ছিলেন অনমিত্র। তিনি লিখেছেন, “আমি এই পৃথিবীর জন্য তৈরি নই… আর পারছি না। জীবনে যে শান্তি পাইনি, মৃত্যুর পর যেন সেই শান্তি পাই।”

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তাধীন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি।