০৯ জুন ২০২৫, সোমবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে: গুতেরেস

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ৮ জুন ২০২৫, রবিবার
  • / 18

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের টেকসই সমাধানের জন্য দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান অপরিহার্য এবং এ লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

তিনি বলেন, গাজা ও পশ্চিম তীরে আমরা যেসব ভয়াবহ দৃশ্য দেখছি, সেই প্রেক্ষাপটে দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরি। যারা এই সমাধান নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন, আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, বিকল্প কী?

আরও পড়ুন: সার্বিয়ার উপর চাপ দিক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

একরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান যেখানে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে, অথবা তাদের নিজ ভূমিতে অধিকারহীন অবস্থায় বাঁচতে বাধ্য করা হবে? এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

আরও পড়ুন: গুতেরেস আমেরিকার পুতুল: উত্তর কোরিয়া

রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের এই মন্তব্য এমন এক সময় এসেছে, যখন সউদি আরব ও ফ্রান্স এই জুন মাসে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সদর দফতরে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হল দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হওয়া এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের অবসান ঘটানো। ইতিমধ্যে এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে, বিশেষ করে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কারণে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে গুতেরেস আর্থিক সহায়তার আহ্বান

মার্চ মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ভেঙে যাওয়ার পর ইসরাইল যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, তার ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে, অসংখ্য ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এদিকে রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদের এক প্রস্তুতিমূলক সভায় সউদি আরব বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি কেবল প্রতীকী পদক্ষেপ নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা। আঞ্চলিক শান্তির সূচনা হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমেই।

সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য ১৭ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারিত হয়েছে। সম্মেলনের লক্ষ্য হবে, দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং রাজনৈতিক ঘোষণার বাইরে গিয়ে বাস্তব অগ্রগতি নিশ্চিত করা।

২০১২ সাল থেকে রাষ্ট্রসংঘ ফিলিস্তিন একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত হলেও তারা এখনো পূর্ণ সদস্যপদ পায়নি। রাষ্ট্রসংঘের বর্তমান ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৭টি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী রাষ্ট্রের আপত্তির কারণে তাদের পূর্ণ সদস্যপদ থমকে রয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলার পর ইসরাইল গাজায় অভিযান শুরু করে। হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১,২০০ জন নিহত হয়। এরপর শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৩,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত বুধবার রাষ্ট্রসংঘ প্রধান ২০২৪ সালে নিহত ১৬৮ জন রাষ্ট্রসংঘের কর্মীর স্মরণে এক শোকসভায় অংশ নেন। তার ভাষায়, ২০২৪ সাল রাষ্ট্রসংঘের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর।

এই ১৬৮ জনের মধ্যে ১২৬ জন গাজায় নিহত হন এবং তাদের প্রায় সবাই ছিলেন রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র কর্মী।

গুতেরেস বলেন, ৫০ জন কর্মীর মধ্যে একজনেরও বেশি নিহত হয়েছেন এই ভয়াবহ সংঘাতে। কেউ কেউ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন, কেউ পরিবারের সঙ্গে, আবার কেউ আশ্রয়হীনদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এই মানুষগুলি স্বীকৃতির জন্য কাজ করেন না। তারা পার্থক্য গড়তে চান। যখন সংঘাত শুরু হয়, তখন তারা শান্তির জন্য কাজ করেন। যখন অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তখন তারা প্রতিবাদ করেন।

রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আরও বলেন, আমরা মানবিক কর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকে কোনোভাবেই ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে গ্রহণ করব না।

এসব ক্ষেত্রে দায়মুক্তির কোনও জায়গা থাকতে পারে না। তিনি রাষ্ট্রসংঘের মৌলিক নীতিতে অবিচল থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আমাদের নীতিতে কখনও দুর্বল হব না। আমরা আমাদের মূল্যবোধ ত্যাগ করব না। আর আমরা কখনওই হাল ছাড়ব না।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে: গুতেরেস

আপডেট : ৮ জুন ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের টেকসই সমাধানের জন্য দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান অপরিহার্য এবং এ লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

তিনি বলেন, গাজা ও পশ্চিম তীরে আমরা যেসব ভয়াবহ দৃশ্য দেখছি, সেই প্রেক্ষাপটে দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরি। যারা এই সমাধান নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন, আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, বিকল্প কী?

আরও পড়ুন: সার্বিয়ার উপর চাপ দিক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

একরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান যেখানে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে, অথবা তাদের নিজ ভূমিতে অধিকারহীন অবস্থায় বাঁচতে বাধ্য করা হবে? এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

আরও পড়ুন: গুতেরেস আমেরিকার পুতুল: উত্তর কোরিয়া

রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের এই মন্তব্য এমন এক সময় এসেছে, যখন সউদি আরব ও ফ্রান্স এই জুন মাসে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সদর দফতরে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হল দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হওয়া এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের অবসান ঘটানো। ইতিমধ্যে এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে, বিশেষ করে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কারণে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে গুতেরেস আর্থিক সহায়তার আহ্বান

মার্চ মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ভেঙে যাওয়ার পর ইসরাইল যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, তার ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে, অসংখ্য ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এদিকে রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদের এক প্রস্তুতিমূলক সভায় সউদি আরব বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি কেবল প্রতীকী পদক্ষেপ নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা। আঞ্চলিক শান্তির সূচনা হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমেই।

সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য ১৭ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারিত হয়েছে। সম্মেলনের লক্ষ্য হবে, দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং রাজনৈতিক ঘোষণার বাইরে গিয়ে বাস্তব অগ্রগতি নিশ্চিত করা।

২০১২ সাল থেকে রাষ্ট্রসংঘ ফিলিস্তিন একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত হলেও তারা এখনো পূর্ণ সদস্যপদ পায়নি। রাষ্ট্রসংঘের বর্তমান ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৭টি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী রাষ্ট্রের আপত্তির কারণে তাদের পূর্ণ সদস্যপদ থমকে রয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলার পর ইসরাইল গাজায় অভিযান শুরু করে। হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১,২০০ জন নিহত হয়। এরপর শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৩,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত বুধবার রাষ্ট্রসংঘ প্রধান ২০২৪ সালে নিহত ১৬৮ জন রাষ্ট্রসংঘের কর্মীর স্মরণে এক শোকসভায় অংশ নেন। তার ভাষায়, ২০২৪ সাল রাষ্ট্রসংঘের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর।

এই ১৬৮ জনের মধ্যে ১২৬ জন গাজায় নিহত হন এবং তাদের প্রায় সবাই ছিলেন রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র কর্মী।

গুতেরেস বলেন, ৫০ জন কর্মীর মধ্যে একজনেরও বেশি নিহত হয়েছেন এই ভয়াবহ সংঘাতে। কেউ কেউ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন, কেউ পরিবারের সঙ্গে, আবার কেউ আশ্রয়হীনদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এই মানুষগুলি স্বীকৃতির জন্য কাজ করেন না। তারা পার্থক্য গড়তে চান। যখন সংঘাত শুরু হয়, তখন তারা শান্তির জন্য কাজ করেন। যখন অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তখন তারা প্রতিবাদ করেন।

রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আরও বলেন, আমরা মানবিক কর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকে কোনোভাবেই ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে গ্রহণ করব না।

এসব ক্ষেত্রে দায়মুক্তির কোনও জায়গা থাকতে পারে না। তিনি রাষ্ট্রসংঘের মৌলিক নীতিতে অবিচল থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আমাদের নীতিতে কখনও দুর্বল হব না। আমরা আমাদের মূল্যবোধ ত্যাগ করব না। আর আমরা কখনওই হাল ছাড়ব না।