১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিশ্বাসের প্রতীক সন্ধ্যা রাউত

মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুন সোনমের, অন্যদিকে ১৬ বছর ধরে স্বামীর ছবি বুকে আগলে অপেক্ষায় সন্ধ্যাদেবী

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 66

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুন করেছেন সোনম রঘুবংশী। বিয়ের ১০ দিনের মাথায় স্ত্রীর হাতে খুন স্বামী। বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্কে যুক্ত ছিলেন সোনম, এমনটাই অভিযোগ। প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন করেছেন সোনম, পুলিশ সূত্রে খবর।

মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুন সোনমের, অন্যদিকে ১৬ বছর ধরে স্বামীর ছবি বুকে আগলে অপেক্ষায় সন্ধ্যাদেবী

আরও পড়ুন: বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা মল্লকুস্তি!

সোনমের ঘটনাই প্রথম নয়, কিছুদিন আগে মীরাটে মুসকান রাস্তোগী তার মার্চেন্ট নেভি অফিসার স্বামী সৌরভ রাজপুতকে খুন করে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত ছিল মুসকান। মুসকানও প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন করেছিল।

আরও পড়ুন: দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় দাম না পাওয়ায় বাগানে নস্ট হচ্ছে টমেটো

মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুন সোনমের, অন্যদিকে ১৬ বছর ধরে স্বামীর ছবি বুকে আগলে অপেক্ষায় সন্ধ্যাদেবী

আরও পড়ুন: শিশু সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা শিবির সুন্দরবনে

বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিয়ে এবং বিবাহিত সম্পর্ক যেখান প্রশ্ন চিহ্নের মুখে সেখানে সম্পর্কের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং ভরসা রাখতে শেখাচ্ছেন সন্ধ্যা রাউত। ১৬ বছর ধরে নিখোঁজ তাঁর স্বামী গৌতম রাউত। ১৬ বছর ধরে স্বামীর ছবি বুকে আগলে জীবন কাটাচ্ছেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন স্বামীর বাড়ির ফেরার অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

“সাতপাক ঘুরে অগ্নিকে সাক্ষী রেখে যে সিঁদুর আমাকে আমার স্বামী সিঁথিতে পরিয়ে দিয়েছিলেন তা কখনও মিথ্যা হতে পারে না”—অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেন সন্ধ্যা রাউত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থানার হেড়োভাঙ্গা গ্রামের কাছারিপাড়ার বাসিন্দা সন্ধ্যা রাউত। তাঁর স্বামী গৌতম রাউত একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে নিখোঁজ। সৎ, ভদ্র, গৌতম রাউত ছিলেন মিষ্টভাষী মানুষ। হেড়োভাঙ্গা বাজারে একটি পানের দোকান ছিল তাঁর।এক ছেলে ও মেয়ে সূর্য ও চন্দ্রা এবং স্ত্রীকে নিয়ে ছিল তাঁর ছোট্ট সাজানো সংসার। আয় ছিল যৎ সামান্য তবে তা দিয়েই সংসার সাজিয়ে তুলেছিলেন। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন।

একদিন সব ওলট-পালট হয়ে গেল। এক ভোরবেলায় বাজারে গিয়ে আর বাড়ি ফিরলেন না। ২০০৯ সালের কোনও এক সকালে নিখোঁজ হন তিনি। এত বছর পরেও স্বামীর খোঁজ পাননি সন্ধ্যাদেবী। প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা মেলেনি।

সন্ধ্যাদেবী দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন “আমার স্বামী নিশ্চিত বেঁচেই রয়েছে। একদিন না একদিন ফিরে আসবেই এ আমার বিশ্বাস।তা না হলে, শাঁখা সিঁদুর মিথ্যা হয়ে যাবে। স্বামীর পথ চেয়ে আমরণ অপেক্ষা করব।” এই কথা বলতে বলতে অঝোলে কেঁদে ফেলেছিলেন সন্ধ্যাদেবী।

সন্ধ্যাদেবীর এই প্রতিজ্ঞার কথা শুনে বিশিষ্ট সমাজসেবী বিনয় ভকত জানিয়েছেন “দীর্ঘ ১৬ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে সন্তানদের বড় করেছেন। আমরণ স্বামীর পথ চেয়ে চাতকের মতো অপেক্ষায় বসে আছেন, অকল্পনীয় ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে কী মায়ের মতো সন্ধ্যাদেবী যেন বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্মায়”।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিশ্বাসের প্রতীক সন্ধ্যা রাউত

মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুন সোনমের, অন্যদিকে ১৬ বছর ধরে স্বামীর ছবি বুকে আগলে অপেক্ষায় সন্ধ্যাদেবী

আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুন করেছেন সোনম রঘুবংশী। বিয়ের ১০ দিনের মাথায় স্ত্রীর হাতে খুন স্বামী। বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্কে যুক্ত ছিলেন সোনম, এমনটাই অভিযোগ। প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন করেছেন সোনম, পুলিশ সূত্রে খবর।

মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুন সোনমের, অন্যদিকে ১৬ বছর ধরে স্বামীর ছবি বুকে আগলে অপেক্ষায় সন্ধ্যাদেবী

আরও পড়ুন: বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা মল্লকুস্তি!

সোনমের ঘটনাই প্রথম নয়, কিছুদিন আগে মীরাটে মুসকান রাস্তোগী তার মার্চেন্ট নেভি অফিসার স্বামী সৌরভ রাজপুতকে খুন করে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত ছিল মুসকান। মুসকানও প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন করেছিল।

আরও পড়ুন: দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় দাম না পাওয়ায় বাগানে নস্ট হচ্ছে টমেটো

মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুন সোনমের, অন্যদিকে ১৬ বছর ধরে স্বামীর ছবি বুকে আগলে অপেক্ষায় সন্ধ্যাদেবী

আরও পড়ুন: শিশু সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা শিবির সুন্দরবনে

বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিয়ে এবং বিবাহিত সম্পর্ক যেখান প্রশ্ন চিহ্নের মুখে সেখানে সম্পর্কের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং ভরসা রাখতে শেখাচ্ছেন সন্ধ্যা রাউত। ১৬ বছর ধরে নিখোঁজ তাঁর স্বামী গৌতম রাউত। ১৬ বছর ধরে স্বামীর ছবি বুকে আগলে জীবন কাটাচ্ছেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন স্বামীর বাড়ির ফেরার অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

“সাতপাক ঘুরে অগ্নিকে সাক্ষী রেখে যে সিঁদুর আমাকে আমার স্বামী সিঁথিতে পরিয়ে দিয়েছিলেন তা কখনও মিথ্যা হতে পারে না”—অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেন সন্ধ্যা রাউত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থানার হেড়োভাঙ্গা গ্রামের কাছারিপাড়ার বাসিন্দা সন্ধ্যা রাউত। তাঁর স্বামী গৌতম রাউত একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে নিখোঁজ। সৎ, ভদ্র, গৌতম রাউত ছিলেন মিষ্টভাষী মানুষ। হেড়োভাঙ্গা বাজারে একটি পানের দোকান ছিল তাঁর।এক ছেলে ও মেয়ে সূর্য ও চন্দ্রা এবং স্ত্রীকে নিয়ে ছিল তাঁর ছোট্ট সাজানো সংসার। আয় ছিল যৎ সামান্য তবে তা দিয়েই সংসার সাজিয়ে তুলেছিলেন। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন।

একদিন সব ওলট-পালট হয়ে গেল। এক ভোরবেলায় বাজারে গিয়ে আর বাড়ি ফিরলেন না। ২০০৯ সালের কোনও এক সকালে নিখোঁজ হন তিনি। এত বছর পরেও স্বামীর খোঁজ পাননি সন্ধ্যাদেবী। প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা মেলেনি।

সন্ধ্যাদেবী দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন “আমার স্বামী নিশ্চিত বেঁচেই রয়েছে। একদিন না একদিন ফিরে আসবেই এ আমার বিশ্বাস।তা না হলে, শাঁখা সিঁদুর মিথ্যা হয়ে যাবে। স্বামীর পথ চেয়ে আমরণ অপেক্ষা করব।” এই কথা বলতে বলতে অঝোলে কেঁদে ফেলেছিলেন সন্ধ্যাদেবী।

সন্ধ্যাদেবীর এই প্রতিজ্ঞার কথা শুনে বিশিষ্ট সমাজসেবী বিনয় ভকত জানিয়েছেন “দীর্ঘ ১৬ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে সন্তানদের বড় করেছেন। আমরণ স্বামীর পথ চেয়ে চাতকের মতো অপেক্ষায় বসে আছেন, অকল্পনীয় ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে কী মায়ের মতো সন্ধ্যাদেবী যেন বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্মায়”।