২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিধ্বস্ত তুরস্কে উদ্ধার কার্যে গিয়ে শিরোনামে উঠে এল রোমিও-জুলির নাম

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার
  • / 69

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশ তুরস্ক-সিরিয়া। একেকটা ধ্বংসস্তূপ সরানো হচ্ছে, আর ক্রমশই  বেড়ে চলেছে মৃতদেহের সংখ্যা। এর শেষ কোথায় কেউ জানে না। তুরস্ক-সিরিয়া জুড়ে এখন শুধুই হাহাকারের ছবি। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রিয়জনদের খুঁজে চলেছেন বহু মানুষ। তবে নিছক অলৌকিক ছাড়া বেঁচে উদ্ধার হওয়ার ঘটনা এখন প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছে উদ্ধারকর্মীরা। সেই রকমই এক ঘটনার সাক্ষী থাকল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সব কিছুই মহান আল্লাহর ইচ্ছা এমনটাই মন্তব্য করলেন উদ্ধারকারীরা।

‘অপারেশন দোস্ত’। এই নামেই ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্কের দিকে  সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। জোরকদমে দেশের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল (এনডিআরএফ) তুরস্কে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিপদের দিনে বন্ধুর মতোই দুর্গত দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে নয়াদিল্লি । আর সেই বন্ধুত্বেরই অভিযানেই ধ্বংসস্তূপের অন্ধকারে আটকে থাকা প্রাণের সন্ধান দিল ভারতের দুর্যোগ মোকাবিলা দলের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুই সারমেয় -রোমিও আর জুলি।

এই প্রসঙ্গে এনডিআরএফ-এর সদস্যরা জানিয়েছেন, রোমিও আর জুলি ছাড়া ওই ৬ বছরের খুদের সন্ধান পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওই  দুই সারমেয় গন্ধ শুঁকেই জানিয়ে দিয়েছিল কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নীচে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। তাদের দেখানো পথ দিয়েই পরে ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।

তাঁরা আরও বলেন, স্নিফার ডগ রোমিও ও জুলি এর আগেও অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে  অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছে। তবে আলাদা করে বলা হয়েছে এই ৬ বছরের শিশুর কথা। কারণ তিন দিন ধরে ধ্বংসস্তূপের তলায় আঁটকে ছিল ওই শিশু। পরিবারের সকলেই মারা গেছে। শুধুমাত্র বেঁচে ছিল  শিশুটি। রোমিও আর জুলি তার গন্ধ পায়।

উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে রোমিও এবং জুলিকে তুরস্কে পাঠানো হয়। সঙ্গে পাঠানো হয় আরও কয়েকটি সারমেয়কে। তাদের  নাম বব, রক্সি, র‍্যাম্বো এবং হানি। সব মিলিয়ে ৬ সদস্যের স্নিফার ডগের  টিম। এছাড়া সঙ্গে আরও ১৫২ জন উদ্ধারকর্মী। তারাই উদ্ধার কাজ চালায় তুরস্কে। তবে সবচেয়ে পারদর্শিতার সঙ্গে উদ্ধারের কাজ করে রোমিও এবং জুলিই।

‘ন্যাশনাল ডিজাসটার রেসপন্স ফোর্স’ ইতিমধ্যেই ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ হয়ে উঠেছে। এই মুহূর্তে  প্রায় ১৮ হাজার কর্মী রয়েছেন এতে। এর সঙ্গে রয়েছে বিরাট ডগ স্কোয়াড। সেখান প্রায় ১৪০টি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর রয়েছে। এর আগে নেপালে  ভূমিকম্পের সময়ে এই বিভাগ দারুণ ভাবে কাজ করে। শুধু তাই নয়, কলকাতায় সেতু ভেঙে পড়ার সময়েও এই ন্যাশনাল ডিজাসটার রেসপন্স ফোর্স উদ্ধারের কাজে দারুণ ভাবে সহায়তা করেছিল।

সব মিলিয়ে তুরস্কের ভূমিকম্পের পরে উদ্ধার কাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এই ন্যাশনাল ডিজাসটার রেসপন্স ফোর্স। এবং সেখানে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে রোমিও এবং জুলির ভূমিকা। আপাতত এই যুগলকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছে অনেকে।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৬ তারিখে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়া। ভূমিকম্পে আঘাত হানার পর প্রায় ১০ দিন কেটে গেছে। ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। নিহতের  সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে  আশঙ্কা করা হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে ৬ বছরের ওই খুদের বেঁচে ওঠা, নিছকই মিরাক্কেল বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিধ্বস্ত তুরস্কে উদ্ধার কার্যে গিয়ে শিরোনামে উঠে এল রোমিও-জুলির নাম

