আশরাফ হত্যাকাণ্ড পুলিশের উদাসীনতা ও সাংবিধানিক ব্যর্থতা: ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট

- আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার
- / 23
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কর্নাটকের ম্যাঙ্গালুরুর কুদুপুতে মুহাম্মদ আশরফকে গণপিটুনি দিয়ে খুনের ঘটনায় তথ্য-অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করল নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলি। আশরফ হত্যাকে ‘সংবিধানের প্রতিশ্রুতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেছে তারা। শনিবার মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি করেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে প্রশাসনের উদাসীনতা ও পক্ষপাত ছিল।
কর্নাটকের পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ, অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর জাস্টিস এবং কর্নাটকের অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস যৌথভাবে ‘লস্ট ফ্র্যাটারনিটি: এ মব লিঞ্চিং ইন ব্রড ডেলাইট’ শীর্ষক রিপোর্ট তৈরি করেছে। ম্যাঙ্গালুরু প্রেস ক্লাবে অ্যাক্টিভিস্ট, আইনজীবী এবং আশরাফের ভাই জব্বারের উপস্থিতিতে শনিবার সেই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। দলিত সংঘর্ষ সমিতির (আম্বেদকরবাদ) রাজ্য আহ্বায়ক মাভাল্লি শঙ্কর প্রান্তিক সম্প্রদায়ের সাথে জড়িত মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিবারের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি। আইনের শাসনের পতন ঘটছে। যে ভ্রাতৃত্ব একসময় আমাদের সমাজকে সংজ্ঞায়িত করেছিল, তা দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে।”
কেরলের কোট্টাক্কালের বাসিন্দা আশরাফ ওয়ানাডে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। গত ২৭ এপ্রিল ম্যাঙ্গালুরুর কুদুপুতে বাত্রা কাল্লুরথি মন্দিরের কাছে একটি স্থানীয় ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়ে হামলার শিকার হন। আশরাফ বিভিন্ন জায়গায় স্ক্র্যাপ কালেক্টর হিসেবে কাজ করছিলেন। পারাপ্পুরে একটি ব্যাঙ্ক ঋণের দায়ে তাঁদের বাড়ি অধিগ্রহণ করায় গত তিন বছর ধরে ওয়ানাডের পুলপল্লিতে ভাড়া থাকছে তাঁর পরিবার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আশরাফ কাছের একটি গ্রুপের রেখে দেওয়া এক কাপ পানি পান করার পর সহিংসতা শুরু হয়। সচিন টি নামে এক অভিযুক্ত তাঁর মুখোমুখি হন। এরপরই বিজেপি কর্পোরেটর সঙ্গীতা নায়েকের স্বামী রবীন্দ্র নায়েকের নেতৃত্বে একদল লোক ক্রিকেট ব্যাট ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে আশরাফের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
বর্ণবাদের সমসাময়িক রূপ সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অশ্বিনী কেপি বলেন, পহেলগাঁও হামলার পর থেকে মুসলিমদের অন্যায়ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। মিডিয়া দায়িত্বহীনভাবে বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়েছে, ঘৃণা উসকে দিয়েছে যা সহিংসতার দিকে পরিচালিত করে। তিনি বিদ্বেষমূলক অপরাধের মোকাবিলা করতে মিডিয়া এবং আইন প্রয়োগকারী উভয়কেই তাদের ভূমিকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর জাস্টিসের সভাপতি মৈত্রেয়ী কৃষ্ণান বলেছেন, আশরাফের হত্যাকাণ্ড কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়। এটি একটি ঘৃণ্য অপরাধ এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের লঙ্ঘন। তিনি ২০১৮ সালের তেহসিন পুনাওয়ালা রায়ের উদ্ধৃতি বলেন, যেখানে গণপিটুনির মামলায় কঠোর পুলিশি প্রোটোকল বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। পুলিশ এফআইআর দায়ের করতে দেরি করেছে এবং নির্দেশিকা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইনজীবী বিনয় শ্রীনিবাস মামলার সমালোচনা করে বলেন, পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র বিদ্যমান আইন প্রয়োগের চেয়ে ঘৃণ্য বক্তব্যের উপর নতুন আইন প্রস্তাব করতে বেশি আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। এটি লক্ষ্যবস্তু সহিংসতার মুখে একটি বিপজ্জনক শিথিলতা দেখায়। আইন-শৃঙ্খলা জোরদার করার জন্য নাগরিক সমাজের গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্রের মধ্যে পরামর্শের আহ্বান জানান বিশিষ্ট আইনজীবী। কর্ণাটকের স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশনের (এসআইও) মুহাম্মদ হায়ান পুলিশি পদক্ষেপের বিষয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং আশরাফের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও, অনুষ্ঠানে বক্তারা মামলাটি অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর, বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ এবং বিদ্যমান ভিকটিম রিলিফ স্কিমের আওতায় ভিকটিমের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার আবেদন করা আশরাফের ভাই জব্বার বলেন, “এটাই হোক শেষ গণপিটুনি।”