০৮ জুন ২০২৫, রবিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদে বাড়ি ফিরতে নাস্তানাবুদ দুরের জেলার মানুষজন, বিশেষ ট্রেন-বাসের ব্যবস্থা কেন নয়, প্রশ্ন আমজনতার

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার
  • / 47

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ শনিবার দেশজুড়ে পালিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। ইসলাম ধর্মের অন্যতম পবিত্র উৎসব ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ভিনরাজ্যে কর্মরত বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক, চাকুরিজীবী, পড়ুয়ারা ফিরে আসছেন নিজের গ্রামে ঈদ উৎসবে শামিল হওয়ার জন্য।

বিশেষ করে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর-সহ উত্তরবঙ্গের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন কারনেই কলকাতা-সহ অন্য রাজ্যে থাকেন। কুরবানির ঈদের প্রাক্কালে  কয়েকদিন ধরেই বাড়ি ফেরার জন্য যাত্রীদের ভিড় দেখা গিয়েছে হাওড়া, শিয়ালদহ, কলকাতা স্টেশনের পাশাপাশি ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে। শুক্রবারও দেখা গেল একই পরিস্থিতি। সাধারণ কামরায় ওঠার জন্য ঠেলাঠেলি করেও অনেকে ট্রেনে উঠতে পারছে না।

ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে নামছেন বিপুল সংখ্যক যাত্রী। হাওড়া-শিয়ালদহ এবং কলকাতা স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটের দুরপাল্লার নির্ধারিত ট্রেনগুলিতে গত কয়েকদিন ধরেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড।

বিশেষ করে উত্তরবঙ্গগামী বিভিন্ন মেল-এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্রীম রিজার্ভেশন টিকিট না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। ঈদের সময় পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর দাবিও জানান যাত্রীরা। বেঙ্গালুরু আইটি সেক্টরে চাকরি করেন উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার এলাকার বাসিন্দা সাজিদ হাসান।

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলের বিমানে কলকাতায় এসে পৌঁছেছি। ইচ্ছে ছিল বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরে শুক্রবার গ্রামের মসজিদে জুমার নামায আদায় করব। কিন্তু, প্রায় একমাস আগেই ট্রেনের রিজার্ভেশন টিকিট কাটতে গিয়েও কনফার্ম টিকিট পাইনি। এ দিকে বেসরকারি নাইট বাসগুলি গলা কাটা ভাড়া চাইছে। যাত্রীদের কথা ভেবেই রেল দফতরের উচিত ঈদের সময় কয়েকদিন অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেন চালানো।’

একই ধরণের অভিযোগ মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা সাব্বির আহমেদের। চাকুরিসূত্রে ছত্তিশগড়ের রাইপুরে কর্মরত সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অমৃত ভারত প্রকল্পে স্টেশনগুলির আধুনিকিকরণ হচ্ছে, সে তো ভাল কথা। কিন্তু, ঈদ-কুরবানির মত গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের প্রাক্কালে যাত্রী পরিষেবা স্মুথলি রাখতে রেলের উচিত বাড়তি ট্রেন চালানো।’

শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনের গাদাগাদি ভিড় এড়াতে যাত্রীদের হাজির হচ্ছেন ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডের সরকারি-বেসরকারি দূরপাল্লার বাসের টিকিট বুকিং কাউন্টারে। ঈদের প্রাক্কালে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ সামাল দিতে একদিকে যেমন হিমসিম খাচ্ছে বাস পরিবহণ সংস্থাগুলি, তেমনি যাত্রীদের বাস টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার নামে অতিরিক্ত ভাড়া চেয়ে সুযোগের সদ-ব্যবহার করেছে কিছু অসাধু দালাল।

এ দিন ধর্মতলায় ‘শ্যামলী পরিবহণ’, ‘এক্সপ্রেস লাইন’, ‘ইজি রাইড’ সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাস পরিবহণ সংস্থার কর্মীরা জানান, বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব এবং পর্যটনের মরসুমে বাসে টিকিটের দাম অনেকটা বিমানের ভাড়ার মতই ওঠানামা করে। সেই সঙ্গেই ধর্মতলা চত্ত্বরে থাকা দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

শুক্রবার প্রতিবেদককে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা খাইরুল হক বলেন, আমার বন্ধু কিসমত আলিকে চিৎপুরে কলকাতা স্টেশনে ট্রেনে তুলতে পারিনি। বাধ্য হয়ে আমরা কলকাতাতেই থাকছি। ঈদে বাড়ি হওয়া হয়ত আমাদের কিসমতে নেই। একই অবস্থা মালদার কুমেদপুরের বাসিন্দা ও কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিক আরমান ইসলাম বলেন, আমাদের হস্টেলের প্রায় ৫০জন বাড়ি যেতে পারছি না। ট্রেনে টিকিট পাইনি। জেনারেল কামরায় ওঠার চেষ্টা করেও ফিরতে হয়েছে। ঈদের পরেই পরীক্ষা আছে তাই কষ্ট করে বাসে করে বাড়ি গিয়ে ফের কলকাতা আসার পর হয়ত  পরীক্ষা দেওয়ার অবস্থা থাকবে না বলেও মন্তব্য করে অন্য এক হস্টেলের আবাসিক হাসিবুর রহমান। সবার মুখেই প্রশ্ন, সরকার ট্রেন বা বাসের বন্দোবস্ত করতেই পারে। আসলে মানসিকতা নেই!

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ঈদে বাড়ি ফিরতে নাস্তানাবুদ দুরের জেলার মানুষজন, বিশেষ ট্রেন-বাসের ব্যবস্থা কেন নয়, প্রশ্ন আমজনতার

আপডেট : ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ শনিবার দেশজুড়ে পালিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। ইসলাম ধর্মের অন্যতম পবিত্র উৎসব ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ভিনরাজ্যে কর্মরত বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক, চাকুরিজীবী, পড়ুয়ারা ফিরে আসছেন নিজের গ্রামে ঈদ উৎসবে শামিল হওয়ার জন্য।

বিশেষ করে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর-সহ উত্তরবঙ্গের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন কারনেই কলকাতা-সহ অন্য রাজ্যে থাকেন। কুরবানির ঈদের প্রাক্কালে  কয়েকদিন ধরেই বাড়ি ফেরার জন্য যাত্রীদের ভিড় দেখা গিয়েছে হাওড়া, শিয়ালদহ, কলকাতা স্টেশনের পাশাপাশি ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে। শুক্রবারও দেখা গেল একই পরিস্থিতি। সাধারণ কামরায় ওঠার জন্য ঠেলাঠেলি করেও অনেকে ট্রেনে উঠতে পারছে না।

ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে নামছেন বিপুল সংখ্যক যাত্রী। হাওড়া-শিয়ালদহ এবং কলকাতা স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটের দুরপাল্লার নির্ধারিত ট্রেনগুলিতে গত কয়েকদিন ধরেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড।

বিশেষ করে উত্তরবঙ্গগামী বিভিন্ন মেল-এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্রীম রিজার্ভেশন টিকিট না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। ঈদের সময় পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর দাবিও জানান যাত্রীরা। বেঙ্গালুরু আইটি সেক্টরে চাকরি করেন উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার এলাকার বাসিন্দা সাজিদ হাসান।

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলের বিমানে কলকাতায় এসে পৌঁছেছি। ইচ্ছে ছিল বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরে শুক্রবার গ্রামের মসজিদে জুমার নামায আদায় করব। কিন্তু, প্রায় একমাস আগেই ট্রেনের রিজার্ভেশন টিকিট কাটতে গিয়েও কনফার্ম টিকিট পাইনি। এ দিকে বেসরকারি নাইট বাসগুলি গলা কাটা ভাড়া চাইছে। যাত্রীদের কথা ভেবেই রেল দফতরের উচিত ঈদের সময় কয়েকদিন অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেন চালানো।’

একই ধরণের অভিযোগ মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা সাব্বির আহমেদের। চাকুরিসূত্রে ছত্তিশগড়ের রাইপুরে কর্মরত সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অমৃত ভারত প্রকল্পে স্টেশনগুলির আধুনিকিকরণ হচ্ছে, সে তো ভাল কথা। কিন্তু, ঈদ-কুরবানির মত গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের প্রাক্কালে যাত্রী পরিষেবা স্মুথলি রাখতে রেলের উচিত বাড়তি ট্রেন চালানো।’

শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনের গাদাগাদি ভিড় এড়াতে যাত্রীদের হাজির হচ্ছেন ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডের সরকারি-বেসরকারি দূরপাল্লার বাসের টিকিট বুকিং কাউন্টারে। ঈদের প্রাক্কালে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ সামাল দিতে একদিকে যেমন হিমসিম খাচ্ছে বাস পরিবহণ সংস্থাগুলি, তেমনি যাত্রীদের বাস টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার নামে অতিরিক্ত ভাড়া চেয়ে সুযোগের সদ-ব্যবহার করেছে কিছু অসাধু দালাল।

এ দিন ধর্মতলায় ‘শ্যামলী পরিবহণ’, ‘এক্সপ্রেস লাইন’, ‘ইজি রাইড’ সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাস পরিবহণ সংস্থার কর্মীরা জানান, বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব এবং পর্যটনের মরসুমে বাসে টিকিটের দাম অনেকটা বিমানের ভাড়ার মতই ওঠানামা করে। সেই সঙ্গেই ধর্মতলা চত্ত্বরে থাকা দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

শুক্রবার প্রতিবেদককে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা খাইরুল হক বলেন, আমার বন্ধু কিসমত আলিকে চিৎপুরে কলকাতা স্টেশনে ট্রেনে তুলতে পারিনি। বাধ্য হয়ে আমরা কলকাতাতেই থাকছি। ঈদে বাড়ি হওয়া হয়ত আমাদের কিসমতে নেই। একই অবস্থা মালদার কুমেদপুরের বাসিন্দা ও কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিক আরমান ইসলাম বলেন, আমাদের হস্টেলের প্রায় ৫০জন বাড়ি যেতে পারছি না। ট্রেনে টিকিট পাইনি। জেনারেল কামরায় ওঠার চেষ্টা করেও ফিরতে হয়েছে। ঈদের পরেই পরীক্ষা আছে তাই কষ্ট করে বাসে করে বাড়ি গিয়ে ফের কলকাতা আসার পর হয়ত  পরীক্ষা দেওয়ার অবস্থা থাকবে না বলেও মন্তব্য করে অন্য এক হস্টেলের আবাসিক হাসিবুর রহমান। সবার মুখেই প্রশ্ন, সরকার ট্রেন বা বাসের বন্দোবস্ত করতেই পারে। আসলে মানসিকতা নেই!