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশ তুরস্ক-সিরিয়া। একেকটা ধ্বংসস্তূপ সরানো হচ্ছে, আর ক্রমশই  বেড়ে চলেছে মৃতদেহের সংখ্যা। এর শেষ কোথায় কেউ জানে না। তুরস্ক-সিরিয়া জুড়ে এখন শুধুই হাহাকারের ছবি। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রিয়জনদের খুঁজে চলেছেন বহু মানুষ। তবে নিছক অলৌকিক ছাড়া বেঁচে উদ্ধার হওয়ার ঘটনা এখন প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছে উদ্ধারকর্মীরা। সেই রকমই এক ঘটনার সাক্ষী থাকল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সব কিছুই মহান আল্লাহর ইচ্ছা এমনটাই মন্তব্য করলেন উদ্ধারকারীরা।

‘অপারেশন দোস্ত’। এই নামেই ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্কের দিকে  সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। জোরকদমে দেশের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল (এনডিআরএফ) তুরস্কে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিপদের দিনে বন্ধুর মতোই দুর্গত দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে নয়াদিল্লি । আর সেই বন্ধুত্বেরই অভিযানেই ধ্বংসস্তূপের অন্ধকারে আটকে থাকা প্রাণের সন্ধান দিল ভারতের দুর্যোগ মোকাবিলা দলের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুই সারমেয় -রোমিও আর জুলি।

এই প্রসঙ্গে এনডিআরএফ-এর সদস্যরা জানিয়েছেন, রোমিও আর জুলি ছাড়া ওই ৬ বছরের খুদের সন্ধান পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওই  দুই সারমেয় গন্ধ শুঁকেই জানিয়ে দিয়েছিল কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নীচে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। তাদের দেখানো পথ দিয়েই পরে ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।

তাঁরা আরও বলেন, স্নিফার ডগ রোমিও ও জুলি এর আগেও অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে  অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছে। তবে আলাদা করে বলা হয়েছে এই ৬ বছরের শিশুর কথা। কারণ তিন দিন ধরে ধ্বংসস্তূপের তলায় আঁটকে ছিল ওই শিশু। পরিবারের সকলেই মারা গেছে। শুধুমাত্র বেঁচে ছিল  শিশুটি। রোমিও আর জুলি তার গন্ধ পায়।

উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে রোমিও এবং জুলিকে তুরস্কে পাঠানো হয়। সঙ্গে পাঠানো হয় আরও কয়েকটি সারমেয়কে। তাদের  নাম বব, রক্সি, র‍্যাম্বো এবং হানি। সব মিলিয়ে ৬ সদস্যের স্নিফার ডগের  টিম। এছাড়া সঙ্গে আরও ১৫২ জন উদ্ধারকর্মী। তারাই উদ্ধার কাজ চালায় তুরস্কে। তবে সবচেয়ে পারদর্শিতার সঙ্গে উদ্ধারের কাজ করে রোমিও এবং জুলিই।

‘ন্যাশনাল ডিজাসটার রেসপন্স ফোর্স’ ইতিমধ্যেই ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ হয়ে উঠেছে। এই মুহূর্তে  প্রায় ১৮ হাজার কর্মী রয়েছেন এতে। এর সঙ্গে রয়েছে বিরাট ডগ স্কোয়াড। সেখান প্রায় ১৪০টি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর রয়েছে। এর আগে নেপালে  ভূমিকম্পের সময়ে এই বিভাগ দারুণ ভাবে কাজ করে। শুধু তাই নয়, কলকাতায় সেতু ভেঙে পড়ার সময়েও এই ন্যাশনাল ডিজাসটার রেসপন্স ফোর্স উদ্ধারের কাজে দারুণ ভাবে সহায়তা করেছিল।

সব মিলিয়ে তুরস্কের ভূমিকম্পের পরে উদ্ধার কাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এই ন্যাশনাল ডিজাসটার রেসপন্স ফোর্স। এবং সেখানে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে রোমিও এবং জুলির ভূমিকা। আপাতত এই যুগলকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছে অনেকে।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৬ তারিখে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়া। ভূমিকম্পে আঘাত হানার পর প্রায় ১০ দিন কেটে গেছে। ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। নিহতের  সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে  আশঙ্কা করা হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে ৬ বছরের ওই খুদের বেঁচে ওঠা, নিছকই মিরাক্কেল বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।