১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার
  • / 316

বিপাশা চক্রবর্তী:  নিত্য ওঠাপড়া জীবন যাত্রায় একটু মুক্তির স্বাদ পেতে প্রায় সকলেরই প্রথম পছন্দের বিষয় কাছে-পিঠে একটু কোথা থেকে ঘুরে আসা। যতই ‘দীপুদা’ বলে দিঘা-পুরী-দার্জিলিংয়ের নাম ব্যাঙ্গের খাতায় থাকুক না কেন,  আজও এই স্থানগুলির সৌন্দর্য সাধারণ মানুষের কাছে সমান আকর্ষণীয়। হাঁপিয়ে ওঠা জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এই স্থানগুলির গুরুত্ব কোনও অংশে কম নয়। খুব কম খরচেই এই স্থানগুলি থেকে সহজেই ঘুরে আসা যায়।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

পুরীর প্রধান আকর্ষণ বলতে জগন্নাথ দেবের মন্দির আর সমুদ্র সৈকত। তবে কাছে পিঠে আরও অনেক মন্দির রয়েছে। আজ সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের কথাই বলা যাক।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

বেশিরভাগ মানুষের মুখেই শোনা যায় তারা বহুবার পুরী এসেছেন এই সমুদ্রের টানেই। কাজেই যত দিন গেছে পুরীকে মানুষ নতুন রূপে খুঁজে পেয়েছে। ভোরে সূর্যোদয় থেকে বিকেলে সূর্যাস্তের সাক্ষী থেকেছেন পর্যটকেরা। ক্যামেরাবন্দী হয়েছে সেই ছবি। তার পরেও আকর্ষণ একটুও কমেনি।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি ব্যবসায়িক পরিমণ্ডল। পসরা সাজিয়ে বসেছে অসংখ্য দোকান। যেখানে প্রতিদিনই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন স্ট্রিট ফুডের দোকান রয়েছে। পুরীর সি-বিচের (puri sea beach)  ধারে মানুষের আকর্ষণ কেড়েছে মাছ ভাজার দোকানগুলি। সামুদ্রিক টাটকা মাছগুলি সারি দিয়ে দোকানে সাজানো থাকে। পর্যটকদের পছন্দমতো সেইগুলি ভেজে পরিবেশন করা হয়।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

পুরীর অন্যতম আকর্ষণ হল খাজা। সকলেই প্রায় ব্যাগভর্তি করে সেগুলিকে নিয়ে যায়। বিভিন্ন দামেই বিক্রি হয়ে থাকে এই খাজাগুলি। ঘি থেকে শুরু করে ভালো তেলে ভাজা খাজা এখানে প্রায় সর্বত্রই বিক্রি হচ্ছে।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

ওড়িশার এই অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পুরী, শুধু বাঙালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বহু দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা এখানে। তবে সমুদ্র সৈকতই হল পুরীর অন্যতম আকর্ষণ। পুরী আসার জন্য কোনও নির্দিষ্ট ঋতু নেই,  ইচ্ছে হলেই চলে আসা যায়। এই সমুদ্র সৈকত শুধু ওড়িশা কেন সারা ভারত বিখ্যাত।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

বঙ্গোপসাগরের তীরে এই সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার  ইচ্ছে যে কোনও বাঙ্গালির হৃদয়ে বিদ্যমান। সমুদ্র সৈকত কে না ভালোবাসে। কত দূর থেকে ঢেউয়ের গর্জন শোনা যায়। দুধ সাদা ফেনার মতন ঢেউগুলি তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। আবার নতুন উদ্যমে আরেকটি ঢেউ এসে পাড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সমুদ্রের তীরে দাঁড়ানো মানুষগুলোর কেউ শুধু পা ভেজাচ্ছে,  কেউ স্নান করছে,  কেউ আবার দূরে দাঁড়িয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। একবার সমুদ্রে নামলে যেন মনে হয়, আর কিছুক্ষণ থেকে যাই।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সৈকতে ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে চলছে জোর নজরদারি। বিশেষ করে জোয়ার, পূর্ণিমার ভরা কোটাল,  প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেই নজরদারি আরও বেড়ে যায়। নির্দিষ্ট সীমা পার করলেই সৈকতে বাঁশি হাতে বেজে ওঠে সতর্কবার্তা। লাইট হাউস থেকেও দৃষ্টি রাখা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হচ্ছে।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সমুদ্রের মধ্যেই দূরে দেখা যায় জেলেদের নৌকাগুলি। কোন কাকভোরে বেরিয়ে রাতে সেগুলি জালের মধ্যে মাছভর্তি করে নিয়ে বাড়ির পথে ফিরছে। তীরে সেই নৌকা ভিড়তেই উৎসুক পর্যটকেরা ঘিরে ধরছে সেই নৌকা। সৈকতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সেই মাছ। বিপদকে তুচ্ছ করে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই নিজের জীবনকে ভাসিয়ে নিত্যদিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মৎস্যজীবীরা। সেই জীবন যুদ্ধের কতটাই বা হিসেব রাখতে পারছে শহুরে জীবন।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

তবে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে পুরীতে। একটা সময় ট্রেন স্টেশনে থামতে না থামতেই পান্ডাদের ভিড় লেগে থাকত। কিন্তু এবার আর সেই রকম কিছু দেখা গেল না। সেই দৌরাত্ম্য প্রায় নেই বললেই চলে। মন্দির চত্বরে গিয়েই জানা গেল সরকারের তরফ থেকে এখন এখানে অনেক কড়াকড়ি করা হয়েছে।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

কোনও মানুষ যদি ওড়িশায় এসে পর্যটনের সব জায়গাগুলিকে বাদের তালিকাতেও রাখেন, তাহলেও পুরীর সমুদ্রসৈকতে বসেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দেওয়া কোনও একঘেঁয়ে কাজ হবে না। আর সেই আকর্ষণের কারণেই হয়তো,  ভারতের মতো দেশে ওড়িশার পুরীর সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য আলাদা জায়গা করে নিয়েছে সাধারণের মনে। কখনও সে একটি বালিকার মতোই অভিমানি, চঞ্চল, আবার কখনও উত্তাল, আবার সে শান্ত। যুগ যুগ ধরেই  সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বাদ গ্রহণ করে চলেছে পর্যটকেরা।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সমুদ্র সৈকতের নস্টালজিয়ায় যেকোনও বাঙালি হৃদয়ে আজও বেজে ওঠে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে গাওয়া,  ‘এই বালুকা বেলায় আমি লিখেছিনু, একটি সে নাম আমি লিখেছিনু, আজ সাগরের ঢেউ দিয়ে তারে যেন মুছিয়া দিলাম’।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার

বিপাশা চক্রবর্তী:  নিত্য ওঠাপড়া জীবন যাত্রায় একটু মুক্তির স্বাদ পেতে প্রায় সকলেরই প্রথম পছন্দের বিষয় কাছে-পিঠে একটু কোথা থেকে ঘুরে আসা। যতই ‘দীপুদা’ বলে দিঘা-পুরী-দার্জিলিংয়ের নাম ব্যাঙ্গের খাতায় থাকুক না কেন,  আজও এই স্থানগুলির সৌন্দর্য সাধারণ মানুষের কাছে সমান আকর্ষণীয়। হাঁপিয়ে ওঠা জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এই স্থানগুলির গুরুত্ব কোনও অংশে কম নয়। খুব কম খরচেই এই স্থানগুলি থেকে সহজেই ঘুরে আসা যায়।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

পুরীর প্রধান আকর্ষণ বলতে জগন্নাথ দেবের মন্দির আর সমুদ্র সৈকত। তবে কাছে পিঠে আরও অনেক মন্দির রয়েছে। আজ সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের কথাই বলা যাক।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

বেশিরভাগ মানুষের মুখেই শোনা যায় তারা বহুবার পুরী এসেছেন এই সমুদ্রের টানেই। কাজেই যত দিন গেছে পুরীকে মানুষ নতুন রূপে খুঁজে পেয়েছে। ভোরে সূর্যোদয় থেকে বিকেলে সূর্যাস্তের সাক্ষী থেকেছেন পর্যটকেরা। ক্যামেরাবন্দী হয়েছে সেই ছবি। তার পরেও আকর্ষণ একটুও কমেনি।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি ব্যবসায়িক পরিমণ্ডল। পসরা সাজিয়ে বসেছে অসংখ্য দোকান। যেখানে প্রতিদিনই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন স্ট্রিট ফুডের দোকান রয়েছে। পুরীর সি-বিচের (puri sea beach)  ধারে মানুষের আকর্ষণ কেড়েছে মাছ ভাজার দোকানগুলি। সামুদ্রিক টাটকা মাছগুলি সারি দিয়ে দোকানে সাজানো থাকে। পর্যটকদের পছন্দমতো সেইগুলি ভেজে পরিবেশন করা হয়।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

পুরীর অন্যতম আকর্ষণ হল খাজা। সকলেই প্রায় ব্যাগভর্তি করে সেগুলিকে নিয়ে যায়। বিভিন্ন দামেই বিক্রি হয়ে থাকে এই খাজাগুলি। ঘি থেকে শুরু করে ভালো তেলে ভাজা খাজা এখানে প্রায় সর্বত্রই বিক্রি হচ্ছে।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

ওড়িশার এই অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পুরী, শুধু বাঙালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বহু দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা এখানে। তবে সমুদ্র সৈকতই হল পুরীর অন্যতম আকর্ষণ। পুরী আসার জন্য কোনও নির্দিষ্ট ঋতু নেই,  ইচ্ছে হলেই চলে আসা যায়। এই সমুদ্র সৈকত শুধু ওড়িশা কেন সারা ভারত বিখ্যাত।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

বঙ্গোপসাগরের তীরে এই সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার  ইচ্ছে যে কোনও বাঙ্গালির হৃদয়ে বিদ্যমান। সমুদ্র সৈকত কে না ভালোবাসে। কত দূর থেকে ঢেউয়ের গর্জন শোনা যায়। দুধ সাদা ফেনার মতন ঢেউগুলি তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। আবার নতুন উদ্যমে আরেকটি ঢেউ এসে পাড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সমুদ্রের তীরে দাঁড়ানো মানুষগুলোর কেউ শুধু পা ভেজাচ্ছে,  কেউ স্নান করছে,  কেউ আবার দূরে দাঁড়িয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। একবার সমুদ্রে নামলে যেন মনে হয়, আর কিছুক্ষণ থেকে যাই।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সৈকতে ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে চলছে জোর নজরদারি। বিশেষ করে জোয়ার, পূর্ণিমার ভরা কোটাল,  প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেই নজরদারি আরও বেড়ে যায়। নির্দিষ্ট সীমা পার করলেই সৈকতে বাঁশি হাতে বেজে ওঠে সতর্কবার্তা। লাইট হাউস থেকেও দৃষ্টি রাখা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হচ্ছে।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সমুদ্রের মধ্যেই দূরে দেখা যায় জেলেদের নৌকাগুলি। কোন কাকভোরে বেরিয়ে রাতে সেগুলি জালের মধ্যে মাছভর্তি করে নিয়ে বাড়ির পথে ফিরছে। তীরে সেই নৌকা ভিড়তেই উৎসুক পর্যটকেরা ঘিরে ধরছে সেই নৌকা। সৈকতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সেই মাছ। বিপদকে তুচ্ছ করে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই নিজের জীবনকে ভাসিয়ে নিত্যদিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মৎস্যজীবীরা। সেই জীবন যুদ্ধের কতটাই বা হিসেব রাখতে পারছে শহুরে জীবন।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

তবে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে পুরীতে। একটা সময় ট্রেন স্টেশনে থামতে না থামতেই পান্ডাদের ভিড় লেগে থাকত। কিন্তু এবার আর সেই রকম কিছু দেখা গেল না। সেই দৌরাত্ম্য প্রায় নেই বললেই চলে। মন্দির চত্বরে গিয়েই জানা গেল সরকারের তরফ থেকে এখন এখানে অনেক কড়াকড়ি করা হয়েছে।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

কোনও মানুষ যদি ওড়িশায় এসে পর্যটনের সব জায়গাগুলিকে বাদের তালিকাতেও রাখেন, তাহলেও পুরীর সমুদ্রসৈকতে বসেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দেওয়া কোনও একঘেঁয়ে কাজ হবে না। আর সেই আকর্ষণের কারণেই হয়তো,  ভারতের মতো দেশে ওড়িশার পুরীর সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য আলাদা জায়গা করে নিয়েছে সাধারণের মনে। কখনও সে একটি বালিকার মতোই অভিমানি, চঞ্চল, আবার কখনও উত্তাল, আবার সে শান্ত। যুগ যুগ ধরেই  সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বাদ গ্রহণ করে চলেছে পর্যটকেরা।

পুরীর সমুদ্র সৈকতের মোহময়ী আকর্ষণ আজও অম্লান

সমুদ্র সৈকতের নস্টালজিয়ায় যেকোনও বাঙালি হৃদয়ে আজও বেজে ওঠে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে গাওয়া,  ‘এই বালুকা বেলায় আমি লিখেছিনু, একটি সে নাম আমি লিখেছিনু, আজ সাগরের ঢেউ দিয়ে তারে যেন মুছিয়া দিলাম’।