১৩ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সামরিক কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের

শোক ও রোষে উত্তাল তেহরান: ‘আমেরিকা-ইসরাইল নিপাত যাক’ জানাজায় স্লোগান

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 308

শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরাইলের সাথে ১২ দিনের যুদ্ধে নিহত শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হল। এদিন হাজার হাজার শোকাহত মানুষ তেহরানের রাস্তায় নেমে এসেছিলেন ‘আমেরিকার মৃত্যু হোক, ইসরাইলের মৃত্যু হোক’ স্লোগানে।

এদিন সকালে তেহরানের এঙ্কেলাব স্কোয়ার থেকে জানাজার উদ্দেশে মিছিল শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়, কালো পোশাক পরিহিত মানুষজন ইরানের পতাকা হাতে রাস্তায় নেমেছেন এবং নিহত সামরিক কমান্ডারদের ছবি ধরে আছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের এলিট কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল ইসমাইল কানি সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: বোমা মারলেও ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরবে না, আমেরিকাকে বার্তা ইরানের বিদেশমন্ত্রীর

ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি, গার্ডের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ এবং অন্যান্যদের কফিনগুলো ট্রাক করে আজাদি স্ট্রিট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শোকযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ‘আমেরিকার মৃত্যু হোক’ এবং ‘ইসরাইলের মৃত্যু হোক’ স্লোগান দেন। আমেরিকা ও ইসরাইলের পতাকাও পোড়ানো হয়। সালামি এবং হাজিজাদেহ দু’জনেই ১৩ জুন যুদ্ধের প্রথম দিনেই নিহত হয়েছিলেন। ইসরাইল সেই সময় ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থান এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে ব্যাপক হামলা চালায়।

আরও পড়ুন: ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেই মৃত্যুদণ্ড, আইন পাস ইরানের সংসদে

নিহতদের মধ্যে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের মেজর জেনারেল এবং সশস্ত্র বাহিনীর দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ কমান্ডার মুহাম্মদ বাঘেরিও রয়েছেন। তাঁকে তার স্ত্রী ও কন্যার সাথে দাফন করা হয়। পারমাণবিক বিজ্ঞানী মুহাম্মদ মেহেদি তেহরানচিও এই হামলায় নিহত হয়েছেন এবং তাঁকেও তার স্ত্রীর সাথে দাফন করা হয়। জানাজার মিছিল শুরু হওয়ার আগে কমান্ডারদের কফিনের পাশে দোয়া করেন আয়াতুল্লা আলি খামেনি, যা পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।

আরও পড়ুন: ইরানের সুন্নি আলেমদের ঐতিহাসিক বিবৃতি: ‘একতার ডাক’ মুসলিম উম্মাহর প্রতি

 

বৃহস্পতিবার, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, খামেনি একটি  ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। এতে তিনি আমেরিকা ও ইসরাইলের প্রতি সতর্কবার্তা ও হুমকি দেন। তিনি আমেরিকার তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘটনাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়’ বলেন এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে জয় হয়েছে ইরানের বলেন। ইসরাই ল দাবি করেছে, তারা প্রায় ৩০ জন ইরানি কমান্ডার এবং ১১ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। এছাড়াও তারা আটটি পারমাণবিক-সম্পর্কিত স্থাপনা এবং ৭২০টিরও বেশি সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী গোষ্ঠীর মতে, এই যুদ্ধে ১,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অন্তত ৪১৭ জন বেসামরিক নাগরিক। ইরান ইসরাইলের দিকে ৫৫০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যেগুলি আঘাত হেনেছিল অনেক আবাসিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ২৮ জন নিহত হন।

তেহরানের ইসলামিক উন্নয়ন সমন্বয় পরিষদের প্রধান মোহসেন মাহমুদ এই দিনটিকে  ‘ইসলামি ইরান ও বিপ্লবের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।  এদিন সরকারি কর্মীদের জানাজায় যোগদানের সুবিধার্থে সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়েছিল।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সামরিক কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের

