শুভ্রজ্যোতি ঘোষ: অবশেষে চোকার্স তকমা মুছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয় প্রোটিয়াদের। ঐতিহাসিক লর্ডসে ইতিহাস গড়লেন বাভুমারা। সৌজন্যে এইডেন মারক্রাম ও দক্ষিণ আফ্রিকান ক্যাপ্টেন টেম্বা বাভুমা।

শেষবার দক্ষিণ আফ্রিকা উইসল ট্রফির ফাইনাল জিতেছিল ১৯৯৮ সালে। বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেট খেলিয়ে দেশ সেই প্রতিযাগিতাতে থাকলেও তখন আইসিসি ছিল না। আইসিসির প্রথম ট্রফি জয়ের ক্ষেত্রে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সবচেয়ে বড় সুযোগ।

কিন্তু ভারতের কাছে হেরে প্রোটিয়াদের স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটেছিল আটলান্টিকের পাড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টেমসের তীরে এসে বিশ্বজয়ের নতুন পৃথিবীতে পা রাখল দক্ষিণ আফ্রিকা। একটা আনকোরা দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মতো অভিজ্ঞ টেস্ট খেলিয়ে দেশকে হারিয়ে লর্ডসে টেস্ট জয় দক্ষিণ আফ্রিকার। তাও প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানে পিছিয়ে থেকেও।

ফাইনালের আগে ১২টি টেস্ট খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তার মধ্যে সাদা বলের ক্রিকেটে আর এক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের কাছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া ছাড়া বাকি সবকটি দলকে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই শৃঙ্খলায় অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তি সেভাবে পরীক্ষিত হয়নি।

কারণ যে ক’টি দলকে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনালে উঠেছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র নিউজিল্যান্ড ছাড়া প্রোটিয়াদের সমকক্ষ কেউই ছিল না। তাই ফাইনালে অনেকেই অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে রেখেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েই প্রথমবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয় তো বটেই, ২৭ বছর পর খরা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রফিও জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার পর নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেট।

প্রথম ইনিংসের পর যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখে মনে হচ্ছিল হয়ত অজিদের কাছে আত্মসমর্পন করে ফেলবে দলটা, সেই দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস যেন নিখুঁত স্বপ্নের জাল বোনা। আর সে জালে বন্দি অস্ট্রেলিয়া। এইডেন মারক্রাম ও ক্যাপ্টেন টেম্বা বাভুমার চওড়া ব্যাটই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধীরে ধীরে নিয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাস্তায়। সময় যত গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা ততই হতাশায় ডুবে গিয়েছেন।

আর আরও চওড়া হয়েছে মারক্রামের ব্যাট। চোট নিয়েও খেললেন প্রোটিয়া ক্যাপ্টেন বাভুমা। তিনি আউট হওয়ার পরেই নিজের মেজাজে খেলে গিয়েছেন মারক্রাম। যে মারক্রামকে সাদা বলের ক্রিকেটে মারকাটারি মেজাজে দেখতে পাওয়া যায়, সেই মারক্রামের ব্যাটিং চরিত্রও পালটে গিয়েছে লর্ডসে এসে।

কামিন্স, স্টার্ক, হ্যাজলউডদের বোলিংকে কার্যত পাত্তাই দিলেন না মারক্রাম। শেষ পর্যন্ত ১৩৬ রানে হ্যাজলউডের বলেই যখন মারক্রাম ফিরে যাচ্ছেন, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার জিততে মাত্র কয়েকটা রান বাকি। ডেভিড বেডিংগাম ও কাইলে ভেরেনে ধীরে ধীরে প্রোটিয়াদের নিয়ে গেলেন জয়ের পথে।

টেম্বা বাভুমার হাত ধরে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের নতুন সূর্য উঠল। এবছরই নিজেদের চোকার্স তকমা মুছে আঠারো বছর অপেক্ষার শেষে আইপিএল ট্রফি জিতেছে রয়্যাল চ্যামেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। আর ঠিক তার কয়েকদিন পরেই ২৭ বছর পর চোকার্স তকমা মুছিয়ে টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা। আর গতবার ভারতকে হারিয়ে টেস্টের বিশ্বকাপ জেতা অস্ট্রেলিয়াকে সন্তুষ্ট থাকতে হল রানার্স আপ হয়েই। আবারও একটা টেস্ট শেষ হল আড়াই দিনেরও কম সময়ে। লর্ডসে তৃতীয় দিন লাঞ্চের আগেই জিতে ইতিহাস গড়ে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা।