১৫০ মিলিয়ন বছর টিকে থাকা অ্যাসাসিন স্পাইডার এখন বিপন্ন

- আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, শনিবার
- / 18
বিশেষ প্রতিবদন: অস্ট্রেলিয়ার কঙ্গারু আইল্যান্ডে আবিষ্কৃত এক বিরল ও অত্যন্ত বিপন্ন প্রজাতি হলো কঙ্গারু আইল্যান্ড অ্যাসাসিন স্পাইডার।
এই মাকড়সাটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন জীব, যা প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর ধরে টিকে আছে। বিশেষজ্ঞরা এই প্রজাতিকে ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ হিসেবে অভিহিত করেন, কারণ এটি বিশ্বের একমাত্র এমন প্রাণী যার বিবর্তন প্রক্রিয়া প্রায় অপরিবর্তিত রয়ে গেছে এবং যা আমাদের প্রাকৃতিক ইতিহাসের অমূল্য নিদর্শন।
কঙ্গারু আইল্যান্ড অ্যাসাসিন স্পাইডার আকারে ছোট হলেও এটি অত্যন্ত বিষাক্ত এবং দক্ষ শিকারি। সাধারণত এটি ছোট কীটপতঙ্গ এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণী শিকার করে বেঁচে থাকে। স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে, ক্ষুদ্র প্রাণীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং খাদ্যচক্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে এই বিরল প্রজাতির বাসস্থান ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। কঙ্গারু আইল্যান্ডে ২০১৯-২০ সালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দাবানল এই মাকড়সার আবাসস্থলকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দাবানলের পাশাপাশি দীর্ঘকালীন খরা, মানুষের কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন রোগ এই প্রজাতির জন্য নতুন হুমকি সৃষ্টি করেছে। এর ফলশ্রুতিতে কঙ্গারু আইল্যান্ড অ্যাসাসিন স্পাইডার ‘ক্রিটিক্যালি এন্ডেঞ্জারড’ বা মারাত্মকভাবে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে খুব শীঘ্রই এই প্রজাতির অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে যাবে।
বিজ্ঞানীরা এই বিপন্ন মাকড়সাকে রক্ষার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি, তাদের একটি নমুনা উদ্ধার করা হয়েছে এবং বন্দি প্রজননের মাধ্যমে সংরক্ষণের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। এই প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কঙ্গারু আইল্যান্ড অ্যাসাসিন স্পাইডারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থলে পুনর্বাসনের কাজ করা হবে। একইসঙ্গে, আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও পরিবেশ সংরক্ষণে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে, যাতে দাবানল ও অন্যান্য বিপদ থেকে এই প্রজাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
পরিবেশবিদরা বলছেন, কঙ্গারু আইল্যান্ডের এই অ্যাসাসিন স্পাইডার শুধুমাত্র একটি প্রাণী নয়, এটি সেই প্রমাণ যা পৃথিবীর দীর্ঘায়ু ও পরিবেশের পরিবর্তন এবং বিবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরে। তাই, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এবং জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে এর অস্তিত্ব রক্ষা করা জরুরি। তারা দ্রুত এবং যুগোপযোগী সংরক্ষণ নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে এই প্রাচীন প্রজাতির হারিয়ে যাওয়া রোধ করা যায়।