০৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যোগীরাজ্যে ফের গণধোলাই, খুন ১৭ বছরের অটো মেকানিক

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার
  • / 18

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃবৃহস্পতিবার পশ্চিম উত্তর প্রদেশের শামলি শহরের কাছে বনাত গ্রামে ১৭ বছর বয়সি এক মুসলিম অটো মেকানিককে একদল উন্মত্ত নিষ্ঠুর জনতা পিটিয়ে হত্যা করেছে৷ বিজেপি সরকার দেশে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গণধোলাই অব্যাহত৷ ফের সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি উত্তরপ্রদেশে৷ শিকার সেই মুসলিমই৷ পুলিশের তরফ থেকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷

আটজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদর্শ মান্দি থানায় খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ইনস্পেক্টর সুনীল নেগি জানিয়েছেন, আমরা তদন্ত শুরু করেছি এবং প্রধান অভিযুক্ত বর্ধনকে গ্রেফতার করেছি।এফআইআর-এ অন্য সাতজনের নাম হল: বতনরাজ, অক্ষয়, রাজ, আশীষ, লাকি, চিন্টু (আয়ুশ রানা) এবং ভন্ডা। নেগি আরও বলেন, অভিযুক্তরা জাট সম্প্রদায়ের এবং ভিকটিম মুসলিম।খুন ছাড়াও পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ এবং ১৪৮ ধারায় দাঙ্গার অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৭ বছর বয়সি সমীর চৌধুরী গ্রামের বাজারে একটি কাজে বেরিয়েছিলেন, তখন তাকে একদল উগ্র জনতা লাঞ্ছিত করে। তার চাচা আদিল চৌধুরীর মতে, ওই দুষ্কৃতিরা তার মাথায় বারবার আঘাত করার মধ্যে তাকে গুরুতর আহত করে। এরপর তাকে শামলির একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুজাফফরনগর শহর হাসপাতালে রেফার করেন৷ কিন্তু পথে তিনি মারা যান। সমীরের খুড়তুতো  ভাই পারভেজ বলেন, একদল মুসলিম ছেলে জাট সম্প্রদায়ের ছেলেদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে তর্ক করছিল৷ কিন্তু তাদের সম্প্রদায়ের প্রবীণরা হস্তক্ষেপ করে এবং মুসলমানদের বেধড়ক মারধর শুরু করে। যখন তারা দৌড়িয়ে পালিয়ে যেতে থাকে তখন সমীরকে ধরা হয় এবং নির্মমভাবে মারধর করা হয়। তারা বারবার রাস্তায় ফেলে তার মাথা থেতলে দেয়৷ পারভেজ একে ঘৃণ্য অপরাধ বলে অভিহিত করে বলেন, সমীরকে তার মুসলিম পরিচয়ের জন্য হত্যা করা হয়েছে৷ আদিল বলেন, যারা মারধর করেছে তারা হল গুন্ডা, দাদাগিরির জন্য কুখ্যাত৷সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে। সম্প্রতি তাদের দুজন কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছে।

আরও পড়ুন: ধর্ষণের অভিযোগে প্রৌঢ়কে বেঁধে গণধোলাই

পুলিশ সুপার সুকীর্তি মাধব সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে বলেছেন, কিছু বিরোধের কারণে অভিযুক্তের সঙ্গে ঝগড়ার সময় সমীর নিহত হন।প্রতিবেশী মুজাফফরনগর জেলায় কৃষকদের একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার মাত্র চার দিন পর এই ঘটনা ঘটল। মুজাফফরনগর এবং শামলী গ্রামে হিংস্র দাঙ্গার আট বছর পর পশ্চিম উত্তর প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে এই সমাবেশকে দেখা হয়েছিল। গত সপ্তাহের সমাবেশে আল্লাহু আকবর এবং হর হর মহাদেবের স্লোগান তোলা হয়েছিল৷  কিন্তু সমীরের হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে দিল যে সাধারণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ঘৃণ্য অপরাধ অব্যাহত রয়েছে৷ অবশ্য এসপি মাধব আশ্বাস দিয়েছেন যে পলাতক সাত আসামিকেও গ্রেফতার করা হবে। সমীর গ্রামের কাছে হাইওয়েতে অবস্থিত টাটা কোম্পানির একটি ওয়ার্কশপে মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। বাড়িতে তিনি দুই ভাই, এক বোন এবং মা-কে রেখে গেছেন। কয়েক বছর আগে তার বাবা মারা গেছেন এবং তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

আরও পড়ুন: বিডিও অফিসে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা,প্রতারিত মহিলারা প্রকাশ্যে দিলেন গণধোলাই

আরও পড়ুন: বালিতে মহিলা নেশা মুক্তি কেন্দ্রে মধুচক্র চালানোর অভিযোগ, পুলিশের সামনেই চললো গণধোলাই

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

যোগীরাজ্যে ফের গণধোলাই, খুন ১৭ বছরের অটো মেকানিক

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃবৃহস্পতিবার পশ্চিম উত্তর প্রদেশের শামলি শহরের কাছে বনাত গ্রামে ১৭ বছর বয়সি এক মুসলিম অটো মেকানিককে একদল উন্মত্ত নিষ্ঠুর জনতা পিটিয়ে হত্যা করেছে৷ বিজেপি সরকার দেশে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গণধোলাই অব্যাহত৷ ফের সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি উত্তরপ্রদেশে৷ শিকার সেই মুসলিমই৷ পুলিশের তরফ থেকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷

আটজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদর্শ মান্দি থানায় খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ইনস্পেক্টর সুনীল নেগি জানিয়েছেন, আমরা তদন্ত শুরু করেছি এবং প্রধান অভিযুক্ত বর্ধনকে গ্রেফতার করেছি।এফআইআর-এ অন্য সাতজনের নাম হল: বতনরাজ, অক্ষয়, রাজ, আশীষ, লাকি, চিন্টু (আয়ুশ রানা) এবং ভন্ডা। নেগি আরও বলেন, অভিযুক্তরা জাট সম্প্রদায়ের এবং ভিকটিম মুসলিম।খুন ছাড়াও পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ এবং ১৪৮ ধারায় দাঙ্গার অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৭ বছর বয়সি সমীর চৌধুরী গ্রামের বাজারে একটি কাজে বেরিয়েছিলেন, তখন তাকে একদল উগ্র জনতা লাঞ্ছিত করে। তার চাচা আদিল চৌধুরীর মতে, ওই দুষ্কৃতিরা তার মাথায় বারবার আঘাত করার মধ্যে তাকে গুরুতর আহত করে। এরপর তাকে শামলির একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুজাফফরনগর শহর হাসপাতালে রেফার করেন৷ কিন্তু পথে তিনি মারা যান। সমীরের খুড়তুতো  ভাই পারভেজ বলেন, একদল মুসলিম ছেলে জাট সম্প্রদায়ের ছেলেদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে তর্ক করছিল৷ কিন্তু তাদের সম্প্রদায়ের প্রবীণরা হস্তক্ষেপ করে এবং মুসলমানদের বেধড়ক মারধর শুরু করে। যখন তারা দৌড়িয়ে পালিয়ে যেতে থাকে তখন সমীরকে ধরা হয় এবং নির্মমভাবে মারধর করা হয়। তারা বারবার রাস্তায় ফেলে তার মাথা থেতলে দেয়৷ পারভেজ একে ঘৃণ্য অপরাধ বলে অভিহিত করে বলেন, সমীরকে তার মুসলিম পরিচয়ের জন্য হত্যা করা হয়েছে৷ আদিল বলেন, যারা মারধর করেছে তারা হল গুন্ডা, দাদাগিরির জন্য কুখ্যাত৷সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে। সম্প্রতি তাদের দুজন কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছে।

আরও পড়ুন: ধর্ষণের অভিযোগে প্রৌঢ়কে বেঁধে গণধোলাই

পুলিশ সুপার সুকীর্তি মাধব সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে বলেছেন, কিছু বিরোধের কারণে অভিযুক্তের সঙ্গে ঝগড়ার সময় সমীর নিহত হন।প্রতিবেশী মুজাফফরনগর জেলায় কৃষকদের একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার মাত্র চার দিন পর এই ঘটনা ঘটল। মুজাফফরনগর এবং শামলী গ্রামে হিংস্র দাঙ্গার আট বছর পর পশ্চিম উত্তর প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে এই সমাবেশকে দেখা হয়েছিল। গত সপ্তাহের সমাবেশে আল্লাহু আকবর এবং হর হর মহাদেবের স্লোগান তোলা হয়েছিল৷  কিন্তু সমীরের হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে দিল যে সাধারণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ঘৃণ্য অপরাধ অব্যাহত রয়েছে৷ অবশ্য এসপি মাধব আশ্বাস দিয়েছেন যে পলাতক সাত আসামিকেও গ্রেফতার করা হবে। সমীর গ্রামের কাছে হাইওয়েতে অবস্থিত টাটা কোম্পানির একটি ওয়ার্কশপে মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। বাড়িতে তিনি দুই ভাই, এক বোন এবং মা-কে রেখে গেছেন। কয়েক বছর আগে তার বাবা মারা গেছেন এবং তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

আরও পড়ুন: বিডিও অফিসে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা,প্রতারিত মহিলারা প্রকাশ্যে দিলেন গণধোলাই

আরও পড়ুন: বালিতে মহিলা নেশা মুক্তি কেন্দ্রে মধুচক্র চালানোর অভিযোগ, পুলিশের সামনেই চললো গণধোলাই