১৫ জুন ২০২৫, রবিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাশে আমেরিকা, ইসরাইলের ৭০০০ খুন মাফ!

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 67

আহমদ হাসান ইমরান:  ফিলিস্তিনের ভূমি জবরদখল করে পশ্চিমা খ্রিস্টানদের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ইসরাইল যা ইচ্ছা তাই করে চলেছে। পৃথিবীতে যত গণহত্যা হয়েছে, তার অনেকগুলি করেছে ইসরাইল। প্রকৃতপক্ষে জেনোসাইডের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি আরব মুসলিমদের উচ্ছেদ করে জন্ম নিয়েছে ইসরাইল। আর বর্তমানেও টিভির পর্দায় সারাবিশ্ব দেখে চলেছে কীভাবে তারা উচ্ছেদকৃত ফিলিস্তিনিদের কোনওভাবে বাঁচার ঠাঁই অবরুদ্ধ গাজায় একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগেও তারা কয়েকবার একই কায়দায় গাজা আক্রমণ করে হাজার হাজার বহু শিশু-নারী-বৃদ্ধকে হত্যা করেছে। তবুও হার মানেনি হামাস। তারা অবরুদ্ধ গাজার শরণার্থী শিবিরে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি চালাচ্ছিল। সেগুলিও বোমা ও রকেট হামলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে দিয়েছে ইসরাইলের নৃশংস সেনারা।

১২ ঘণ্টা আগের খবর, গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা ৬১০০ পেরিয়ে গেছে। আহতের সংখ্যা প্রায় ১৭০০০। তারাও প্রায় বিনা চিকিৎসায় পড়ে রয়েছে। আর অবিরাম বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে ইসরাইল, সঙ্গে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গাজার ছোট্ট জনপদটিতে ইসরাইল ১২ হাজার টনেরও বেশি বোমা বর্ষণ করেছে।
অনেকে বলছেন, গাজা পরিণত হয়েছে ‘লিটল হিরোশিমায়’। যেখানে আণবিক বোমা পরীক্ষা করে লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছিল আমেরিকা। এরা ছিল গাজার মতোই সাধারণ বেসামরিক নাগরিক।

অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে আর একটি বড় খবর হচ্ছে, বিশ্ব মুসলিমের তৃতীয় তীর্থস্থান এবং প্রথম কিবলা জেরুসালেমের আল-আক্সা মসজিদে ইসরাইল মুসলিম প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এই আল-আক্সা মসজিদে নামায বন্ধ রয়েছে, এটা খুবই বিরল। মুসলিমদের জীবন ও সম্পত্তির অধিকার, মানুষের মতো বাঁচার অধিকার পশ্চিমা সহায়তায় ইসরাইল আগেই কেড়ে নিয়েছে। এবার তারা ছিনিয়ে নিচ্ছে মুসলিমদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অধিকার।
আর এই জেনোসাইড ও হলোকাস্টকে চোখের সামনে দেখেও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সমর্থন দিচ্ছে তাদের বশংবদ মিডিয়া। আর ইসরাইলের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র পাঠানো হচ্ছে।

ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ি সঠিকভাবে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের মুসলিম গণহত্যায় সমান অংশীদার। তাদের অস্ত্র, অর্থ এবং মিডিয়া সমর্থনেই ইসরাইলের এত সক্রিয়তা, এত লাফালাফি।

খবর হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বেশকিছু প্রশিক্ষিত কমান্ডো ইসরাইলে পাঠিয়েছে। কিন্তু এত করেও ইসরাইলকে রক্ষা করা যাবে কি? কারণ, অবরুদ্ধ গাজা থেকে হামাসের মুজাহিদরা যেভাবে গড়ে তোলা দেওয়াল ভেদ করে, বহু চর্চিত আয়রন ডোমের বারোটা বাজিয়ে ইহুদি সেনা নিবাসে হামলা করেছে, অভ্যন্তরে ঢুকে পণবন্দি করেছে, তাতে বোঝা যায়, যদি হামাসের মুজাহিদদের হাতে তেমন অস্ত্রশস্ত্র ও মিসাইল থাকত, ইসরাইল কোনওভাবেই পাত্তা পেত না। ছোট একটা হামাস গোষ্ঠীকে রুখতেই তাদের ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। আর লেবানন সীমান্তে হেজবুল্লাহকে তো তারা আজরাইলের মতো ভয় করে।

ইসরাইলের এই শিশু-নারী হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন দেওয়ার জন্য এবং মারখাওয়া ইসরাইলিদের হিম্মত আফজাই করার জন্য পশ্চিমা নেতারা একের পর এক ইসরাইলে ছুটে আসছেন। অবশ্য একটু ভয়ে ভয়ে! কী জানি কে বলতে পারে, হামাসের রকেট হঠাৎ করে তাঁদের মাথার উপর এসে পড়বে না!

