১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেপটিক ট্যাঙ্কে কাজে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু সিঙ্গুরে

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৫ অগাস্ট ২০২৩, শনিবার
  • / 30

নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলি: দিন কয়েক আগে বীরভূমের খয়রাশোলে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে অকালে ঝরে গিয়েছিল তিনটি প্রাণ। বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন, বীরবল বাদ্যকর, সনাতন ধীবর ও অমৃত বাগদি। এবার যেন সেই একই ঘটনার ছায়া হুগলিতে। একটি নির্মীয়মান সেপটিক ট্যাঙ্কে কাজ করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয় শনিবার।

মৃতরা হলেন সুব্রত মান্না (৪০) ও গণেশ দাস (৪০)। ঘটনাটি ঘটেছে সিঙ্গুরে রতনপুর এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিঙ্গুরের রতনপুর এলাকায় চন্দনা মাইতিদের বাড়িতে মাস দুয়েক আগে একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়। শনিবার সকালে ট্যাঙ্কের পাটাতন খুলতে যায় রাজমিস্ত্রির কর্মী সিঙ্গুরের বাসিন্দা গণেশ দাস ও ধনেখালির বাসিন্দা সুব্রত মান্না। প্রথমে গণেশ মান্না ট্যাঙ্কের নিচে নামে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও তাঁর সাড়াশধ না মেলায়  ট্যাঙ্কে নামেন সুব্রত দাস। তারা কেউই উঠে না আসায় খবর দেওয়া হয় দমকল এবং পুলিশে। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সিঙ্গুর থানার পুলিশ। চাঁপদানি থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিনও যায়। দমকল কর্মীরা ওই ট্যাঙ্ক থেকে গণেশ এবং সুব্রতকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে। এরপর দ্রুত তাদের সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দু’জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: বীরভূমে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু তিনজনের

যে বাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্কের কাজ হচ্ছিল সেই বাড়ির সদস্য চন্দনা মাইতি জানান, ‘মাস দুয়েক আগে শৌচাগারের জন্য ওই সেপটিক ট্যাঙ্কটি তৈরি করা হয়েছিল। তারপর থেকে কাজ বন্ধ ছিল। এদিন দু’জন শ্রমিক কাজে আসে। তারা সেপটিক ট্যাঙ্কের নিচে নেমে পাটা খুলতে গিয়ে ওই বিপত্তি ঘটে। চাঁপদানি দমকল কেন্দ্রের ওসি মলয় মজুমদার জানান, ‘অনেকদিন ওই সেফটি ট্যাঙ্কের মুখ বন্ধ ছিল। সেই কারণে ট্যাঙ্কের ভিতরে মিথেন জাতীয় কোনও বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়েছিল। তাতেই দুই শ্রমিকের দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান। কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’  মৃতদেহ দু’টি চুঁচুড়া সদর ইমামবাড়া হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিঙ্গুর থানার পুলিশ।

আরও পড়ুন: সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে প্রাণ গেল ৫ শ্রমিকের, গুরুতর অসুস্থ ১

গত তিন বছরে হাত দিয়ে মূল-মূত্র পরিষ্কার করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়নি বলে গত বছর সংসদে জানিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। ২০১৯থেকে ২০২২- এর মধ্যে মোট ২৩৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। কেন্দ্র বলেছিল হাত দিয়ে নোংরা পরিষ্কার করতে গিয়ে নয়, দুর্ঘটনা জনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছিল। হাত দিয়ে মানুষের মল ও অন্যান্য নোংরা পরিষ্কার নিষিদ্ধ হয়েছে ২০১৩ সালে। কিন্তু আইনে তা যতই নিষিদ্ধ হোক না কেন, আসলে তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। আইন মোতাবেক এই আইন ভঙ্গের সাজা ২ বছর জেল। কিন্তু তাতে বদল আসেনি। কেন্দ্র যায় বলুক না কেন, আজও গোটা দেশে হাত দিয়ে নোংরা পরিষ্কার করেন বহু মানুষ। যারা এই কাজ করেন তারা অধিকাংশই দলিত কিংবা হত দরিদ্র মুসলিম। দলিতরা অনেকেই বংশ পরম্পরায় এই কাজ করেন। কিন্তু মুসলিমরা এ কাজ করেন নেহাতই পেটের টানে।

আরও পড়ুন: সিঙ্গুর নিয়ে মমতার বক্তব্য সঠিক,  দাবি ফিরহাদের

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সেপটিক ট্যাঙ্কে কাজে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু সিঙ্গুরে