শোক ও রোষে উত্তাল তেহরান: ‘আমেরিকা-ইসরাইল নিপাত যাক’ জানাজায় স্লোগান

আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার

শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরাইলের সাথে ১২ দিনের যুদ্ধে নিহত শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হল। এদিন হাজার হাজার শোকাহত মানুষ তেহরানের রাস্তায় নেমে এসেছিলেন ‘আমেরিকার মৃত্যু হোক, ইসরাইলের মৃত্যু হোক’ স্লোগানে।

এদিন সকালে তেহরানের এঙ্কেলাব স্কোয়ার থেকে জানাজার উদ্দেশে মিছিল শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়, কালো পোশাক পরিহিত মানুষজন ইরানের পতাকা হাতে রাস্তায় নেমেছেন এবং নিহত সামরিক কমান্ডারদের ছবি ধরে আছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের এলিট কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল ইসমাইল কানি সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: বোমা মারলেও ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরবে না, আমেরিকাকে বার্তা ইরানের বিদেশমন্ত্রীর

ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি, গার্ডের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ এবং অন্যান্যদের কফিনগুলো ট্রাক করে আজাদি স্ট্রিট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শোকযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ‘আমেরিকার মৃত্যু হোক’ এবং ‘ইসরাইলের মৃত্যু হোক’ স্লোগান দেন। আমেরিকা ও ইসরাইলের পতাকাও পোড়ানো হয়। সালামি এবং হাজিজাদেহ দু’জনেই ১৩ জুন যুদ্ধের প্রথম দিনেই নিহত হয়েছিলেন। ইসরাইল সেই সময় ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থান এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে ব্যাপক হামলা চালায়।

আরও পড়ুন: ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেই মৃত্যুদণ্ড, আইন পাস ইরানের সংসদে

নিহতদের মধ্যে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের মেজর জেনারেল এবং সশস্ত্র বাহিনীর দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ কমান্ডার মুহাম্মদ বাঘেরিও রয়েছেন। তাঁকে তার স্ত্রী ও কন্যার সাথে দাফন করা হয়। পারমাণবিক বিজ্ঞানী মুহাম্মদ মেহেদি তেহরানচিও এই হামলায় নিহত হয়েছেন এবং তাঁকেও তার স্ত্রীর সাথে দাফন করা হয়। জানাজার মিছিল শুরু হওয়ার আগে কমান্ডারদের কফিনের পাশে দোয়া করেন আয়াতুল্লা আলি খামেনি, যা পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।

আরও পড়ুন: ইরানের সুন্নি আলেমদের ঐতিহাসিক বিবৃতি: ‘একতার ডাক’ মুসলিম উম্মাহর প্রতি

 

বৃহস্পতিবার, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, খামেনি একটি  ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। এতে তিনি আমেরিকা ও ইসরাইলের প্রতি সতর্কবার্তা ও হুমকি দেন। তিনি আমেরিকার তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘটনাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়’ বলেন এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে জয় হয়েছে ইরানের বলেন। ইসরাই ল দাবি করেছে, তারা প্রায় ৩০ জন ইরানি কমান্ডার এবং ১১ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। এছাড়াও তারা আটটি পারমাণবিক-সম্পর্কিত স্থাপনা এবং ৭২০টিরও বেশি সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী গোষ্ঠীর মতে, এই যুদ্ধে ১,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অন্তত ৪১৭ জন বেসামরিক নাগরিক। ইরান ইসরাইলের দিকে ৫৫০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যেগুলি আঘাত হেনেছিল অনেক আবাসিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ২৮ জন নিহত হন।

তেহরানের ইসলামিক উন্নয়ন সমন্বয় পরিষদের প্রধান মোহসেন মাহমুদ এই দিনটিকে  ‘ইসলামি ইরান ও বিপ্লবের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।  এদিন সরকারি কর্মীদের জানাজায় যোগদানের সুবিধার্থে সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়েছিল।