মণিপুরের বীভৎসতা তুলে ধরলেন ধর্ষিতা ১৯ বছরের আদিবাসী নির্যাতিতা

- আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৩, বুধবার
- / 36
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : মণিপুরের বীভৎসতা, কদর্য চেহারা, আর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা উঠে এল এক আদিবাসী ধর্ষিতা নির্যাতিতার বয়ানে। ১৯ বছরের নির্যাতিতার কথায়, মে মাসের প্রথম দিকে ইম্ফলে সংহিসতার ঘটনা ক্রমশ দানা বাঁধতে শুরু করছে। তখন তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর তাকে তিনজনে মিলে ধর্ষণ করে। নির্যাতিতার ভয়ার্ত কন্ঠের বক্তব্য, মেয়েরা এই সময় ওদের অন্যতম টার্গেট। আমাকে চারজন মিলে একটা সাদা বোলেরোর মধ্যে তুলল। গাড়ির মধ্যেও আমাকে রেহাই দিল না। চালক ছাড়া বাকি তিনজন মিলে যৌন নির্যাতন চালালো। ওরা প্রথমে আমাকে একটি পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়। তিনজন মিলে ধর্ষণ করে। মাথায় বন্দুকের বাট দিয়ে মারা হয়। এর পর গত ১৫ মে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে আমাকে তুলে দেওয়া হল।
আমার সঙ্গে যতটা খারাপ করা যায় সব কিছুই ওরা করেছে। কিছু খেতে দেওয়া তো দূরের কথা, একফোঁটা পানিও দেওয়া হয়নি মুখে। চোখ, হাত পা বেঁধে ফেলে রাখা হল। সারারাত এইভাবেই রাখল। সকালে আমি শৌচাগারে যাব বলি। তখন আমাকে কিছুক্ষণের জন্য রেহাই দেয়। চোখ বাধা ছিল। এদের মধ্যে একজন একটু দয়ালু! তার দয়াতেই চোখের কাপড় সরিয়ে আশেপাশের অবস্থা একটু বোঝার চেষ্টা করি। এর পরেই আমি পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে পালানোর সিন্ধান্ত নিই। একটা এটিএমে যাই। এর পর একটি অটো রিকশায় উঠে পিছনে রাখা সবজির মধ্যে আশ্রয় নিই। কোনওরকমে কাংপোকপিতে পৌঁছতে পারি। গত ২১ জুলাই কাংপোকপিতে থানায় অভিযোগ দায়ের করি। সেখান থেকে নাগাল্যান্ডের রাজধানি কোহিমাতে একটি হাসপাতালে আমাকে রেফার করা হয়। ঘটনার সময় থেকে প্রায় দুমাস পরে ইম্ফলের পোরোম্পট থানায়ও গণধর্ষণ, অপরাধমূলক হুমকি এবং হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি অঞ্চলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে
পুলিশের জবাব অভিযুক্তরা এখনও গ্রেফতার হয়নি, খোঁজে তল্লাশি চলছে। অভিযোগের সত্যতা, প্রমাণের অভাব তদন্তের গতিপ্রকৃতিকে শ্লথ করছে।
উল্লেখ্য, বিগত প্রায় দুমাস ধরে অগ্নিগর্ভ মণিপুর। কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে জাতি বিদ্বেষের ঘটনায় প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু পাহাড় ঘেরা মণিপুরের ভয়ঙ্কর চেহারা তুলে ধরেছে। তার মধ্যে সব থেকে বর্বরোচিত ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে কুকি সম্প্রদায়ের দুই নারীকে বিবস্ত্র করে রাস্তা দিয়ে হাঁটানোর পর তাদের গণধর্ষণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেই নির্মমতা।
মণিপুর ইস্যুতে উত্তাল হয়েছে সংসদ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতি দাবি করে ইন্ডিয়া জোটের শরিকি দলগুলি সোচ্চার হয়েছে। কিন্ত আশ্চর্যজনকভাবে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের ঘটনাকে ‘সারাদেশের কাছে লজ্জা’ বলে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এই অবস্থায় ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামানো হয়েছে কেন্দ্রের অন্যান্য মন্ত্রীদের।