আপডেট : ৫ অগাস্ট ২০২৩, শনিবার

নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলি: দিন কয়েক আগে বীরভূমের খয়রাশোলে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে অকালে ঝরে গিয়েছিল তিনটি প্রাণ। বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন, বীরবল বাদ্যকর, সনাতন ধীবর ও অমৃত বাগদি। এবার যেন সেই একই ঘটনার ছায়া হুগলিতে। একটি নির্মীয়মান সেপটিক ট্যাঙ্কে কাজ করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয় শনিবার।

মৃতরা হলেন সুব্রত মান্না (৪০) ও গণেশ দাস (৪০)। ঘটনাটি ঘটেছে সিঙ্গুরে রতনপুর এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিঙ্গুরের রতনপুর এলাকায় চন্দনা মাইতিদের বাড়িতে মাস দুয়েক আগে একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়। শনিবার সকালে ট্যাঙ্কের পাটাতন খুলতে যায় রাজমিস্ত্রির কর্মী সিঙ্গুরের বাসিন্দা গণেশ দাস ও ধনেখালির বাসিন্দা সুব্রত মান্না। প্রথমে গণেশ মান্না ট্যাঙ্কের নিচে নামে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও তাঁর সাড়াশধ না মেলায়  ট্যাঙ্কে নামেন সুব্রত দাস। তারা কেউই উঠে না আসায় খবর দেওয়া হয় দমকল এবং পুলিশে। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সিঙ্গুর থানার পুলিশ। চাঁপদানি থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিনও যায়। দমকল কর্মীরা ওই ট্যাঙ্ক থেকে গণেশ এবং সুব্রতকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে। এরপর দ্রুত তাদের সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দু’জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: বীরভূমে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু তিনজনের

যে বাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্কের কাজ হচ্ছিল সেই বাড়ির সদস্য চন্দনা মাইতি জানান, ‘মাস দুয়েক আগে শৌচাগারের জন্য ওই সেপটিক ট্যাঙ্কটি তৈরি করা হয়েছিল। তারপর থেকে কাজ বন্ধ ছিল। এদিন দু’জন শ্রমিক কাজে আসে। তারা সেপটিক ট্যাঙ্কের নিচে নেমে পাটা খুলতে গিয়ে ওই বিপত্তি ঘটে। চাঁপদানি দমকল কেন্দ্রের ওসি মলয় মজুমদার জানান, ‘অনেকদিন ওই সেফটি ট্যাঙ্কের মুখ বন্ধ ছিল। সেই কারণে ট্যাঙ্কের ভিতরে মিথেন জাতীয় কোনও বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়েছিল। তাতেই দুই শ্রমিকের দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান। কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’  মৃতদেহ দু’টি চুঁচুড়া সদর ইমামবাড়া হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিঙ্গুর থানার পুলিশ।

আরও পড়ুন: সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে প্রাণ গেল ৫ শ্রমিকের, গুরুতর অসুস্থ ১

গত তিন বছরে হাত দিয়ে মূল-মূত্র পরিষ্কার করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়নি বলে গত বছর সংসদে জানিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। ২০১৯থেকে ২০২২- এর মধ্যে মোট ২৩৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। কেন্দ্র বলেছিল হাত দিয়ে নোংরা পরিষ্কার করতে গিয়ে নয়, দুর্ঘটনা জনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছিল। হাত দিয়ে মানুষের মল ও অন্যান্য নোংরা পরিষ্কার নিষিদ্ধ হয়েছে ২০১৩ সালে। কিন্তু আইনে তা যতই নিষিদ্ধ হোক না কেন, আসলে তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। আইন মোতাবেক এই আইন ভঙ্গের সাজা ২ বছর জেল। কিন্তু তাতে বদল আসেনি। কেন্দ্র যায় বলুক না কেন, আজও গোটা দেশে হাত দিয়ে নোংরা পরিষ্কার করেন বহু মানুষ। যারা এই কাজ করেন তারা অধিকাংশই দলিত কিংবা হত দরিদ্র মুসলিম। দলিতরা অনেকেই বংশ পরম্পরায় এই কাজ করেন। কিন্তু মুসলিমরা এ কাজ করেন নেহাতই পেটের টানে।

আরও পড়ুন: সিঙ্গুর নিয়ে মমতার বক্তব্য সঠিক,  দাবি ফিরহাদের