কাশ্মীরি-কন্নড় প্রথম ফিচার ফিল্ম, উপত্যকায় সিনেশিল্প পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশা

- আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার
- / 28
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: “উদ্দেশ্য ছিল একটি মানসম্পন্ন সিনেমা উপহার দেওয়া এবং আঞ্চলিক সিনেমার প্রচার করা। এটি সময়ের প্রয়োজন কারণ বছরের পর বছর ধরে সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল এবং কয়েক দশক ধরে শিল্পীদের প্রায় কিছুই করার ছিল না। আঞ্চলিক সিনেমা মানুষকে সংযুক্ত করার একমাত্র মাধ্যম। আমাদের সংস্কৃতির একটি সংবেদনশীল শব্দ হরমুখ এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমরা দুটি ভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভাষা—কাশ্মীরি এবং কন্নড়কে একত্রিত করার চেষ্টা করেছি। ভারত বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভাষা নিয়ে গঠিত হওয়ায় এই জাতীয় প্রচেষ্টার বিশাল সুযোগ রয়েছে। কাশ্মীর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হলেও আমরা একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে কাশ্মীরের জনগণ শান্তিপ্রিয়,” বুধবার শ্রীনগরের আইনক্স মাল্টিপ্লেক্সে প্রিমিয়ারে প্রথম দ্বিভাষিক ফিচার ফিল্ম হরমুখের প্রযোজক এবং প্রধান অভিনেতা ডঃ আয়াশ আরিফ একথা বলেন।
কর্ণাটকের অভিনেতাদের মধ্যে রয়েছেন হারমুকের ভূমিকায় সোনাল, প্রবীণ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা টি এস নাগভরণ এবং সীতা খোটে এবং কাশ্মীরের অভিনেতাদের মধ্যে রয়েছেন আয়াশ আরিফ, প্রযোজক এবং প্রধান অভিনেতা মুস্তাক ওয়ানি এবং অভিনেতা জি এম ওয়ানি, অঞ্জু মাট্টো, জাভেদ খান, ইমরান ফারুক, মোহাম্মদ শহীদ এবং নিশু শর্মা। চিত্রনাট্য লিখেছেন এম এস রমেশ এবং সংলাপ করেছেন রেখা রানী। গল্প, পরিচালনা এবং সিনেমাটোগ্রাফির কৃতিত্ব অশোক কাশ্যপ কে।
কাশ্মীরে, বিশেষত গঙ্গাবালের আশেপাশের উঁচু পাহাড়ে শুটিং করা এই ফিচার ফিল্মটি কর্ণাটকের সুপরিচিত পরিচালক অশোক কাশ্যপ কে এবং উভয় অঞ্চলের প্রযোজক ও প্রযুক্তিবিদরা সিনেমাটি তৈরি করেছেন। গত ২৭ মে শ্রীনগরের টেগোর হলে ট্রেলার, গান ও পোস্টার উন্মোচনের মধ্য দিয়ে ছবিটির উদ্বোধন করা হয়। সিনেমাটিকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গিয়েছে। চলচ্চিত্র, থিয়েটার, শিল্প ও সংস্কৃতির সাথে যুক্ত প্রায় শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ডঃ ফারুক আবদুল্লাহ চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ারে উপস্থিতি ছিলেন। আয়াশ আরিফের কথায়, ছবিটি শেষ করতে এক বছর সময় লেগেছে। যা দুটি ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি এবং অঞ্চলের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ কাশ্মীর এবং অন্যটি কর্ণাটকের দুটি পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে থিয়েটার এবং দূরদর্শনের সাথে জড়িত থাকার জন্য আয়াশ আরিফ কাশ্মীরে একটি ঘরোয়া নাম। তিনি কাশ্মীরের আদিবাসী ফোক থিয়েটার এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পিএইচডি করেছেন এবং লেখক, সাংবাদিক, প্রযোজক, পরিচালক এবং অভিনেতা হিসাবে কাজ করেছেন। শ্রীনগরে জন্মগ্রহণকারী আয়াশ আরিফ ১৯৭৩-৭৪ সালে থিয়েটার রেপার্টরি কোর্স করেন এবং ১৯৭৪ সালে শ্রীনগর দূরদর্শনে ভর্তি হন। তিনি ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬ সালে জে অ্যান্ড কে একাডেমি অফ আর্ট, কালচার অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজেস থেকে সেরা অভিনেতার পুরস্কার হিসাবে প্রশংসা পেয়েছিলেন। চারি ট্রুচ এবং গোলাম বেগম বাদশার মতো তাঁর কাজগুলি তাঁর পরিচালনা জীবনে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। যা তাকে ২০০১-২০০২ সালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেছিল। ২০০৯ সালে তার টেলিফিল্ম “হাব্বা খাতুন” তাকে সেরা পরিচালকের পুরস্কার এনে দেয় এবং ২০১০ সালে “আটওয়াস” নামে আরেকটি টেলিফিল্মের জন্য তিনি সেরা কৃতিত্বের পুরস্কার অর্জন করেন। সময়ের সাথে সাথে, আয়াশ আরিফ ৩০০ টিরও বেশি ডকুমেন্টারি ফিল্ম, টিভি ফিল্ম, টেলি-সিরিয়াল, সংগীত প্রোগ্রাম এবং অপেরা তৈরি করেছেন। যা তার সীমাহীন সৃজনশীলতা এবং তার নৈপুণ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
দ্বিভাষিক চলচ্চিত্র হারমুখের মুক্তি কাশ্মীরে চলচ্চিত্রের পুনরুজ্জীবনের জন্য শিল্পীদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এর দশক পর্যন্ত বলিউড চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য এই উপত্যকাটি একটি প্রিয় স্থান ছিল। কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে থিয়েটার এবং টেলিভিশনের শুটিং এবং অন্যান্য শৈল্পিক কাজগুলি মুখ থুবড়ে। এই অশান্তিতে উপত্যকায় চালু প্রায় এক ডজন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে বিনোদন পিপাসু কাশ্মীরে সিনেমা সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে, কিন্তু স্বল্প সময়ের জন্য দু-একটি সিনেমা হল খোলা হলেও তেমন কোনো সাফল্য আসেনি। পরিস্থিতির উন্নতি এবং ২০২২ সালের অক্টোবরে বাটওয়ারায় আইনক্স মাল্টিপ্লেক্স খোলার সাথে সাথে কাশ্মীরে সিনেমার পুনরুজ্জীবনের আশা দেখিয়েছে। কাশ্মীরের বড় পর্দার সিনেমা হলের জন্যও জনগণ, বিশেষ করে তরুণদের জন্য খোলা থাকবে। ‘হরমুখ’ সিনেমার মুক্তির পর নতুন করে সিনেমা সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবিত হবে বলেই ধারণা ছবির নির্মাতাদের। সিনেমাটি দেখার পর এক নেটিজেন লিখেছেন, “হরমুখ বহু যুগ ধরে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং মানবিক সংযোগের প্রতি একটি মর্মস্পর্শী শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। যা আমাদের উপত্যকাকে দীর্ঘকাল ধরে সংজ্ঞায়িত করেছে। এমন এক সময়ে যখন কাশ্মীর সম্পর্কে আখ্যান প্রায়শই মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়, তখন এই চলচ্চিত্রটি সহানুভূতি, বন্ধুত্ব, আতিথেয়তা এবং সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যের আসল গল্পটি উপস্থাপন করার সাহস দেখিয়েছে।”