০৯ জুন ২০২৫, সোমবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একদশকে চরম দারিদ্র্যমুক্ত দেশের ২৭ কোটি মানুষ, রিপোর্ট বিশ্বব্যংকের

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ৮ জুন ২০২৫, রবিবার
  • / 49

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: বিগত এক দশকে দেশে গরিবি হটাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের পাঁচটি রাজ্য। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা বলছে, ২০১১-১২ থেকে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার ভারতে কমে এসেছে ২৭.১ শতাংশ থেকে ৫.৩ শতাংশে- এক কথায় এক যুগে এক ঐতিহাসিক উত্তরণ। সংখ্যার হিসেবে, প্রায় ২৬ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ চরম দারিদ্র্যের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

এই তথ্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি সমাজের পরিবর্তনের আখ্যান, যা অর্থনৈতিক নীতির সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন, প্রযুক্তিনির্ভর শাসনব্যবস্থা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সমবেত সাফল্য।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ মূল্যায়নে দেখা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা (দৈনিক ৩.০০ ডলার, ২০২১ সালের ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে) অনুযায়ী, ভারতে চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ২০১১-১২ সালে ছিল ৩৪ কোটি ৪৪ লক্ষ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৫২ লক্ষে।

একইভাবে, আগের দারিদ্র্যসীমা ২.১৫ ডলার দৈনিক ব্যয়ের ভিত্তিতে (২০১৭ সালের দামে), ভারতের দারিদ্র্যহার কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.২ শতাংশ থেকে ২.৩ শতাংশে। এই সীমার নিচে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ৩ কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষ, যেখানে ২০১১ সালে সেই সংখ্যা ছিল ২০ কোটি ৫৯ লক্ষ।

এই রূপান্তরের কেন্দ্রে রয়েছে ভারতের পাঁচ বৃহত্তম রাজ্য- উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রদেশ। ২০১১-১২ সালে দেশের চরম দরিদ্র জনগণের প্রায় ৬৫ শতাংশ এই পাঁচ রাজ্যে বাস করতেন। বিশ্বব্যাংকের তথ্যে উঠে এসেছে, ২০২২-২৩ সালের মধ্যে দেশজুড়ে যে চরম দারিদ্র্য কমেছে, তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অবদান এসেছে এই পাঁচ রাজ্য থেকেই।

বিশ্লেষণ বলছে, গ্রামাঞ্চলে চরম দারিদ্র্য ১৮.৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২.৮ শতাংশে, আর শহরাঞ্চলে তা ১০.৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১.১ শতাংশে। দারিদ্র্যের পরিমাপে আজ কেবল উপার্জন নয়, বিবেচনায় আসে শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, পরিষেবা, জীবিকাসম্পর্কিত সুযোগ-সুবিধা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকেও(এমআইপি) অর্জন করেছে অভূতপূর্ব সাফল্য।

২০০৫-০৬ সালে এমআইপি ছিল ৫৩.৮ শতাংশ। ২০১৯-২১ সময়কালে তা কমে আসে ১৬.৪ শতাংশে এবং ২০২২-২৩ সালের মধ্যে আরও কমে দাঁড়ায় ১৫.৫ শতাংশে। এর মানে দাঁড়ায়, মাত্র এক প্রজন্মের মধ্যেই, প্রতি দুইজন দরিদ্রের একজন এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসেছে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

একদশকে চরম দারিদ্র্যমুক্ত দেশের ২৭ কোটি মানুষ, রিপোর্ট বিশ্বব্যংকের

আপডেট : ৮ জুন ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: বিগত এক দশকে দেশে গরিবি হটাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের পাঁচটি রাজ্য। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা বলছে, ২০১১-১২ থেকে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার ভারতে কমে এসেছে ২৭.১ শতাংশ থেকে ৫.৩ শতাংশে- এক কথায় এক যুগে এক ঐতিহাসিক উত্তরণ। সংখ্যার হিসেবে, প্রায় ২৬ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ চরম দারিদ্র্যের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

এই তথ্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি সমাজের পরিবর্তনের আখ্যান, যা অর্থনৈতিক নীতির সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন, প্রযুক্তিনির্ভর শাসনব্যবস্থা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সমবেত সাফল্য।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ মূল্যায়নে দেখা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা (দৈনিক ৩.০০ ডলার, ২০২১ সালের ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে) অনুযায়ী, ভারতে চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ২০১১-১২ সালে ছিল ৩৪ কোটি ৪৪ লক্ষ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৫২ লক্ষে।

একইভাবে, আগের দারিদ্র্যসীমা ২.১৫ ডলার দৈনিক ব্যয়ের ভিত্তিতে (২০১৭ সালের দামে), ভারতের দারিদ্র্যহার কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.২ শতাংশ থেকে ২.৩ শতাংশে। এই সীমার নিচে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ৩ কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষ, যেখানে ২০১১ সালে সেই সংখ্যা ছিল ২০ কোটি ৫৯ লক্ষ।

এই রূপান্তরের কেন্দ্রে রয়েছে ভারতের পাঁচ বৃহত্তম রাজ্য- উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রদেশ। ২০১১-১২ সালে দেশের চরম দরিদ্র জনগণের প্রায় ৬৫ শতাংশ এই পাঁচ রাজ্যে বাস করতেন। বিশ্বব্যাংকের তথ্যে উঠে এসেছে, ২০২২-২৩ সালের মধ্যে দেশজুড়ে যে চরম দারিদ্র্য কমেছে, তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অবদান এসেছে এই পাঁচ রাজ্য থেকেই।

বিশ্লেষণ বলছে, গ্রামাঞ্চলে চরম দারিদ্র্য ১৮.৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২.৮ শতাংশে, আর শহরাঞ্চলে তা ১০.৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১.১ শতাংশে। দারিদ্র্যের পরিমাপে আজ কেবল উপার্জন নয়, বিবেচনায় আসে শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, পরিষেবা, জীবিকাসম্পর্কিত সুযোগ-সুবিধা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকেও(এমআইপি) অর্জন করেছে অভূতপূর্ব সাফল্য।

২০০৫-০৬ সালে এমআইপি ছিল ৫৩.৮ শতাংশ। ২০১৯-২১ সময়কালে তা কমে আসে ১৬.৪ শতাংশে এবং ২০২২-২৩ সালের মধ্যে আরও কমে দাঁড়ায় ১৫.৫ শতাংশে। এর মানে দাঁড়ায়, মাত্র এক প্রজন্মের মধ্যেই, প্রতি দুইজন দরিদ্রের একজন এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসেছে।