১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পানীয় জলে ‘বিপজ্জনক টক্সিন ননাইলফেনল’! বাড়ছে দূষণের মাত্রা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৯ জুলাই ২০২২, শনিবার
  • / 28

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  জলের অপর নাম জীবন। ছোটবেলা থেকে পাঠ্যবইতে আমরা সেই কথাই পড়ে আসছি। অথচ যে পানীয় জল আমরা প্রতিদিন পান করছি, তার মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত রাসায়নিক। পানীয় জলে ক্রমশই দূষণের মাত্রা বাড়ছে। সেই রাসায়নিক যাচ্ছে আমাদের শরীরের মধ্যে।

গোটা দেশের পানীয় জলে উচ্চ মাত্রায় বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গেছে বলে একটি সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে সেই তথ্য। দেশব্যাপী গবেষণায় পানীয় জলে বিপজ্জনক টক্সিন ননাইলফেনল বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে। মূলত দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেগুলি পরীক্ষার জন্য দিল্লির শ্রীরাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখান থেকেই এই তথ্য উঠে আসে।

আরও পড়ুন: কলকাতায় এবার দুয়ারে পানীয় জল, ১০ হাজার কিমি নয়া পাইপ নেটওয়ার্ক

ভাতিন্ডা বোরওয়েল থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্রায় হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষিত নমুনায় উল্লেখযোগ্য আকারে বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে। যা চিন্তা বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: আগামী অতিমারি আরও ভয়ঙ্কর হবে,  সতর্কবার্তা হু প্রধানের

ননাইলফেনল একটি বিপদজনক রাসায়নিক। রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) দ্বারা এটিকে একটি ভয়াবহ রাসায়নিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন আমরা যে পানীয় জল পান করছি, তার সঙ্গে দূষিত রাসায়নিক শরীরের মধ্যে যাচ্ছে। ফলে পরিণতি শারীরিক অবনতি, নানা ধরনের রোগ। ননাইলফেনল (এনপিইএস) ডিটারজেন্ট, কাপড় কাচার সাবানের মধ্যে পাওয়া যায়। ভারতে বিক্রি হওয়া ডিটারজেন্টে ননাইলফেনল ১১.৯২ শতাংশ পাওয়া গেছে।
ননাইলফেনল বা এনপিইএস এই রাসায়নিক কলকারখানায় নিঃসৃত বর্জ্য জল। নদ-নদী, খাল বিলের জলের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানেও ননাইলফেনল রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন: আরও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে মোকা, ৩ জেলায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা

ডিটারজেন্টগুলিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করার জন্য ননাইলফেনল ব্যবহার সীমিত করা বা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য দেশে এখনও কোনও নিয়ম জারি হয়নি।

তবে পানীয় জলে ননাইলফেনলের উপস্থিতি মানব শরীরের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। এর জন্য প্রয়োজন আরও বিস্তর গবেষণার।

ননাইলফেনলের উপস্থিতি কি জলের মধ্যে থাকঞ প্রয়োজন, আর জলে থাকলেও সেটি কত পরিমাণে জলে থাকা প্রয়োজন সেটি গবেষণা করে দেখতে হবে।

টক্সিন লিঙ্ক-এর অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর সতীশ সিনহা জানিয়েছেন, এই গবেষণার ফলে আমরা বিশুদ্ধ রাসায়নিক মুক্ত পানীয় জল পাব, যা মানব শরীরের জন্য প্রয়োজন।

ননাইলফেনল এথক্সিলেটেস বা এনপিই নামের পদার্থ৷ এই পদার্থ দিয়ে কাপড়চোপড় রং করার পর ধোয়া হয়৷ এটি হরমোন সিস্টেমের মধ্যে অসামঞ্জস্য করে দিতে পারে৷ জলাশয়ের জীবজন্তুর জন্য এই পদার্থ অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ কিন্তু ওয়াশিং মেশিনে কাপড়চোপড় ধোয়া হলে ময়লা জলের সঙ্গে এই বিষাক্ত পদার্থও নর্দমায় ঢুকে পড়ে।
ননাইলফেনলকে নলবাহিত জল ও বোরওয়েলের জলের মধ্যে পাওয়া গেছে। ভাতিন্দায় বোরওয়েলে (৮০.৫পিপিবি) সর্বোচ্চ পরিমাণে, যেখানে দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থে (২৯.১ পিপিবি) ননাইলফেনল অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে পাওয়া গেছে। গবেষণায় মোট পানীয় জলের নমুনায় ননাইলফেনল পাওয়া গেছে ৫৮.৮৬১.৫ পিপিবি।

৬১.৫ পিপিবি গাজিয়াবাদে ও উত্তরপ্রদেশে, দক্ষিণ গোয়াতে সানকোলেতে ৫৮.৮ পিপিবি, পঞ্জাবের ভাতিন্দায় ৬১.১ পিপিবি ননাইলফেনল পাওয়া গেছে।

গ্রামের দিকে অনেক বাড়িতেই আজও টিউবওয়েলই একমাত্র ভরসা। তবে, এগুলি কিন্তু অধিকাংশই অগভীর নলকূপ।
সবচেয়ে ওপরের জলযুক্ত মাটির স্তরের জলে রোগ-জীবাণু, দূষণের সম্ভাবনা খুব বেশি। কারণ মাটির উপরকার সমস্ত দূষণ চুঁইয়ে মাটির মধ্যে ঢুকে এই জলস্তরকে দূষিত করে। তাই আজও আর অগভীর নলকূপ, বোরওয়েলের জল নিরাপদ নয়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পানীয় জলে ‘বিপজ্জনক টক্সিন ননাইলফেনল’! বাড়ছে দূষণের মাত্রা

