০৮ জুন ২০২৫, রবিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহেশতলার ঘটনায় উৎকণ্ঠায় পরিবার, আতঙ্কে পরিযায়ী শ্রমিকেরা

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ৮ জুন ২০২৫, রবিবার
  • / 39

পুবের কলম প্রতিবেদক, ইসলামপুরঃ মহেশতলার  একটি জিন্স কারখানা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ইসলামপুরের চোদ্দ বছরের কিশোরটি কোথায়? এই প্রশ্ন এখন গোটা এলাকায় তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়েছে। দশদিন কেটে গেলেও কোনও খোঁজ নেই ওই নাবালকের। পরিবার, প্রতিবেশী, এলাকার মানুষ কেউই আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছেন না। পুলিশের তল্লাশি চলছে ঠিকই, কিন্তু স্পষ্ট কোনও তথ্য এখনও হাতে আসেনি। নিখোঁজ কিশোর ইসলামপুর মহকুমার মাটিকুন্ডা এলাকার বাসিন্দা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সে। সংসারে অভাব ঘোচাতে কয়েকমাস আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় জিন্স কারখানায় কাজে যোগ দেয়। অভিযোগ, কারখানায় মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে মারধর করা হয় এবং তারপর থেকেই সে নিখোঁজ।

পরিবারের দাবি, কিশোরটিকে বেধড়ক মারধর করে আটকে রাখা হয়েছিল। তারপরে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কেউ জানে না। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও ভিডিয়ো ফুটেজ, কললিস্ট বা কারখানার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জবাব মেলেনি। নিখোঁজ কিশোরের মা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘আমার ছেলেকে খুঁজে দিন। সে কোথায় গেল? মারা গেল না বেঁচে আছে, কিছুই জানি না। ওর কোনও খবর তো দিন!’ বাবা বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। পেটের দায়ে ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম। এখন আমাদের বুকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে।’

ঘটনার জেরে রবিবার ইসলামপুরের মাটিকুন্ডায় রাস্তা অবরোধ করে স্থানীয় বাসিন্দারা। টায়ার জ্বালিয়ে চলে বিক্ষোভ। তাঁদের দাবি, নিখোঁজ কিশোরকে অবিলম্বে খুঁজে আনতে হবে, না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা। এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে গোটা ইসলামপুর মহকুমা জুড়ে। শ’য়ে শ’য়ে পরিযায়ী শ্রমিক ভিনরাজ্য থেকে কাজ ছেড়ে ফিরে আসছেন। আতঙ্কে ভুগছেন তাঁদের পরিবারও। অনেকেই বলছেন, ‘পেট চালিয়ে নেব, কিন্তু ছেলেকে আর কাজে পাঠাব না।’ পাটাগোড়ার বুধু মুহাম্মদ, মাটিকুন্ডার মাসুম রেজা এঁরা সকলেই কলকাতায় জিন্স কারখানায় কাজ করতেন। এখন আতঙ্কে ফিরে এসেছেন বাড়ি। মাসুমের মা উজিফা খাতুন বলেন, ‘পাশের বাড়ির ছেলেটা হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেল। আমাদের ছেলেকেও ওখানে পাঠিয়ে রাখতে ভয় করছে। জানি না সংসার চলবে কী করে, কিন্তু আগে ছেলের প্রাণটা থাক।’

এ বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, ‘শ্রমিকরা যদি রাজ্য শ্রমিক বোর্ডে নাম নথিভুক্ত করে কাজে যেতেন, তাহলে এমন ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত তথ্য মিলত। প্রশাসন চেষ্টা করছে। আমরা পাশে আছি।’

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মহেশতলার ঘটনায় উৎকণ্ঠায় পরিবার, আতঙ্কে পরিযায়ী শ্রমিকেরা

আপডেট : ৮ জুন ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম প্রতিবেদক, ইসলামপুরঃ মহেশতলার  একটি জিন্স কারখানা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ইসলামপুরের চোদ্দ বছরের কিশোরটি কোথায়? এই প্রশ্ন এখন গোটা এলাকায় তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়েছে। দশদিন কেটে গেলেও কোনও খোঁজ নেই ওই নাবালকের। পরিবার, প্রতিবেশী, এলাকার মানুষ কেউই আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছেন না। পুলিশের তল্লাশি চলছে ঠিকই, কিন্তু স্পষ্ট কোনও তথ্য এখনও হাতে আসেনি। নিখোঁজ কিশোর ইসলামপুর মহকুমার মাটিকুন্ডা এলাকার বাসিন্দা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সে। সংসারে অভাব ঘোচাতে কয়েকমাস আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় জিন্স কারখানায় কাজে যোগ দেয়। অভিযোগ, কারখানায় মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে মারধর করা হয় এবং তারপর থেকেই সে নিখোঁজ।

পরিবারের দাবি, কিশোরটিকে বেধড়ক মারধর করে আটকে রাখা হয়েছিল। তারপরে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কেউ জানে না। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও ভিডিয়ো ফুটেজ, কললিস্ট বা কারখানার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জবাব মেলেনি। নিখোঁজ কিশোরের মা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘আমার ছেলেকে খুঁজে দিন। সে কোথায় গেল? মারা গেল না বেঁচে আছে, কিছুই জানি না। ওর কোনও খবর তো দিন!’ বাবা বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। পেটের দায়ে ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম। এখন আমাদের বুকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে।’

ঘটনার জেরে রবিবার ইসলামপুরের মাটিকুন্ডায় রাস্তা অবরোধ করে স্থানীয় বাসিন্দারা। টায়ার জ্বালিয়ে চলে বিক্ষোভ। তাঁদের দাবি, নিখোঁজ কিশোরকে অবিলম্বে খুঁজে আনতে হবে, না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা। এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে গোটা ইসলামপুর মহকুমা জুড়ে। শ’য়ে শ’য়ে পরিযায়ী শ্রমিক ভিনরাজ্য থেকে কাজ ছেড়ে ফিরে আসছেন। আতঙ্কে ভুগছেন তাঁদের পরিবারও। অনেকেই বলছেন, ‘পেট চালিয়ে নেব, কিন্তু ছেলেকে আর কাজে পাঠাব না।’ পাটাগোড়ার বুধু মুহাম্মদ, মাটিকুন্ডার মাসুম রেজা এঁরা সকলেই কলকাতায় জিন্স কারখানায় কাজ করতেন। এখন আতঙ্কে ফিরে এসেছেন বাড়ি। মাসুমের মা উজিফা খাতুন বলেন, ‘পাশের বাড়ির ছেলেটা হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেল। আমাদের ছেলেকেও ওখানে পাঠিয়ে রাখতে ভয় করছে। জানি না সংসার চলবে কী করে, কিন্তু আগে ছেলের প্রাণটা থাক।’

এ বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, ‘শ্রমিকরা যদি রাজ্য শ্রমিক বোর্ডে নাম নথিভুক্ত করে কাজে যেতেন, তাহলে এমন ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত তথ্য মিলত। প্রশাসন চেষ্টা করছে। আমরা পাশে আছি।’