২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাইকোর্টে দুই বিচারপতির সংঘাত, ‘আইনের মন্দিরে এইসব মানা যায় না’ মন্তব্য প্রধান বিচারপতি

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ৩০ জানুয়ারী ২০২৪, মঙ্গলবার
  • / 55

মোল্লা জসিমউদ্দিন: গত ২৫ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি বনাম ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেন এর নির্দেশনামা ঘিরে সংঘাতে সরগরম কলকাতা হাইকোর্ট। বিষয়টি পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এতদিন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও এবার এ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। এই ঘটনা ‘অত্যন্ত লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করলেন তিনি। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।মঙ্গলবার দুপুরে এজলাস ছেড়ে উঠে যাওয়ার আগে দুই বিচারপতির সংঘাত নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। তখন আদালতের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেনের মধ্যে আইনী সংঘাত ঘিরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ”এই পরিস্থিতির জন্য আমি দুঃখিত এবং একই সঙ্গে লজ্জিত। আইনের মন্দিরে এমনটা আশা করা যায় না।” দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাতের বিষটি প্রকাশ্যে আসার পরই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করে সুপ্রিম কোর্ট। মেডিক্যালে ভর্তি সংক্রান্ত মামলা হাতে নেয় শীর্ষ আদালত।

 

আরও পড়ুন: দিল্লিতে আটক পরিযায়ী শ্রমিকদের কি বাংলাদেশ পাঠানো হয়েছে?  কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রিপোর্ট চাইলো হাইকোর্ট 

হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, ”কলকাতা হাইকোর্টের একটা ঐতিহ্য আছে। এহেন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব ফেলছে। আমরা এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে।” পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যে তিনি সক্রিয় হবেন, সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেন প্রধান বিচারপতি। মঙ্গলবার এজলাস ছেড়ে বেরনোর সময় তিনি কথা বলেন এই ইস্যুতে। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম কোনও বিচারপতির নাম উল্লেখ করেননি এদিন। নাম না করেই প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, “এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয় এই ন্যায়ালয়ে। ভারতবর্ষের অন্যতম প্রধান হাইকোর্ট হিসেবে গন্য করা হয় এই হাইকোর্টকে। এই ঘটনা আগামী দিনে জনমানসে প্রভাব ফেলবে।”

আরও পড়ুন: এসএসসি মামলায় রাজ্যের স্বস্তি, মামলায় জরুরি হস্তক্ষেপে ‘না’ হাইকোর্টের, নিয়োগে রইল না বাধা

 

আরও পড়ুন: হাওড়ায় রামনবমী পালনে আয়োজকদের ‘কড়া শর্তাবলি’ দিল কলকাতা হাইকোর্ট

প্রধান বিচারপতি এদিন আশ্বাস দিয়েছেন, ঘটনার স্বাভাবিকত্ব ফিরিয়ে আনতে তিনি সক্রিয় হবেন।প্রসঙ্গত কলকাতা হাইকোর্ট দেশের সবথেকে পুরনো হাইকোর্ট। সিঙ্গল বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চের এই সংঘাত সেই আদালতে কার্যত নজিরবিহীন। বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায় মেডিক্যাল সংক্রান্ত মামলার নির্দেশনামায় বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। আবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন স্পেশাল বেঞ্চে বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার।তবে গত সোমবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কোনও বিচারপতি সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে না’।

 

গত সোমবার রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল তাঁর সওয়ালে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে মন্তব্য করতে গেলে, থামিয়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না, একজন হাইকোর্টের বিচারপতি সম্পর্কে কথা বলা হচ্ছে। এতে হাইকোর্টের গরিমা ক্ষুন্ন হতে পারে’। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচার্য মামলাগুলির মধ্যে প্রাথমিক সংক্রান্ত মামলার বেঞ্চ পরিবর্তন করা হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের বেঞ্চ কে।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

হাইকোর্টে দুই বিচারপতির সংঘাত, ‘আইনের মন্দিরে এইসব মানা যায় না’ মন্তব্য প্রধান বিচারপতি

আপডেট : ৩০ জানুয়ারী ২০২৪, মঙ্গলবার

মোল্লা জসিমউদ্দিন: গত ২৫ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি বনাম ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেন এর নির্দেশনামা ঘিরে সংঘাতে সরগরম কলকাতা হাইকোর্ট। বিষয়টি পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এতদিন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও এবার এ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। এই ঘটনা ‘অত্যন্ত লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করলেন তিনি। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।মঙ্গলবার দুপুরে এজলাস ছেড়ে উঠে যাওয়ার আগে দুই বিচারপতির সংঘাত নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। তখন আদালতের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেনের মধ্যে আইনী সংঘাত ঘিরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ”এই পরিস্থিতির জন্য আমি দুঃখিত এবং একই সঙ্গে লজ্জিত। আইনের মন্দিরে এমনটা আশা করা যায় না।” দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাতের বিষটি প্রকাশ্যে আসার পরই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করে সুপ্রিম কোর্ট। মেডিক্যালে ভর্তি সংক্রান্ত মামলা হাতে নেয় শীর্ষ আদালত।

 

আরও পড়ুন: দিল্লিতে আটক পরিযায়ী শ্রমিকদের কি বাংলাদেশ পাঠানো হয়েছে?  কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রিপোর্ট চাইলো হাইকোর্ট 

হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, ”কলকাতা হাইকোর্টের একটা ঐতিহ্য আছে। এহেন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব ফেলছে। আমরা এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে।” পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যে তিনি সক্রিয় হবেন, সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেন প্রধান বিচারপতি। মঙ্গলবার এজলাস ছেড়ে বেরনোর সময় তিনি কথা বলেন এই ইস্যুতে। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম কোনও বিচারপতির নাম উল্লেখ করেননি এদিন। নাম না করেই প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, “এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয় এই ন্যায়ালয়ে। ভারতবর্ষের অন্যতম প্রধান হাইকোর্ট হিসেবে গন্য করা হয় এই হাইকোর্টকে। এই ঘটনা আগামী দিনে জনমানসে প্রভাব ফেলবে।”

আরও পড়ুন: এসএসসি মামলায় রাজ্যের স্বস্তি, মামলায় জরুরি হস্তক্ষেপে ‘না’ হাইকোর্টের, নিয়োগে রইল না বাধা

 

আরও পড়ুন: হাওড়ায় রামনবমী পালনে আয়োজকদের ‘কড়া শর্তাবলি’ দিল কলকাতা হাইকোর্ট

প্রধান বিচারপতি এদিন আশ্বাস দিয়েছেন, ঘটনার স্বাভাবিকত্ব ফিরিয়ে আনতে তিনি সক্রিয় হবেন।প্রসঙ্গত কলকাতা হাইকোর্ট দেশের সবথেকে পুরনো হাইকোর্ট। সিঙ্গল বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চের এই সংঘাত সেই আদালতে কার্যত নজিরবিহীন। বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায় মেডিক্যাল সংক্রান্ত মামলার নির্দেশনামায় বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। আবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন স্পেশাল বেঞ্চে বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার।তবে গত সোমবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কোনও বিচারপতি সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে না’।

 

গত সোমবার রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল তাঁর সওয়ালে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে মন্তব্য করতে গেলে, থামিয়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না, একজন হাইকোর্টের বিচারপতি সম্পর্কে কথা বলা হচ্ছে। এতে হাইকোর্টের গরিমা ক্ষুন্ন হতে পারে’। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচার্য মামলাগুলির মধ্যে প্রাথমিক সংক্রান্ত মামলার বেঞ্চ পরিবর্তন করা হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের বেঞ্চ কে।