আপডেট : ৯ জুলাই ২০২২, শনিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  জলের অপর নাম জীবন। ছোটবেলা থেকে পাঠ্যবইতে আমরা সেই কথাই পড়ে আসছি। অথচ যে পানীয় জল আমরা প্রতিদিন পান করছি, তার মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত রাসায়নিক। পানীয় জলে ক্রমশই দূষণের মাত্রা বাড়ছে। সেই রাসায়নিক যাচ্ছে আমাদের শরীরের মধ্যে।

গোটা দেশের পানীয় জলে উচ্চ মাত্রায় বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গেছে বলে একটি সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে সেই তথ্য। দেশব্যাপী গবেষণায় পানীয় জলে বিপজ্জনক টক্সিন ননাইলফেনল বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে। মূলত দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেগুলি পরীক্ষার জন্য দিল্লির শ্রীরাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখান থেকেই এই তথ্য উঠে আসে।

আরও পড়ুন: কলকাতায় এবার দুয়ারে পানীয় জল, ১০ হাজার কিমি নয়া পাইপ নেটওয়ার্ক

ভাতিন্ডা বোরওয়েল থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্রায় হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষিত নমুনায় উল্লেখযোগ্য আকারে বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে। যা চিন্তা বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: আগামী অতিমারি আরও ভয়ঙ্কর হবে,  সতর্কবার্তা হু প্রধানের

ননাইলফেনল একটি বিপদজনক রাসায়নিক। রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) দ্বারা এটিকে একটি ভয়াবহ রাসায়নিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন আমরা যে পানীয় জল পান করছি, তার সঙ্গে দূষিত রাসায়নিক শরীরের মধ্যে যাচ্ছে। ফলে পরিণতি শারীরিক অবনতি, নানা ধরনের রোগ। ননাইলফেনল (এনপিইএস) ডিটারজেন্ট, কাপড় কাচার সাবানের মধ্যে পাওয়া যায়। ভারতে বিক্রি হওয়া ডিটারজেন্টে ননাইলফেনল ১১.৯২ শতাংশ পাওয়া গেছে।
ননাইলফেনল বা এনপিইএস এই রাসায়নিক কলকারখানায় নিঃসৃত বর্জ্য জল। নদ-নদী, খাল বিলের জলের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানেও ননাইলফেনল রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন: আরও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে মোকা, ৩ জেলায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা

ডিটারজেন্টগুলিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করার জন্য ননাইলফেনল ব্যবহার সীমিত করা বা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য দেশে এখনও কোনও নিয়ম জারি হয়নি।

তবে পানীয় জলে ননাইলফেনলের উপস্থিতি মানব শরীরের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। এর জন্য প্রয়োজন আরও বিস্তর গবেষণার।

ননাইলফেনলের উপস্থিতি কি জলের মধ্যে থাকঞ প্রয়োজন, আর জলে থাকলেও সেটি কত পরিমাণে জলে থাকা প্রয়োজন সেটি গবেষণা করে দেখতে হবে।

টক্সিন লিঙ্ক-এর অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর সতীশ সিনহা জানিয়েছেন, এই গবেষণার ফলে আমরা বিশুদ্ধ রাসায়নিক মুক্ত পানীয় জল পাব, যা মানব শরীরের জন্য প্রয়োজন।

ননাইলফেনল এথক্সিলেটেস বা এনপিই নামের পদার্থ৷ এই পদার্থ দিয়ে কাপড়চোপড় রং করার পর ধোয়া হয়৷ এটি হরমোন সিস্টেমের মধ্যে অসামঞ্জস্য করে দিতে পারে৷ জলাশয়ের জীবজন্তুর জন্য এই পদার্থ অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ কিন্তু ওয়াশিং মেশিনে কাপড়চোপড় ধোয়া হলে ময়লা জলের সঙ্গে এই বিষাক্ত পদার্থও নর্দমায় ঢুকে পড়ে।
ননাইলফেনলকে নলবাহিত জল ও বোরওয়েলের জলের মধ্যে পাওয়া গেছে। ভাতিন্দায় বোরওয়েলে (৮০.৫পিপিবি) সর্বোচ্চ পরিমাণে, যেখানে দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থে (২৯.১ পিপিবি) ননাইলফেনল অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে পাওয়া গেছে। গবেষণায় মোট পানীয় জলের নমুনায় ননাইলফেনল পাওয়া গেছে ৫৮.৮৬১.৫ পিপিবি।

৬১.৫ পিপিবি গাজিয়াবাদে ও উত্তরপ্রদেশে, দক্ষিণ গোয়াতে সানকোলেতে ৫৮.৮ পিপিবি, পঞ্জাবের ভাতিন্দায় ৬১.১ পিপিবি ননাইলফেনল পাওয়া গেছে।

গ্রামের দিকে অনেক বাড়িতেই আজও টিউবওয়েলই একমাত্র ভরসা। তবে, এগুলি কিন্তু অধিকাংশই অগভীর নলকূপ।
সবচেয়ে ওপরের জলযুক্ত মাটির স্তরের জলে রোগ-জীবাণু, দূষণের সম্ভাবনা খুব বেশি। কারণ মাটির উপরকার সমস্ত দূষণ চুঁইয়ে মাটির মধ্যে ঢুকে এই জলস্তরকে দূষিত করে। তাই আজও আর অগভীর নলকূপ, বোরওয়েলের জল নিরাপদ নয়।