০৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্থলপথে ঢাকা থেকে পণ্য আসা বন্ধ, বিপন্ন রাজ্যের হাজার কুড়ির রুজি

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৪ জুন ২০২৫, বুধবার
  • / 55

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে কেন্দ্র বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে ভারতের যে ব্যবসায়িক লেনদেন হত তা বন্ধ করে দেওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কয়েক হাজার মানুষ। কেন্দ্র পেট্রাপোল, হিলি, চ্যাংড়াবাধা, মহদিপুর এবং ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে সমস্ত রকম পণ্য লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে।

এর ফলে বাংলাদেশ থেকে যে পোশাক আসত ভারতে তা আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে প্রক্রিয়াজাত খাবার-দাবার লেনদেনও বন্ধ করা হয়েছে গত মে মাস থেকে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের এই সব শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ। সীমান্ত একেবারে শ্মশানের মতো খাঁ-খাঁ করছে। সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ।

এখন বাংলার সীমান্তের বদলে নদীবন্দর দিয়ে এইসব মালপত্র লেনদেন হচ্ছে। পেট্রাপোল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। ভারত-বাংলাদেশের স্থলপথে যে বাণিজ্য হত তার ৭০ ভাগ হত পেট্রাপোল দিয়ে। প্রতিদিন অন্তত ৬০০ থেকে ৭০০ ট্রাক এই ব্যবসায় কাজ করত। এখন সেটা নেমে দাঁড়িয়েছে সপ্তাহে হয়তো ১০০ ট্রাক। ক্রেতা নেই, অনেক দোকানি দোকান বন্ধ করে রেখেছে। ২ থেকে ৩ হাজার শ্রমিক ঠিকার ভিত্তিতে এখানে কাজ করে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা উপার্জন করত। এখন তাদের রুজি-রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

যারা এখানে শ্রমিকের কাজ করত এখন অনেকেই বিকল্প পেশা খুঁজতে শুরু করেছেন। তাঁরা বলছেন, কবে সমস্যা মিটবে করে কোনও দিশা নেই। কতদিন কর্মহীন হয়ে থাকব? অনেকে টোটো চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। উত্তর বনগাঁর বিজেপির বিধায়ক মানছেন, এর ফলে বহু মানুষের রুটিরুজি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি বললেন, দেশের স্বার্থে মেনে নিতে হবে। ট্রাক এবং অন্য যেসব পরিবহনে পণ্য লেনদেন হত তাতে হাজার পনেরো শ্রমিক জড়িত ছিলেন। সকলেরই পকেটে টান পড়েছে।

বাংলাদেশের পোশাক উৎপাদক এবং রফতানিকারী সমিতির এক মুখপাত্র জানালেন, বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৮০ ভাগ রফতানি হত। গত দশ মাসে ১২ হাজার কোটি টাকার পোশাক রফতানি হয়েছিল। নতুন নিয়ম হয়েছে স্থলপথে বাণিজ্য না হয়ে বন্দর পথে হবে। তাতে যে মাল স্থলপথে ৩ দিনে চলে আসত সেই মাল আসতে ৩ সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। এতে লোকসান হচ্ছে। বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ী, শ্রমিকদের খুব ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশে পোশাক তৈরি হলেও কাপড় যেত ভারত থেকে। তাও যাচ্ছে না।

শান্তিনিকেতন থেকে কাপড় বাংলাদেশে পাঠিয়ে সেখানে পোশাক বানিয়ে ফের ভারতে বিক্রির জন্য আসত। এখন সব বন্ধ। কলকাতার বড়বাজারের এক ব্যবসায়ী সুরেন্দ্র গুপ্ত বললেন, দিল্লি, মুম্বইয়ে যেসব তৈরি পোশাক বিক্রি হয় সব বাংলাদেশের। কারণ ওখানে কম দামে পোশাক তৈরি হয়। এখানে যত বারমুডা বা মেয়েদের শালোয়ার কামিজ বিক্রি হয় বেশিরভাগই বাংলাদেশের। হাওড়া হাটের কারবারিরাও বাংলাদেশের পোশাক বেশি বিক্রি করেন। বাংলাদেশ বছরে ৭০ কোটি আমেরিকান ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করে ভারতে। এই সব পণ্যের ৯৩ শতাংশ আসত স্থলপথে। জলবন্দর দিয়ে মাল পাঠালে সমূহ ক্ষতি। বলছেন ভুক্তভোগীরা।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

স্থলপথে ঢাকা থেকে পণ্য আসা বন্ধ, বিপন্ন রাজ্যের হাজার কুড়ির রুজি

আপডেট : ৪ জুন ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে কেন্দ্র বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে ভারতের যে ব্যবসায়িক লেনদেন হত তা বন্ধ করে দেওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কয়েক হাজার মানুষ। কেন্দ্র পেট্রাপোল, হিলি, চ্যাংড়াবাধা, মহদিপুর এবং ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে সমস্ত রকম পণ্য লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে।

এর ফলে বাংলাদেশ থেকে যে পোশাক আসত ভারতে তা আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে প্রক্রিয়াজাত খাবার-দাবার লেনদেনও বন্ধ করা হয়েছে গত মে মাস থেকে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের এই সব শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ। সীমান্ত একেবারে শ্মশানের মতো খাঁ-খাঁ করছে। সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ।

এখন বাংলার সীমান্তের বদলে নদীবন্দর দিয়ে এইসব মালপত্র লেনদেন হচ্ছে। পেট্রাপোল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। ভারত-বাংলাদেশের স্থলপথে যে বাণিজ্য হত তার ৭০ ভাগ হত পেট্রাপোল দিয়ে। প্রতিদিন অন্তত ৬০০ থেকে ৭০০ ট্রাক এই ব্যবসায় কাজ করত। এখন সেটা নেমে দাঁড়িয়েছে সপ্তাহে হয়তো ১০০ ট্রাক। ক্রেতা নেই, অনেক দোকানি দোকান বন্ধ করে রেখেছে। ২ থেকে ৩ হাজার শ্রমিক ঠিকার ভিত্তিতে এখানে কাজ করে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা উপার্জন করত। এখন তাদের রুজি-রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

যারা এখানে শ্রমিকের কাজ করত এখন অনেকেই বিকল্প পেশা খুঁজতে শুরু করেছেন। তাঁরা বলছেন, কবে সমস্যা মিটবে করে কোনও দিশা নেই। কতদিন কর্মহীন হয়ে থাকব? অনেকে টোটো চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। উত্তর বনগাঁর বিজেপির বিধায়ক মানছেন, এর ফলে বহু মানুষের রুটিরুজি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি বললেন, দেশের স্বার্থে মেনে নিতে হবে। ট্রাক এবং অন্য যেসব পরিবহনে পণ্য লেনদেন হত তাতে হাজার পনেরো শ্রমিক জড়িত ছিলেন। সকলেরই পকেটে টান পড়েছে।

বাংলাদেশের পোশাক উৎপাদক এবং রফতানিকারী সমিতির এক মুখপাত্র জানালেন, বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৮০ ভাগ রফতানি হত। গত দশ মাসে ১২ হাজার কোটি টাকার পোশাক রফতানি হয়েছিল। নতুন নিয়ম হয়েছে স্থলপথে বাণিজ্য না হয়ে বন্দর পথে হবে। তাতে যে মাল স্থলপথে ৩ দিনে চলে আসত সেই মাল আসতে ৩ সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। এতে লোকসান হচ্ছে। বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ী, শ্রমিকদের খুব ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশে পোশাক তৈরি হলেও কাপড় যেত ভারত থেকে। তাও যাচ্ছে না।

শান্তিনিকেতন থেকে কাপড় বাংলাদেশে পাঠিয়ে সেখানে পোশাক বানিয়ে ফের ভারতে বিক্রির জন্য আসত। এখন সব বন্ধ। কলকাতার বড়বাজারের এক ব্যবসায়ী সুরেন্দ্র গুপ্ত বললেন, দিল্লি, মুম্বইয়ে যেসব তৈরি পোশাক বিক্রি হয় সব বাংলাদেশের। কারণ ওখানে কম দামে পোশাক তৈরি হয়। এখানে যত বারমুডা বা মেয়েদের শালোয়ার কামিজ বিক্রি হয় বেশিরভাগই বাংলাদেশের। হাওড়া হাটের কারবারিরাও বাংলাদেশের পোশাক বেশি বিক্রি করেন। বাংলাদেশ বছরে ৭০ কোটি আমেরিকান ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করে ভারতে। এই সব পণ্যের ৯৩ শতাংশ আসত স্থলপথে। জলবন্দর দিয়ে মাল পাঠালে সমূহ ক্ষতি। বলছেন ভুক্তভোগীরা।