০৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় পাক-অধ্যুষিত কাশ্মীরেই আটকে যান মঈন আলির বাবা-মা

সুস্মিতা
  • আপডেট : ২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 356

ইসরাইল ও গাজার ঘটনা থেকে দৃষ্টি সরাতেই ভারত-পাক যুদ্ধের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে: মঈন

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে ভারতীয় পর্যটকের ওপর জঙ্গি হামলার জেরে চলতি মে মাসের শুরুর দিকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও পাকিস্তান। সেই হামলার সময়ে সবচেয়ে আতঙ্কে ছিলেন দুই দেশের সীমান্তের কাছাকাছি থাকা মানু¡গুলি। ঠিক তেমনই এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা ইংল্যান্ড ক্রিকেটার মঈন আলির বাবা-মা। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী যখন পাকিস্তানে একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল, তার খুব কাছেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আটকে পড়েছিলেন মঈন আলির বাবা-মা। ভারতের যুদ্ধের বিমানের গোলায় শেষ হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে কাটানো তার বাবা-মায়ের সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এ দিন পডকাস্টের মাধ্যমে গোটা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরলেন পাক-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ক্রিকেটার মঈন আলি।

এবারের আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠেন মঈন আলি। ব্যাটের পাশাপাশি নিজের স্পিন বোলিংয়ে একের পর এক ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলকে চাপে রেখেছিলেন তিনি। এদিকে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে মঈন আলি যখন নিজের দলকে প্লে-অফে তোলার লক্ষ্যে ২২ গজে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন আইপিএলে, ঠিক তখনই ভারত-পাক লড়াইয়ের মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আটকে পড়া তার বাবা-মাও প্রাণে বাঁচার লড়াই চালিয়েছেন। এর মাঝে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মঈন। বাধ্য হয়ে টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ার আগেই ভারত ছেড়েছিলেন। পরে যখন যুদ্ধ শুরু হয় পাকিস্তানে থাকা বাবা-মায়ের জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। ভারত-পাকিস্তান পালটাপালটি হামলার একপর্যায়ে পরিবারসহ ইংল্যান্ডে ফিরে যান তিনি। যদিও যুদ্ধ-বিরতির পর আইপিএল শুরু হলেও মঈন আর ভারতে ফেরেননি।

আরও পড়ুন: একদিন PoK নিজে থেকেই বলবে, ‘আমি ভারতের’ : rajnath singh

মঈনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বার্মিংহামে হলেও তিনি মূলত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। তার দাদা ছিলেন আজাদ কাশ্মীরের মিরপুর এলাকার বাসিন্দা। পরবর্তীতে তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান এবং এক ব্রিটিশ মহিলাকে বিয়ে করেন। গত মাসে মঈনের বাবা-মা ইংল্যান্ড থেকে গিয়েছিলেন পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরে। এর মধ্যেই শুরু হয় ভারত-পাক সংঘাত। বাবা-মা পাকিস্তানে থাকায় চিন্তায় পড়ে যান মঈন। সেদিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মঈন পডকাস্টে বলেন, ‘পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরের যেসব জায়গায় ভারতীয় সামরিক বাহিনী হামলা চালিয়েছিল, সেখান থেকে আমার বাবা-মা খুব বেশি দূরে ছিলেন না। কেউ বলছিল যুদ্ধ হবে না, কেউ বলছিল পালটা আক্রমণ অবধারিত। প্রচুর মিথ্যা ছড়াচ্ছিল, সংবাদমাধ্যমও অনেক ভুল তথ্য দিচ্ছিল। সত্যি যে কী ঘটছিল, কেউই সঠিক বলছিল না। এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ছিল।’

আরও পড়ুন: জীবদ্দশায় ভারত-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ দেখে যেতে চাই : আক্রম

৩৭ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডার আতঙ্কের কথা তুলে ধরে আরও বলেন, ‘হঠাৎ করেই মনে হল যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে দুই দেশের মধ্যে। যদিও আমি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনিনি। তবে সবার আগে পরিবারকে নিরাপদে বের করে আনার চিন্তা মাথায় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বাবা-মা সেদিনই শেষ ফ্লাইটে উঠতে পেরেছিলেন। তারা পাকিস্তান থেকে বের হতে পেরেছেন শুনে স্বস্তি পেয়েছিলাম। যদিও গোটা পরিস্থিতি ভয়ংকর ছিল। কারণ, একে তো আমি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত, তার ওপর যুদ্ধের সময় ভারতে ছিলাম। ভয় পাচ্ছিলাম, যেন রাজনীতির শিকার না হয়ে পড়ি। যদিও আমার বিশ্বাস ছিল, দুই পাশের মানুষ একই। দুই পাশেই ভালো মানুষ বাস করে। শুধু সীমান্ত তাদের বিভক্ত করেছে। ওই সময় নাইট রাইডার্স কর্তৃপক্ষ আমার হঠাৎ আইপিএল ছেড়ে ইংল্যান্ডে ফেরার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে। ওই দলটার সবাই সেই কঠিন মুহূর্তে আমার পাশে ছিল। জানি না কী কারণে হঠাৎ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হল? তবে আমি মনে করি, এটা যুক্তরাষ্ট্র বনাম চিনের অস্ত্র রাজনীতির অংশ। হতে পারে, ইসরাইল ও গাজার ঘটনা থেকে দৃষ্টি সরাতে এই সংঘাতের মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: ‘অপারেশন সিন্দুর’ সন্ত্রাসবাদের জন্য কড়া জবাব: মোদি

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় পাক-অধ্যুষিত কাশ্মীরেই আটকে যান মঈন আলির বাবা-মা

আপডেট : ২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার

ইসরাইল ও গাজার ঘটনা থেকে দৃষ্টি সরাতেই ভারত-পাক যুদ্ধের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে: মঈন

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে ভারতীয় পর্যটকের ওপর জঙ্গি হামলার জেরে চলতি মে মাসের শুরুর দিকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও পাকিস্তান। সেই হামলার সময়ে সবচেয়ে আতঙ্কে ছিলেন দুই দেশের সীমান্তের কাছাকাছি থাকা মানু¡গুলি। ঠিক তেমনই এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা ইংল্যান্ড ক্রিকেটার মঈন আলির বাবা-মা। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী যখন পাকিস্তানে একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল, তার খুব কাছেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আটকে পড়েছিলেন মঈন আলির বাবা-মা। ভারতের যুদ্ধের বিমানের গোলায় শেষ হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে কাটানো তার বাবা-মায়ের সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এ দিন পডকাস্টের মাধ্যমে গোটা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরলেন পাক-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ক্রিকেটার মঈন আলি।

এবারের আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠেন মঈন আলি। ব্যাটের পাশাপাশি নিজের স্পিন বোলিংয়ে একের পর এক ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলকে চাপে রেখেছিলেন তিনি। এদিকে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে মঈন আলি যখন নিজের দলকে প্লে-অফে তোলার লক্ষ্যে ২২ গজে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন আইপিএলে, ঠিক তখনই ভারত-পাক লড়াইয়ের মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আটকে পড়া তার বাবা-মাও প্রাণে বাঁচার লড়াই চালিয়েছেন। এর মাঝে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মঈন। বাধ্য হয়ে টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ার আগেই ভারত ছেড়েছিলেন। পরে যখন যুদ্ধ শুরু হয় পাকিস্তানে থাকা বাবা-মায়ের জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। ভারত-পাকিস্তান পালটাপালটি হামলার একপর্যায়ে পরিবারসহ ইংল্যান্ডে ফিরে যান তিনি। যদিও যুদ্ধ-বিরতির পর আইপিএল শুরু হলেও মঈন আর ভারতে ফেরেননি।

আরও পড়ুন: একদিন PoK নিজে থেকেই বলবে, ‘আমি ভারতের’ : rajnath singh

মঈনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বার্মিংহামে হলেও তিনি মূলত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। তার দাদা ছিলেন আজাদ কাশ্মীরের মিরপুর এলাকার বাসিন্দা। পরবর্তীতে তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান এবং এক ব্রিটিশ মহিলাকে বিয়ে করেন। গত মাসে মঈনের বাবা-মা ইংল্যান্ড থেকে গিয়েছিলেন পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরে। এর মধ্যেই শুরু হয় ভারত-পাক সংঘাত। বাবা-মা পাকিস্তানে থাকায় চিন্তায় পড়ে যান মঈন। সেদিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মঈন পডকাস্টে বলেন, ‘পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরের যেসব জায়গায় ভারতীয় সামরিক বাহিনী হামলা চালিয়েছিল, সেখান থেকে আমার বাবা-মা খুব বেশি দূরে ছিলেন না। কেউ বলছিল যুদ্ধ হবে না, কেউ বলছিল পালটা আক্রমণ অবধারিত। প্রচুর মিথ্যা ছড়াচ্ছিল, সংবাদমাধ্যমও অনেক ভুল তথ্য দিচ্ছিল। সত্যি যে কী ঘটছিল, কেউই সঠিক বলছিল না। এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ছিল।’

আরও পড়ুন: জীবদ্দশায় ভারত-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ দেখে যেতে চাই : আক্রম

৩৭ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডার আতঙ্কের কথা তুলে ধরে আরও বলেন, ‘হঠাৎ করেই মনে হল যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে দুই দেশের মধ্যে। যদিও আমি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনিনি। তবে সবার আগে পরিবারকে নিরাপদে বের করে আনার চিন্তা মাথায় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বাবা-মা সেদিনই শেষ ফ্লাইটে উঠতে পেরেছিলেন। তারা পাকিস্তান থেকে বের হতে পেরেছেন শুনে স্বস্তি পেয়েছিলাম। যদিও গোটা পরিস্থিতি ভয়ংকর ছিল। কারণ, একে তো আমি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত, তার ওপর যুদ্ধের সময় ভারতে ছিলাম। ভয় পাচ্ছিলাম, যেন রাজনীতির শিকার না হয়ে পড়ি। যদিও আমার বিশ্বাস ছিল, দুই পাশের মানুষ একই। দুই পাশেই ভালো মানুষ বাস করে। শুধু সীমান্ত তাদের বিভক্ত করেছে। ওই সময় নাইট রাইডার্স কর্তৃপক্ষ আমার হঠাৎ আইপিএল ছেড়ে ইংল্যান্ডে ফেরার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে। ওই দলটার সবাই সেই কঠিন মুহূর্তে আমার পাশে ছিল। জানি না কী কারণে হঠাৎ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হল? তবে আমি মনে করি, এটা যুক্তরাষ্ট্র বনাম চিনের অস্ত্র রাজনীতির অংশ। হতে পারে, ইসরাইল ও গাজার ঘটনা থেকে দৃষ্টি সরাতে এই সংঘাতের মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: ‘অপারেশন সিন্দুর’ সন্ত্রাসবাদের জন্য কড়া জবাব: মোদি