তবুও বুক ফুলিয়ে এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন, ইউকে-র ঋষি সুনক, ফ্রান্সের ম্যাক্রোঁ ভারতে জনপ্রিয় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি প্রমুখ। ইহুদিদের নিহত হওয়ার ব্যথায় তাঁদের বুক ফেটে যাচ্ছে। যেকোনও মৃত্যুই দুঃখের, তা সে যারই হোক। কিন্তু ৬০০০ ফিলিস্তিনির হত্যায় পশ্চিমাদের বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই। যদিও এদের মধ্যে শিশু এবং নারীদের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ। বোঝা যায়, মুসলিমদের মৃত্যুতে এদের বি¨ুমাত্র বেদনা নেই। হামাস মুজাহিদরা ইসরাইলে ঢুকে যাদের হত্যা করেছিল, তাদের মধ্যে ৩০৬ জন হচ্ছে ইসরাইলি সেনা। বাকিদের অনেকেই সেনার ট্রেনিংপ্রাপ্ত ইসরাইলের রিজার্ভ বাহিনী।

এই অসম লড়াই ও জেনোসাইড হয়তো বন্ধ হত। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। তারা বেশ কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো প্রয়োগ করেছে। ভাবখানা, চলুক যুদ্ধ। আমরা দেখি আমাদের সরবরাহকৃত মারণাস্ত্রগুলি কীভাবে ইসরাইল ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর প্রয়োগ করে? তাই চলছে মানবতার মৃত্যু, সমস্ত অধিকারের বিপর্যয়।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পাশে আমেরিকা, ইসরাইলের ৭০০০ খুন মাফ!

আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার

আহমদ হাসান ইমরান:  ফিলিস্তিনের ভূমি জবরদখল করে পশ্চিমা খ্রিস্টানদের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ইসরাইল যা ইচ্ছা তাই করে চলেছে। পৃথিবীতে যত গণহত্যা হয়েছে, তার অনেকগুলি করেছে ইসরাইল। প্রকৃতপক্ষে জেনোসাইডের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি আরব মুসলিমদের উচ্ছেদ করে জন্ম নিয়েছে ইসরাইল। আর বর্তমানেও টিভির পর্দায় সারাবিশ্ব দেখে চলেছে কীভাবে তারা উচ্ছেদকৃত ফিলিস্তিনিদের কোনওভাবে বাঁচার ঠাঁই অবরুদ্ধ গাজায় একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগেও তারা কয়েকবার একই কায়দায় গাজা আক্রমণ করে হাজার হাজার বহু শিশু-নারী-বৃদ্ধকে হত্যা করেছে। তবুও হার মানেনি হামাস। তারা অবরুদ্ধ গাজার শরণার্থী শিবিরে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি চালাচ্ছিল। সেগুলিও বোমা ও রকেট হামলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে দিয়েছে ইসরাইলের নৃশংস সেনারা।

১২ ঘণ্টা আগের খবর, গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা ৬১০০ পেরিয়ে গেছে। আহতের সংখ্যা প্রায় ১৭০০০। তারাও প্রায় বিনা চিকিৎসায় পড়ে রয়েছে। আর অবিরাম বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে ইসরাইল, সঙ্গে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গাজার ছোট্ট জনপদটিতে ইসরাইল ১২ হাজার টনেরও বেশি বোমা বর্ষণ করেছে।
অনেকে বলছেন, গাজা পরিণত হয়েছে ‘লিটল হিরোশিমায়’। যেখানে আণবিক বোমা পরীক্ষা করে লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছিল আমেরিকা। এরা ছিল গাজার মতোই সাধারণ বেসামরিক নাগরিক।

অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে আর একটি বড় খবর হচ্ছে, বিশ্ব মুসলিমের তৃতীয় তীর্থস্থান এবং প্রথম কিবলা জেরুসালেমের আল-আক্সা মসজিদে ইসরাইল মুসলিম প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এই আল-আক্সা মসজিদে নামায বন্ধ রয়েছে, এটা খুবই বিরল। মুসলিমদের জীবন ও সম্পত্তির অধিকার, মানুষের মতো বাঁচার অধিকার পশ্চিমা সহায়তায় ইসরাইল আগেই কেড়ে নিয়েছে। এবার তারা ছিনিয়ে নিচ্ছে মুসলিমদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অধিকার।
আর এই জেনোসাইড ও হলোকাস্টকে চোখের সামনে দেখেও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সমর্থন দিচ্ছে তাদের বশংবদ মিডিয়া। আর ইসরাইলের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র পাঠানো হচ্ছে।

ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ি সঠিকভাবে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের মুসলিম গণহত্যায় সমান অংশীদার। তাদের অস্ত্র, অর্থ এবং মিডিয়া সমর্থনেই ইসরাইলের এত সক্রিয়তা, এত লাফালাফি।

খবর হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বেশকিছু প্রশিক্ষিত কমান্ডো ইসরাইলে পাঠিয়েছে। কিন্তু এত করেও ইসরাইলকে রক্ষা করা যাবে কি? কারণ, অবরুদ্ধ গাজা থেকে হামাসের মুজাহিদরা যেভাবে গড়ে তোলা দেওয়াল ভেদ করে, বহু চর্চিত আয়রন ডোমের বারোটা বাজিয়ে ইহুদি সেনা নিবাসে হামলা করেছে, অভ্যন্তরে ঢুকে পণবন্দি করেছে, তাতে বোঝা যায়, যদি হামাসের মুজাহিদদের হাতে তেমন অস্ত্রশস্ত্র ও মিসাইল থাকত, ইসরাইল কোনওভাবেই পাত্তা পেত না। ছোট একটা হামাস গোষ্ঠীকে রুখতেই তাদের ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। আর লেবানন সীমান্তে হেজবুল্লাহকে তো তারা আজরাইলের মতো ভয় করে।

ইসরাইলের এই শিশু-নারী হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন দেওয়ার জন্য এবং মারখাওয়া ইসরাইলিদের হিম্মত আফজাই করার জন্য পশ্চিমা নেতারা একের পর এক ইসরাইলে ছুটে আসছেন। অবশ্য একটু ভয়ে ভয়ে! কী জানি কে বলতে পারে, হামাসের রকেট হঠাৎ করে তাঁদের মাথার উপর এসে পড়বে না!

তবুও বুক ফুলিয়ে এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন, ইউকে-র ঋষি সুনক, ফ্রান্সের ম্যাক্রোঁ ভারতে জনপ্রিয় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি প্রমুখ। ইহুদিদের নিহত হওয়ার ব্যথায় তাঁদের বুক ফেটে যাচ্ছে। যেকোনও মৃত্যুই দুঃখের, তা সে যারই হোক। কিন্তু ৬০০০ ফিলিস্তিনির হত্যায় পশ্চিমাদের বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই। যদিও এদের মধ্যে শিশু এবং নারীদের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ। বোঝা যায়, মুসলিমদের মৃত্যুতে এদের বি¨ুমাত্র বেদনা নেই। হামাস মুজাহিদরা ইসরাইলে ঢুকে যাদের হত্যা করেছিল, তাদের মধ্যে ৩০৬ জন হচ্ছে ইসরাইলি সেনা। বাকিদের অনেকেই সেনার ট্রেনিংপ্রাপ্ত ইসরাইলের রিজার্ভ বাহিনী।

এই অসম লড়াই ও জেনোসাইড হয়তো বন্ধ হত। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। তারা বেশ কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো প্রয়োগ করেছে। ভাবখানা, চলুক যুদ্ধ। আমরা দেখি আমাদের সরবরাহকৃত মারণাস্ত্রগুলি কীভাবে ইসরাইল ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর প্রয়োগ করে? তাই চলছে মানবতার মৃত্যু, সমস্ত অধিকারের বিপর্যয়।