২৯ জুন ২০২৫, রবিবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিলীন হচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে বিশ্ব

সুস্মিতা
  • আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার
  • / 28

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান এবং আজারবাইজানের মাঝে অবস্থিত কাস্পিয়ান সাগর বিশ্বের বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত জলাধার। এটি ‘মিডল করিডর’ অর্থাৎ চিন থেকে ইউরোপে রাশিয়াকে এড়িয়ে দ্রুততম রুট এবং তেল ও গ্যাসের একটি প্রধান উৎস। সেই কাস্পিয়ান সাগর দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে।

কাজাখস্তানের শহর আকটাটের বাসিন্দারা বলছেন, সাগরের জল প্রায় ১০০ মিটার সরে গেছে। খালি চোখে দেখলেই তা বোঝা যায়। পরিবেশবিদ ও গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই হার অব্যাহত থাকলে শতকের শেষ নাগাদ সাগরের জল ১৮ মিটার পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: পশ্চিমা আধিপত্যবাদ ঠেকানো নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে কাস্পিয়ন সাগর তীরবর্তী দেশগুলি

প্রাচীনকাল থেকেই কাস্পিয়ান সাগর স্থানীয় মানুষের জীবনের অংশ ছিল। পরিবেশবিদ আদিলবেক কোজিবাকভ জানান, তার শৈশবে পরিবারের ফ্রিজে সবসময় স্টারজন মাছের ক্যাভিয়ার থাকত। এখন সেই মাছ বিলুপ্তপ্রায় এবং দোকানে প্রাকৃতিক ক্যাভিয়ার পাওয়া যায় না। স্টারজনসহ আরও অনেক প্রজাতির মাছের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে। গবেষকরা বলছেন, আর মাত্র ৫ থেকে ১০ মিটার জলের স্তর কমলেই সীল, স্টারজন ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন নয়, রাশিয়ার জলনীতি এবং দখলদারি প্রকল্পও কাস্পিয়ান সাগরের সংকটের জন্য দায়ী। রাশিয়ার ভলগা নদী থেকে আসে কাস্পিয়ানের ৮০-৮৫ শতাংশ জল। কিন্তু বিগত দশকে নদীতে অসংখ্য বাঁধ ও রিজার্ভার তৈরি করা হয়েছে। ফলে কাস্পিয়ান সাগরে জলের প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে।

আরও একটি বড় সমস্যা হল, সাগরের আশপাশে থাকা তেলক্ষেত্র ও তাদের পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির ভূমিকা। সোভিয়েত আমলে আবিষ্কৃত এসব তেলক্ষেত্র এখন আন্তর্জাতিক কোম্পানির হাতে। এসব কোম্পানির সঙ্গে সরকার যে গোপন চুক্তি করেছে, তাতে পরিবেশের আসল ক্ষতি সম্পর্কে তথ্য জানার সুযোগ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, কাস্পিয়ান সাগর হয়তো একই পরিণতির দিকে এগোচ্ছে, যেভাবে আরাল সাগর গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে শুকিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন নদীর জল কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করে সাগরটিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। বর্তমানে আরাল সাগর তার ১০ শতাংশ মাত্র টিকে আছে। এখন কাস্পিয়ান সাগরের ভবিষ্যৎও একই ধরনের বিপদে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে হয়তো এই সাগর শুধু ইতিহাস হয়ে থাকবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিলীন হচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে বিশ্ব

আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান এবং আজারবাইজানের মাঝে অবস্থিত কাস্পিয়ান সাগর বিশ্বের বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত জলাধার। এটি ‘মিডল করিডর’ অর্থাৎ চিন থেকে ইউরোপে রাশিয়াকে এড়িয়ে দ্রুততম রুট এবং তেল ও গ্যাসের একটি প্রধান উৎস। সেই কাস্পিয়ান সাগর দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে।

কাজাখস্তানের শহর আকটাটের বাসিন্দারা বলছেন, সাগরের জল প্রায় ১০০ মিটার সরে গেছে। খালি চোখে দেখলেই তা বোঝা যায়। পরিবেশবিদ ও গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই হার অব্যাহত থাকলে শতকের শেষ নাগাদ সাগরের জল ১৮ মিটার পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: পশ্চিমা আধিপত্যবাদ ঠেকানো নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে কাস্পিয়ন সাগর তীরবর্তী দেশগুলি

প্রাচীনকাল থেকেই কাস্পিয়ান সাগর স্থানীয় মানুষের জীবনের অংশ ছিল। পরিবেশবিদ আদিলবেক কোজিবাকভ জানান, তার শৈশবে পরিবারের ফ্রিজে সবসময় স্টারজন মাছের ক্যাভিয়ার থাকত। এখন সেই মাছ বিলুপ্তপ্রায় এবং দোকানে প্রাকৃতিক ক্যাভিয়ার পাওয়া যায় না। স্টারজনসহ আরও অনেক প্রজাতির মাছের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে। গবেষকরা বলছেন, আর মাত্র ৫ থেকে ১০ মিটার জলের স্তর কমলেই সীল, স্টারজন ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন নয়, রাশিয়ার জলনীতি এবং দখলদারি প্রকল্পও কাস্পিয়ান সাগরের সংকটের জন্য দায়ী। রাশিয়ার ভলগা নদী থেকে আসে কাস্পিয়ানের ৮০-৮৫ শতাংশ জল। কিন্তু বিগত দশকে নদীতে অসংখ্য বাঁধ ও রিজার্ভার তৈরি করা হয়েছে। ফলে কাস্পিয়ান সাগরে জলের প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে।

আরও একটি বড় সমস্যা হল, সাগরের আশপাশে থাকা তেলক্ষেত্র ও তাদের পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির ভূমিকা। সোভিয়েত আমলে আবিষ্কৃত এসব তেলক্ষেত্র এখন আন্তর্জাতিক কোম্পানির হাতে। এসব কোম্পানির সঙ্গে সরকার যে গোপন চুক্তি করেছে, তাতে পরিবেশের আসল ক্ষতি সম্পর্কে তথ্য জানার সুযোগ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, কাস্পিয়ান সাগর হয়তো একই পরিণতির দিকে এগোচ্ছে, যেভাবে আরাল সাগর গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে শুকিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন নদীর জল কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করে সাগরটিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। বর্তমানে আরাল সাগর তার ১০ শতাংশ মাত্র টিকে আছে। এখন কাস্পিয়ান সাগরের ভবিষ্যৎও একই ধরনের বিপদে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে হয়তো এই সাগর শুধু ইতিহাস হয়ে থাকবে।