কেমো ছাড়াই ক্যানসার কোষকে সুস্থ কোষে রূপান্তর: দক্ষিণ কোরিয়ার যুগান্তকারী আবিষ্কার

- আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার
- / 24
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে নয়া আলোড়ন! দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে ক্যানসার কোষকে ধ্বংস না করেই সুস্থ কোষে পরিণত করা সম্ভব। আর সেই পথে নেই কেমোথেরাপি;যা শরীরের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। বরং, এই নতুন পদ্ধতিতে ক্যানসার কোষকে একেবারে নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক কোয়াং হিউন চো এবং তাঁর দল। তাঁরা এমন একটি কম্পিউটারভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন, যার নাম ডিজিটাল ট্যুইন। এর মাধ্যমে কোষের ভিতরের জিনগত যোগাযোগের নিখুঁত নকশা তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কোষের ভিতরের জিনের সম্পর্ক ও কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কোন কোন জিনকে নিয়ন্ত্রণ করলে কোষের আচরণ পালটে দেওয়া সম্ভব।
এই গবেষণার মূলে রয়েছে একটি বিশেষ অ্যালগোরিদম – বেনাইন (বুলিয়ান নেটওয়ার্ক ইনফারেন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল)। এর কাজ হল কোষের ভিতরে কোন কোন জিন কীভাবে একে অপরকে প্রভাবিত করছে, সেই ম্যাপিং করা এবং বোঝা কোন জিনগুলো সুস্থ কোষের আচরণ ফিরিয়ে আনতে পারে। এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা ৪ হাজারেরও বেশি অন্ত্রের কোষ বিশ্লেষণ করে ৫ শতাধিক জিনের একটি নকশা তৈরি করেন। সেই বিশ্লেষণের ফলেই খুঁজে পাওয়া যায় তিনটি বিশেষ জিন; মাইবি, এইচডি এইসি-২ এবং ফোক্সএ-২। এই তিনটি জিনকে যদি একসঙ্গে ‘নকড-ডাউন’ (অর্থাৎ কার্যকারিতা বন্ধ করা হয়), তাহলে ক্যানসার কোষ আর আগের মতো বেড়ে ওঠে না, বরং সাধারণ কোষের মতো আচরণ করতে শুরু করে।
এই পদ্ধতির সাফল্য প্রমাণিত হয়েছে পরীক্ষাগারে ক্যানসারের কোষে এবং প্রাণীদেহেও। এইভাবে নিয়ন্ত্রিত কোষগুলি যখন ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তখন দেখা যায়, আগের চেয়ে অনেক ছোট এবং হালকা টিউমার তৈরি হয়েছে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, সেই কোষগুলিতে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে যা শুধুমাত্র সুস্থ অন্ত্রের কোষেই দেখা যায়।
এই গবেষণার বড় দিক হল, এটি শুধু ক্যানসারেই সীমাবদ্ধ নয়। মস্তিষ্কের কোষের বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধে কাজ করা টি-সেল-এর ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি সফলভাবে মূল নিয়ামক চিহ্নিত করতে পেরেছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনই সব ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগযোগ্য কি না বা এই পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না;তা জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবুও, এটা স্পষ্ট;ক্যানসার চিকিৎসার চিন্তাভাবনায় এক আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।