অসমে তালা লাগানো হল বদরপুরের ঐতিহ্যবাহী দারুল হাদিস মাদ্রাসায়

- আপডেট : ১৩ অগাস্ট ২০২৩, রবিবার
- / 16
মেহরাজ চৌধুরী, শিলচর: রাজ্যের ৬৩০টি সরকারি মাদ্রাসা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পর ‘গর্বিত’ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কর্নাটকে ভোট প্রচারে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, অসমে আরও মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাঁর নজরে যে তিনশ কওমি বা বেসরকারি মাদ্রাসা রয়েছে সে কথাও তিনি বার কয়েক জানিয়েছেন। তারই শুরুয়াত বদরপুরের সুপ্রাচীন টাইটেল মাদ্রাসা থেকে। অবশেষে শুক্রবার সেই ঐতিহ্যবাহী বদরপুর দেওরাইল দারুল হাদিস মাদ্রাসায় তালা লাগিয়ে দিল অসম সরকার।
উল্লেখ্য, অসমে সরকারি মাদ্রাসাগুলি ইতিমধ্যে সাধারণ স্কুলে রুপান্তরিত করা হয়েছে। প্রি-সিনিয়র, সিনিয়র, টাইটেল ও আরবি কলেজ-সহ কয়েকশো মাদ্রাসা সরকারি নির্দেশে সাধারণ বিদ্যালয়ে পরিণত করা হয়েছে। এরই অঙ্গ হিসাবে বদরপুরের মাদ্রাসাকে শাহ বদরউদ্দিন হাইস্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। অসমে সরকারি মাদ্রাসা বিলুপ্তিকরণ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে ২০২১ সালে শুরু করা হয় এবং গেল বছর তা কার্যকরী করে প্রত্যেকটি মাদ্রাসাকে স্কুলে পরিণত করা হয়। এর প্রতিবাদ যদিও করা হয়েছে, কিন্তু কোনও ফল হয়নি। তবে মাদ্রাসাগুলির জমি সংক্রান্ত মামলা আদালতে বিচারাধীন।
কিন্তু বদরপুরের মাদ্রাসাকে পার্শ্ববর্তী হাইস্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত করে মূল মাদ্রাসার ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়ায় গোটা অসমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই মাদ্রাসা ১৯৩১ খ্রিস্টাধে বাংলা আসামের প্রখ্যাত পীর মুহাম্মদ ইয়াকুব হাতিম আলী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মশহুর মুহাদ্দিস মুশাহিদ বায়মপুরি এই মাদ্রাসার প্রথম শায়খুল হাদিস ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতীয় উপমহাদেশের ওলিকুল শিরোমণি মাওলানা শায়খুল হাদিস মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীর সুযোগ্য শিষ্য মাওলানা আধুল জলিল চৌধুরী মাদ্রাসার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে মাদ্রাসা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হয়ে মহীরু ধারণ করে। প্রতি বছর এই মাদ্রাসা থেকে দেড় থেকে দু’শ ছাত্র হাদিসের সনদ অর্জন করে থাকে। অসমের প্রায় সকল সরকারি মাদ্রাসায় এ মাদ্রাসার সনদপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন।
এছাড়া রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন বিভাগে এই মাদ্রাসার প্রাক্তনীরা যুক্ত রয়েছেন। এই সংখ্যা লক্ষাধিক। এই মাদ্রাসায় মিন্নাতুল্লাহ রাহমানি, আবুল হাসান আলি নদবি-সহ যেমন সুনাম খ্যাত ইসলামিক স্কলাররা এসে মুগ্ধ হয়েছেন তেমনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মাধব রাও সিন্ধিয়া, প্রণব মুখার্জি প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি-সহ আরও অনেকে এসেছিলেন। এমনকি ২০১৩ সালে মাদ্রাসার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, এখানে এলে আত্মা সজীব হয়। সেই হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার সেই প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন।