০৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুরবানির পশু কেনায় জঙ্গি তকমা, গালিগালাজ

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৯ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 18

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  কুরবানির পশু কিনে আনায় শুনতে হয়েছে প্রতিবেশীদের কটূক্তি। কেউ কেউ হনুমান চালিশা পাঠ করেছেন তো কেউ আবার ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, পশু ক্রয়কারী ওই মুসলিম পরিবারকে জঙ্গি অপবাদও দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি মুম্বইয়ের মীরা ভাইন্দর এলাকার একটি হাউজিং কমপ্লেক্সে ঘটেছে। এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল, দেশজুড়ে মুসলিমদের প্রতি কি পরিমাণ বিদ্বেষ তৈরি করা হয়েছে।

ঘটনাটির সূত্রপাত মঙ্গলবার। মহসিন শেখ নামে ওই কমপ্লেক্সেরই এক বাসিন্দা ঈদ-উল-আযহায় কুরবানির উদ্দেশ্যে দুটি ছাগল কিনে এনেছিলেন। তা দেখেই খ্যেপে যায় আবাসনের অন্যান্য হিন্দু প্রতিবেশীরা। ওই মুসলিম পরিবারকে তারা ‘জঙ্গি’ অপবাদ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের উপর হামলা চালানোর চেষ্টাও করে। ওই মুসলিম পরিবারকে ‘একঘরে’ করতে তারা একত্রিত হয়ে আবাসন চত্বরে হনুমান চালিসা পাঠ করতে শুরু করে। আবাসন চত্বরেই চলে মুর্হুমুর্হু ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান।

আরও পড়ুন: যৌন নির্যাতনে সাজাপ্রাপ্ত ক্যাথলিক যাজকের মৃত্যু

মহসিন জানান, প্রতি বছর তিনি কুরবানির জন্য ছাগল কিনে থাকেন। আবাসন চত্বরের একপাশে সেগুলি রাখারও ব্যবস্থা করা হত। এই প্রথমবার পশু রাখতে গিয়ে এভাবে বাধার মুখে পড়তে হল। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হল। ‘জঙ্গি’ তকমা দেওয়া হল।

আরও পড়ুন: কর্মক্ষেত্রে মানসিক নির্যাতনের শিকার ৫৮ কোটি মানুষ !

মহসিনের মতে, তিনি সোসাইটির কাছে ছাগল রাখার জন্য জায়গা চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে জায়গা দেওয়া হয়নি। সেজন্য মঙ্গলবার ভোররাতে ছাগল দুটি নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাতেও প্রতিবেশীরা আপত্তি জানাচ্ছে। মহসিন আরও জানান, তাঁরা কখনও সোসাইটি চত্বরে ছাগল কুরবানি করেন না। কসাইখানা বা ছাগলের দোকানে কুরবানি করে থাকেন।

আরও পড়ুন: শিশু নির্যাতন: ৫ বছরে ৫০ হাজারের বেশি, অভিযোগ শিশু সুরক্ষা কমিশনে

এদিকে, কুরবানির পশু কিনে আনা নিয়ে সোসাইটির বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে পুলিশ ডাকা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এই প্রসঙ্গে সোসাইটির এক বাসিন্দা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সোসাইটিতে একটি নিয়ম চালু করা হয়েছিল যে, কোনও গবাদি পশুকে সোসাইটির ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু, মুসলিম পরিবারটি তা লঙ্ঘন করে ছাগল দু’টি ভিতরে নিয়ে আসে। আমরা এটির বিরোধিতা করছি। এসবের অনুমতি দেওয়া হবে না।’

পুলিশ অবশ্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে ‘মধ্যস্ততা’ করে বলেছে, আবাসনের বাসিন্দাদের অনুভূতি বিবেচনা করে ছাগলগুলিকে বাইরে রাখতে হবে। যদিও এই ঘটনায় মুসলিম পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় পালটা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সেখানে তারা বলেছে, ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষের তরফে আবাসন প্রাঙ্গনে ছাগল রাখার জন্য জায়গা বরাদ্দ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে সেখানে হটাৎ নির্মাণকাজ শুরু হলে সেই স্থানে আর পশু রাখা যাবে না বলে জানানো হয়। সেজন্য তারা বাড়িতে পশু কিনে এনে রেখেছিল। আর এজন্য তাদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। হেনস্থা করা হচ্ছে। গালিগালাজ করা হচ্ছে।

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কুরবানির পশু কেনায় জঙ্গি তকমা, গালিগালাজ

আপডেট : ২৯ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  কুরবানির পশু কিনে আনায় শুনতে হয়েছে প্রতিবেশীদের কটূক্তি। কেউ কেউ হনুমান চালিশা পাঠ করেছেন তো কেউ আবার ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, পশু ক্রয়কারী ওই মুসলিম পরিবারকে জঙ্গি অপবাদও দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি মুম্বইয়ের মীরা ভাইন্দর এলাকার একটি হাউজিং কমপ্লেক্সে ঘটেছে। এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল, দেশজুড়ে মুসলিমদের প্রতি কি পরিমাণ বিদ্বেষ তৈরি করা হয়েছে।

ঘটনাটির সূত্রপাত মঙ্গলবার। মহসিন শেখ নামে ওই কমপ্লেক্সেরই এক বাসিন্দা ঈদ-উল-আযহায় কুরবানির উদ্দেশ্যে দুটি ছাগল কিনে এনেছিলেন। তা দেখেই খ্যেপে যায় আবাসনের অন্যান্য হিন্দু প্রতিবেশীরা। ওই মুসলিম পরিবারকে তারা ‘জঙ্গি’ অপবাদ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের উপর হামলা চালানোর চেষ্টাও করে। ওই মুসলিম পরিবারকে ‘একঘরে’ করতে তারা একত্রিত হয়ে আবাসন চত্বরে হনুমান চালিসা পাঠ করতে শুরু করে। আবাসন চত্বরেই চলে মুর্হুমুর্হু ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান।

আরও পড়ুন: যৌন নির্যাতনে সাজাপ্রাপ্ত ক্যাথলিক যাজকের মৃত্যু

মহসিন জানান, প্রতি বছর তিনি কুরবানির জন্য ছাগল কিনে থাকেন। আবাসন চত্বরের একপাশে সেগুলি রাখারও ব্যবস্থা করা হত। এই প্রথমবার পশু রাখতে গিয়ে এভাবে বাধার মুখে পড়তে হল। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হল। ‘জঙ্গি’ তকমা দেওয়া হল।

আরও পড়ুন: কর্মক্ষেত্রে মানসিক নির্যাতনের শিকার ৫৮ কোটি মানুষ !

মহসিনের মতে, তিনি সোসাইটির কাছে ছাগল রাখার জন্য জায়গা চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে জায়গা দেওয়া হয়নি। সেজন্য মঙ্গলবার ভোররাতে ছাগল দুটি নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাতেও প্রতিবেশীরা আপত্তি জানাচ্ছে। মহসিন আরও জানান, তাঁরা কখনও সোসাইটি চত্বরে ছাগল কুরবানি করেন না। কসাইখানা বা ছাগলের দোকানে কুরবানি করে থাকেন।

আরও পড়ুন: শিশু নির্যাতন: ৫ বছরে ৫০ হাজারের বেশি, অভিযোগ শিশু সুরক্ষা কমিশনে

এদিকে, কুরবানির পশু কিনে আনা নিয়ে সোসাইটির বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে পুলিশ ডাকা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এই প্রসঙ্গে সোসাইটির এক বাসিন্দা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সোসাইটিতে একটি নিয়ম চালু করা হয়েছিল যে, কোনও গবাদি পশুকে সোসাইটির ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু, মুসলিম পরিবারটি তা লঙ্ঘন করে ছাগল দু’টি ভিতরে নিয়ে আসে। আমরা এটির বিরোধিতা করছি। এসবের অনুমতি দেওয়া হবে না।’

পুলিশ অবশ্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে ‘মধ্যস্ততা’ করে বলেছে, আবাসনের বাসিন্দাদের অনুভূতি বিবেচনা করে ছাগলগুলিকে বাইরে রাখতে হবে। যদিও এই ঘটনায় মুসলিম পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় পালটা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সেখানে তারা বলেছে, ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষের তরফে আবাসন প্রাঙ্গনে ছাগল রাখার জন্য জায়গা বরাদ্দ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে সেখানে হটাৎ নির্মাণকাজ শুরু হলে সেই স্থানে আর পশু রাখা যাবে না বলে জানানো হয়। সেজন্য তারা বাড়িতে পশু কিনে এনে রেখেছিল। আর এজন্য তাদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। হেনস্থা করা হচ্ছে। গালিগালাজ করা হচ্ছে।