বিশ্বাসঘাতকতা: ইরানের একতরফা মার্কিন হামলা নিয়ে কেন্দ্র নীরব কেন? সরব বিরোধীরা

- আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার
- / 13
Pro
এবার ইসরাইল-ইরান যুদ্ধে জড়িয়ে গেল আমেরিকাও। রবিবার কাকভোরে ইরানের ফোরডো, নাতানাজ এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালায় আমেরিকা। ইরানে হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনার জন্য দু’সপ্তাহ সময় নেওয়ার কথাও বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু দু’দিন যেতে না যেতেই ইরানের উপর হামলা চালাল মার্কিন সামরিক বাহিনী। আর এভাবে ইরানে একতরফা আমেরিকার হামলা চালানো নিয়ে সরব হয়েছে ভারতের বিরোধী দলগুলি। ইরানে আমেরিকার এই হামলা নিয়ে কেন্দ্রের মোদি সরকার কেন নরব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা।
এই প্রসঙ্গে হায়দরাবাদের সাংসদ তথা মিম পার্টির প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘‘আমি আশা করি আমাদের সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই একতরফা বোমা হামলার নিন্দা করবে, যা আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রসংঘের সনদের লঙ্ঘন। আমার আশা, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র মার্কিন হামলার নিন্দা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।’’ এরপরই মার্কিন হামলা প্রসঙ্গে ওয়াইসি বলেন, ‘‘ইরানের এই তিন-চারটি স্থানে মার্কিন বোমা হামলা তাদের (ইরানকে) থামাতে পারবে না। আমার কথা মনে রাখবেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ইরানও এটা করবে। এমনকি অন্যান্য দেশও এটা করবে। কারণ এখন তারা বুঝতে পেরেছে যে, পারমাণবিক বোমা এবং পারমাণবিক ওয়ারহেড থাকাই ইসরাইলের আধিপত্যের বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিরোধ। এভাবে ইরানে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও রাষ্ট্রসংঘের সনদের বিধির লঙ্ঘন করেছে আমেরিকা। আমি নিশ্চিত আগামী পাঁচ বছরে ইরান একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হবে। অনেক আরব দেশও ভাববে যে তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা প্রয়োজন।’’ মোদি সরকারের সমালোচনা করে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, ‘‘এই বিপদের সময়ে আপনি (কেন্দ্র) কার সঙ্গে রয়েছেন তা বিশ্ব দেখছে। আপনি যদি আপনার বন্ধুর সাথে না থাকেন, যিনি আগে আপনার উপকার করেছিলেন, তাহলে এটি পররাষ্ট্র নীতির সাথে একটি বড় বিশ্বাসঘাতকতা।’’ সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক ডি. রাজা বলেন, ‘‘আমাদের দল অন্যান্য সকল বামপন্থী দলের সাথে পরামর্শ করছে। আমরা ইরানের উপর মার্কিন বোমা হামলার নিন্দা জানাই। আমরা ইরানের উপর মার্কিন হামলা নিয়ে মোদি সরকারের নীরবতার নিন্দা জানাচ্ছি এবং এই যুদ্ধ নিয়ে ভারত সরকারের নীতি ও অবস্থান কি হবে তা নিয়ে একটি শব্দও মোদি সরকার খরচ না করায় তার নিন্দা করে একটি কড়া বিবৃতি প্রকাশ করতে যাচ্ছি।’’ পিডিপি নেত্রী ইলতিজা মুফতি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলির নীরবতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা খুবই দুঃখজনক যে অর্গানাইজেশন অব ইসলামি কোঅপারেশন (ওআইসি) এই নিয়ে নীরব। কিন্তু ভারত সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইরানও ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকা ইরানে আক্রমণ করেছে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু, আরও দুঃখজনক বিষয় হল, ভারতও ইরান ও ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর মতো কোনও পদক্ষেপ করছে না।’’ জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী ইরানের উপর মার্কিন হামলা নিয়ে বিশ্বব্যাপী হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আমেরিকা পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একটি বৃহৎ রাষ্ট্র হিসেবে তাদের শান্তির জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত ছিল। শান্তিই একমাত্র বিকল্প। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি সভা ডেকে আমেরিকার আচরণের নিন্দা করা উচিত এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা উচিত।’’ ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রধান ফারুক আবদুল্লাহ এই হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি হতাশ যে মুসলিম বিশ্ব নীরব। আজ ইরানের এই অবস্থা। কিন্তু আগামীকাল তারাই একে একে (মুসলিম বিশ্ব) আমেরিকার হাতে ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তারা আজ না জেগে ওঠে, একদিন অবশ্যই তাদের পালা আসবে।’’ ইরান প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘যদি তারা মনে করে যে ইরান তার অবস্থান বদলাবে, তাহলে তারা ভুল করছে। ইরান কারবালার কথা মনে রাখে। ইরান মনে করে যে, এটি দ্বিতীয় কারবালা। তাদের গলা কেটে ফেলা হবে, কিন্তু তারা মাথা নত করবে না।’ আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা আমেরিকার সমালোচনা করে বলেন, ‘‘আমেরিকা সবাইকে বাধ্য করছে তাদেরকে (আমেরিকাকে) বিশ্বের ‘বস’ হিসেবে ঘোষণা করতে। যা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার পরিপন্থী। ভারতের উচিত বিবেকের ডাক শোনা। কারণ আমাদের সম্পর্কে আমেরিকা যে বিবৃতি দিয়েছে তাও অসম্মানজনক। ভারতের থেকে একটি সরাসরি বার্তা আসা উচিত। শান্তির নামে এই ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।’’