১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব ভারতীতে কালী আরাধনার নিয়ে ‘লেকচার সিরিজ’, সভা ২৫ জুলাই, তুঙ্গে বিতর্ক

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২২ জুলাই ২০২২, শুক্রবার
  • / 18

দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন :  বিশ্বভারতীতে মহর্ষির ব্রহ্মোপসনার ব্রাহ্মমন্দির শুধুমাত্র একেশ্বরবাদের কথা নয়, সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে। তাই এখানে তুলনামূলক ধর্ম নিয়ে চর্চা বা পড়ার সুযোগ  আছে। কোনও মূর্তি পুজো হয় না। এমনকি  সরস্বতী পুজোও হয় না। সেখানে  কালী আরাধনার ধারণা’ নিয়ে একটি ‘লেকচার সিরিজ’-এর আয়োজন করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজস্ব ওয়েবসাইটে ৫২তম লেকচার সিরিজের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্বভারতী।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, আগামী ২৫ জুলাই এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনায় থাকবেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা কলকাতা আলমবাজার মঠের রামকৃষ্ণ  আশ্রমের (মিশন নয়) শ্রীশারদাত্মানন্দ মহারাজের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সেমিনার হলে এই সভার আয়োজনের খবর হতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে । কারণ বিশ্বভারতী তন্ত্রপীঠ বা তন্ত্র  সাধন ক্ষেত্র নয়। মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের দলিলে নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনার কথা বলে গেছেন। কোন মূর্তি পুজো বিষয়ক আলোচনা সেই ভাবনার বিরোধী ।

আরও পড়ুন: হাজিরা এড়ালেন প্রাক্তন উপাচার্য, কোর্টের ভৎর্সনার মুখে বিদ্যুৎ

 

আরও পড়ুন: বিশ্বভারতী:  ছাত্রকে জাতি বৈষম্যমূলক মন্তব্যে ধৃত অধ্যাপকের জেল হেফাজতের নির্দেশ

ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর সংবাদ মাধ্যমের কাছে এর প্রতিবাদে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায়, বিশ্বভারতী এবার তলানিতে ঠিকেছে, আর তাকে উদ্ধার করা যাবে না।

আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীঃ বীরভূম পুলিশ সুপারকে তলব হাইকোর্টের

প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজ কলি সেন বলেন, এন আই আর এফে বিশ্বভারতী একশোর মধ্যে শেষের দিক থেকে দুই নম্বরে। ওনার উচিৎ এসব বিতর্কিত বিষয়ে আলোচনা না করে বিশ্বভারতীর মান কেন এত খারাপ হলো, সে সব নিয়ে ভাবা। এসব ছেড়ে পড়াশোনার দিকে নজর দিন। বিশ্বভারতী স্বপক্ষে জন সংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যাইয়ের বক্তব্য, এই আলোচনা একাধারে ধার্মিক, শিক্ষাবিষয়ক, বৌদ্ধিক আলোচনা। কোনও মূর্তি পুজো নয়।

আরেক প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আলোচনা হতে পারে। যদিও জানি না বাল্মীকি প্রতিভার কালি সাধন ছেড়ে সারস্বত বন্দনা কিনা। না শুধুই ধর্মীয় গোঁড়ামি।  যাইহোক এই  আলোচনার সময় নির্বাচন এবং উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। উচিৎ ছিল বিশ্বভারতীর মান নিয়ে ভাবনা রাখা।

বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন ভিবিউফার সম্পাদক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, বিশ্বভারতী কালিসাধন ক্ষেত্র নয়। তবে বর্তমান উপাচার্য মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনাকে শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। আশঙ্কা করছি এবার থেকে কাঁচ ঘর উপাসনা গৃহে হয়তো তন্ত্রসাধনা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কাপালিক নিয়োগের পথ প্রস্তুত?

কিন্তু উপাচার্য হঠাৎ এমন বিষয় কেন রাখতে গেলেন? এর আগে বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘সিএএ-এনআরসি’ নিয়ে আলোচনা, ‘বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির খারাপ ফলের কারণ’ প্রভৃতি বিষয়ে লেকচার সিরিজ আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে চূড়ান্ত সমালোচিত হয়ে বেশ কয়েকটি লেকচার বাতিল করতেও বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। আসলে সাম্প্রতিক কালে কৃষ্ণ নগর সাংসদ কালী পুজো নিয়ে মন্তব্য করেন। তাই ব্যাকফুটে থাকা উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মোদি ব্রিগেড ও আর এস এস কে খুশি করতে  এই সব করছেন?

