২১ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মালদহে তৃণমূল নেতাকে ঘরে ঢুকিয়ে নৃশংস খুন, জমি বিবাদে অভিযুক্ত আর এক তৃণমূল নেতা

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
  • / 109

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক:পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুই নেতার মধ্যে রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বে এক নেতার মৃত্যু ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল। জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়ে নিজের ‘ঘনিষ্ঠ’ বন্ধুর হাতেই ঘরে ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে খুন হলেন তৃণমূল নেতা আবুল কালাম আজাদ। অভিযোগ, তাঁকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয়। ঘটনায় অভিযুক্ত আর এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা মইনুল শেখ, যাঁকে ইতিমধ্যেই পুলিশ আটক করেছে।

ঘটনাস্থল মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের লক্ষ্মীপুর এলাকা। মৃত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখল, জাল দলিল তৈরি, জাল সার্টিফিকেট বানানোর মতো একাধিক অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি এক জীবিত ব্যক্তি এবং তাঁর ছেলেকে কাগজে ‘মৃত’ দেখিয়ে তাঁদের সাত বিঘারও বেশি জমি দখল করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও এইসব অভিযোগ তদন্তাধীন।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত মইনুল শেখ মালদহে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বলেই পরিচিত। একসময় ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তৃণমূল থেকে টিকিট না পেয়ে কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করে লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জয়ী হন, এরপর ফের তৃণমূলে যোগ দেন। জেলার তাবড় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।

আরও পড়ুন: ভাঙড়ে তৃণমূল নেতা রাজ্জাক খাঁ খুনে নতুন মোড়, গ্রেপ্তার আরও তিন জন

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আবুল কালাম আজাদ এবং মইনুল শেখ একসঙ্গে জমির ব্যবসা করতেন। নয় বিঘা জমি ও মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। সেই জমি সংক্রান্ত আর্থিক বিবাদের জেরেই এই খুনের ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক অনুমান।

আরও পড়ুন: নিহত রাজ্জাক খাঁ-র পরিবারের পাশে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে স্ত্রী পেলেন চাকরির আশ্বাস

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মইনুল শেখকে ‘জমি মাফিয়া’ বলেও উল্লেখ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার জমি দখল ও বেআইনি লেনদেনে বহু দিন ধরেই মইনুলের নাম উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন: ফিরহাদের হাতে স্টিয়ারিং,কন্ডাক্টর বিধায়ক! মালদহে বাস ডিপোর অভিনব উদ্বোধন

এই ঘটনায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুল রহিম বক্সী স্পষ্ট জানিয়েছেন, “এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দল এমন কাজ কখনওই সমর্থন করে না।”

উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, এর আগের দিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে তৃণমূল নেতা রজ্জাক খাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তিনি তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লার ঘনিষ্ঠ বলেও জানা যায়।

এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে সামনে আনল, যা দলীয় নেতৃত্বকেই অস্বস্তিতে ফেলতে বাধ্য। তদন্তের অগ্রগতি ও বিচারব্যবস্থার ভূমিকার দিকেই এখন নজর রাখছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষ।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মালদহে তৃণমূল নেতাকে ঘরে ঢুকিয়ে নৃশংস খুন, জমি বিবাদে অভিযুক্ত আর এক তৃণমূল নেতা

আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক:পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুই নেতার মধ্যে রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বে এক নেতার মৃত্যু ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল। জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়ে নিজের ‘ঘনিষ্ঠ’ বন্ধুর হাতেই ঘরে ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে খুন হলেন তৃণমূল নেতা আবুল কালাম আজাদ। অভিযোগ, তাঁকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয়। ঘটনায় অভিযুক্ত আর এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা মইনুল শেখ, যাঁকে ইতিমধ্যেই পুলিশ আটক করেছে।

ঘটনাস্থল মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের লক্ষ্মীপুর এলাকা। মৃত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখল, জাল দলিল তৈরি, জাল সার্টিফিকেট বানানোর মতো একাধিক অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি এক জীবিত ব্যক্তি এবং তাঁর ছেলেকে কাগজে ‘মৃত’ দেখিয়ে তাঁদের সাত বিঘারও বেশি জমি দখল করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও এইসব অভিযোগ তদন্তাধীন।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত মইনুল শেখ মালদহে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বলেই পরিচিত। একসময় ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তৃণমূল থেকে টিকিট না পেয়ে কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করে লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জয়ী হন, এরপর ফের তৃণমূলে যোগ দেন। জেলার তাবড় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।

আরও পড়ুন: ভাঙড়ে তৃণমূল নেতা রাজ্জাক খাঁ খুনে নতুন মোড়, গ্রেপ্তার আরও তিন জন

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আবুল কালাম আজাদ এবং মইনুল শেখ একসঙ্গে জমির ব্যবসা করতেন। নয় বিঘা জমি ও মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। সেই জমি সংক্রান্ত আর্থিক বিবাদের জেরেই এই খুনের ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক অনুমান।

আরও পড়ুন: নিহত রাজ্জাক খাঁ-র পরিবারের পাশে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে স্ত্রী পেলেন চাকরির আশ্বাস

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মইনুল শেখকে ‘জমি মাফিয়া’ বলেও উল্লেখ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার জমি দখল ও বেআইনি লেনদেনে বহু দিন ধরেই মইনুলের নাম উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন: ফিরহাদের হাতে স্টিয়ারিং,কন্ডাক্টর বিধায়ক! মালদহে বাস ডিপোর অভিনব উদ্বোধন

এই ঘটনায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুল রহিম বক্সী স্পষ্ট জানিয়েছেন, “এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দল এমন কাজ কখনওই সমর্থন করে না।”

উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, এর আগের দিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে তৃণমূল নেতা রজ্জাক খাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তিনি তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লার ঘনিষ্ঠ বলেও জানা যায়।

এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে সামনে আনল, যা দলীয় নেতৃত্বকেই অস্বস্তিতে ফেলতে বাধ্য। তদন্তের অগ্রগতি ও বিচারব্যবস্থার ভূমিকার দিকেই এখন নজর রাখছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষ।