০৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ত্রাণ বিতরণকালে ইসরাইলের হামলা, নিহত ৩১

সুস্মিতা
  • আপডেট : ১ জুন ২০২৫, রবিবার
  • / 64

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: : গাজা উপত্যকায় ত্রাণ নিতে আসা অসহায় ফিলিস্তিনিদের উপরে ফের গুলি চালাল ইসরাইলি বাহিনী। রবিবার ভোররাতে রাফা শহরের একটি বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে এই হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন এবং ১৭৫ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় হাসপাতাল এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলি নিশ্চিত করেছে।

এই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন , সেটি ইসরাইলের প্রত্যক্ষ মদতপুষ্ট একটি সংস্থা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সকাল ৩টা নাগাদ হাজার হাজার মানুষ ওই কেন্দ্রের দিকে এগোচ্ছিলেন খাবারের আশায়। ঠিক সেই সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে আতঙ্ক, মৃত্যু আর চিৎকারে ভরে যায়।

৪০ বছর বয়সি ইব্রাহিম আবু সৌদ বলেন, “আমরা তখন সেনাবাহিনী থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে। হঠাৎ চারিদিক থেকে গুলি আসতে থাকে। একজন যুবককে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখি। কিছু করতেই পারিনি।” একই অভিজ্ঞতা জানান মোহাম্মদ আবু টিয়ামা, যিনি তাঁর কাজিন এবং অপর এক মহিলাকে গুলিতে মারা যেতে দেখেছেন।

ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই যে, রেড ক্রস পরিচালিত ফিল্ড হাসপাতাল এবং নাসের হাসপাতাল একসঙ্গে আহতদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থল থেকে ২৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে এবং আরও ২৩ জনকে চিকিৎসা দিচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ৩১ ছাড়িয়েছে।

তবে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স দাবি করেছে, তারা “এই ঘটনায় কেউ আহত হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয়” এবং তদন্ত চলছে। GHF দাবি করেছে, “রবিবার সকালে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ত্রাণ বিতরণ সম্পন্ন করেছে।”

উল্লেখ্য, গত ২৮ মে-তেও একই জায়গায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ৩ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, নতুন ত্রাণ ব্যবস্থাটি ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন বলে তাতে স্বাধীন পর্যবেক্ষণের সুযোগ নেই এবং খাদ্যকেও একধরনের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রসংঘের মতে, গাজার ২.৩ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে অর্ধকোটিরও বেশি মানুষ বর্তমানে চরম খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে। প্রায় ৭১ হাজার শিশুর অবস্থা চরম অপুষ্টিতে, যার মধ্যে ১৪ হাজারের বেশি শিশুর জীবন ঝুঁকিতে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। যদিও হামাস এক হোস্টেজ বিনিময় চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে বলে দাবি করেছে, তবে মার্কিন মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফ বলেন, “হামাসের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।” ইসরাইলও জানিয়েছে, তারা নতুন প্রস্তাবে রাজি থাকলেও হামাস ‘অবাঞ্ছিত সংশোধন’ এনেছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ এন্ড ওয়ার্কস এজেন্সি-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এই নতুন বিতরণ ব্যবস্থাকে “সম্পূর্ণ অর্থহীন ও বিভ্রান্তিকর” বলে উল্লেখ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মানবতাবাদী শক্তিগুলোর আহ্বান — যুদ্ধ থামান, মানুষকে বাঁচতে দিন। গাজায় আজ খাদ্যের জন্য জীবন দিতে হচ্ছে — এ লজ্জা সভ্যতার।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গাজায় ত্রাণ বিতরণকালে ইসরাইলের হামলা, নিহত ৩১

আপডেট : ১ জুন ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: : গাজা উপত্যকায় ত্রাণ নিতে আসা অসহায় ফিলিস্তিনিদের উপরে ফের গুলি চালাল ইসরাইলি বাহিনী। রবিবার ভোররাতে রাফা শহরের একটি বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে এই হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন এবং ১৭৫ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় হাসপাতাল এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলি নিশ্চিত করেছে।

এই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন , সেটি ইসরাইলের প্রত্যক্ষ মদতপুষ্ট একটি সংস্থা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সকাল ৩টা নাগাদ হাজার হাজার মানুষ ওই কেন্দ্রের দিকে এগোচ্ছিলেন খাবারের আশায়। ঠিক সেই সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে আতঙ্ক, মৃত্যু আর চিৎকারে ভরে যায়।

৪০ বছর বয়সি ইব্রাহিম আবু সৌদ বলেন, “আমরা তখন সেনাবাহিনী থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে। হঠাৎ চারিদিক থেকে গুলি আসতে থাকে। একজন যুবককে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখি। কিছু করতেই পারিনি।” একই অভিজ্ঞতা জানান মোহাম্মদ আবু টিয়ামা, যিনি তাঁর কাজিন এবং অপর এক মহিলাকে গুলিতে মারা যেতে দেখেছেন।

ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই যে, রেড ক্রস পরিচালিত ফিল্ড হাসপাতাল এবং নাসের হাসপাতাল একসঙ্গে আহতদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থল থেকে ২৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে এবং আরও ২৩ জনকে চিকিৎসা দিচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ৩১ ছাড়িয়েছে।

তবে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স দাবি করেছে, তারা “এই ঘটনায় কেউ আহত হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয়” এবং তদন্ত চলছে। GHF দাবি করেছে, “রবিবার সকালে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ত্রাণ বিতরণ সম্পন্ন করেছে।”

উল্লেখ্য, গত ২৮ মে-তেও একই জায়গায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ৩ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, নতুন ত্রাণ ব্যবস্থাটি ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন বলে তাতে স্বাধীন পর্যবেক্ষণের সুযোগ নেই এবং খাদ্যকেও একধরনের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রসংঘের মতে, গাজার ২.৩ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে অর্ধকোটিরও বেশি মানুষ বর্তমানে চরম খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে। প্রায় ৭১ হাজার শিশুর অবস্থা চরম অপুষ্টিতে, যার মধ্যে ১৪ হাজারের বেশি শিশুর জীবন ঝুঁকিতে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। যদিও হামাস এক হোস্টেজ বিনিময় চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে বলে দাবি করেছে, তবে মার্কিন মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফ বলেন, “হামাসের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।” ইসরাইলও জানিয়েছে, তারা নতুন প্রস্তাবে রাজি থাকলেও হামাস ‘অবাঞ্ছিত সংশোধন’ এনেছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ এন্ড ওয়ার্কস এজেন্সি-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এই নতুন বিতরণ ব্যবস্থাকে “সম্পূর্ণ অর্থহীন ও বিভ্রান্তিকর” বলে উল্লেখ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মানবতাবাদী শক্তিগুলোর আহ্বান — যুদ্ধ থামান, মানুষকে বাঁচতে দিন। গাজায় আজ খাদ্যের জন্য জীবন দিতে হচ্ছে — এ লজ্জা সভ্যতার।