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিশ্ব ভারতীতে কালী আরাধনার নিয়ে ‘লেকচার সিরিজ’, সভা ২৫ জুলাই, তুঙ্গে বিতর্ক

আপডেট : ২২ জুলাই ২০২২, শুক্রবার

দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন :  বিশ্বভারতীতে মহর্ষির ব্রহ্মোপসনার ব্রাহ্মমন্দির শুধুমাত্র একেশ্বরবাদের কথা নয়, সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে। তাই এখানে তুলনামূলক ধর্ম নিয়ে চর্চা বা পড়ার সুযোগ  আছে। কোনও মূর্তি পুজো হয় না। এমনকি  সরস্বতী পুজোও হয় না। সেখানে  কালী আরাধনার ধারণা’ নিয়ে একটি ‘লেকচার সিরিজ’-এর আয়োজন করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজস্ব ওয়েবসাইটে ৫২তম লেকচার সিরিজের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্বভারতী।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, আগামী ২৫ জুলাই এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনায় থাকবেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা কলকাতা আলমবাজার মঠের রামকৃষ্ণ  আশ্রমের (মিশন নয়) শ্রীশারদাত্মানন্দ মহারাজের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সেমিনার হলে এই সভার আয়োজনের খবর হতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে । কারণ বিশ্বভারতী তন্ত্রপীঠ বা তন্ত্র  সাধন ক্ষেত্র নয়। মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের দলিলে নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনার কথা বলে গেছেন। কোন মূর্তি পুজো বিষয়ক আলোচনা সেই ভাবনার বিরোধী ।

আরও পড়ুন: হাজিরা এড়ালেন প্রাক্তন উপাচার্য, কোর্টের ভৎর্সনার মুখে বিদ্যুৎ

 

আরও পড়ুন: বিশ্বভারতী:  ছাত্রকে জাতি বৈষম্যমূলক মন্তব্যে ধৃত অধ্যাপকের জেল হেফাজতের নির্দেশ

ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর সংবাদ মাধ্যমের কাছে এর প্রতিবাদে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায়, বিশ্বভারতী এবার তলানিতে ঠিকেছে, আর তাকে উদ্ধার করা যাবে না।

আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীঃ বীরভূম পুলিশ সুপারকে তলব হাইকোর্টের

প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজ কলি সেন বলেন, এন আই আর এফে বিশ্বভারতী একশোর মধ্যে শেষের দিক থেকে দুই নম্বরে। ওনার উচিৎ এসব বিতর্কিত বিষয়ে আলোচনা না করে বিশ্বভারতীর মান কেন এত খারাপ হলো, সে সব নিয়ে ভাবা। এসব ছেড়ে পড়াশোনার দিকে নজর দিন। বিশ্বভারতী স্বপক্ষে জন সংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যাইয়ের বক্তব্য, এই আলোচনা একাধারে ধার্মিক, শিক্ষাবিষয়ক, বৌদ্ধিক আলোচনা। কোনও মূর্তি পুজো নয়।

আরেক প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আলোচনা হতে পারে। যদিও জানি না বাল্মীকি প্রতিভার কালি সাধন ছেড়ে সারস্বত বন্দনা কিনা। না শুধুই ধর্মীয় গোঁড়ামি।  যাইহোক এই  আলোচনার সময় নির্বাচন এবং উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। উচিৎ ছিল বিশ্বভারতীর মান নিয়ে ভাবনা রাখা।

বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন ভিবিউফার সম্পাদক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, বিশ্বভারতী কালিসাধন ক্ষেত্র নয়। তবে বর্তমান উপাচার্য মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনাকে শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। আশঙ্কা করছি এবার থেকে কাঁচ ঘর উপাসনা গৃহে হয়তো তন্ত্রসাধনা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কাপালিক নিয়োগের পথ প্রস্তুত?

কিন্তু উপাচার্য হঠাৎ এমন বিষয় কেন রাখতে গেলেন? এর আগে বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘সিএএ-এনআরসি’ নিয়ে আলোচনা, ‘বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির খারাপ ফলের কারণ’ প্রভৃতি বিষয়ে লেকচার সিরিজ আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে চূড়ান্ত সমালোচিত হয়ে বেশ কয়েকটি লেকচার বাতিল করতেও বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। আসলে সাম্প্রতিক কালে কৃষ্ণ নগর সাংসদ কালী পুজো নিয়ে মন্তব্য করেন। তাই ব্যাকফুটে থাকা উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মোদি ব্রিগেড ও আর এস এস কে খুশি করতে  এই সব করছেন?