০১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এমপি আনারের হাড়-মাংস আলাদা করে মশলা মিশিয়ে ব্যাগে ভরা হয় খুনে নারী-যোগ

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার
  • / 31

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক:   বাংলাদেশের আওয়ামী লিগের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার খুন হয়েছেন কলকাতার নিউ টাউনে। আনারকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, এমপি আনারকে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য হাড়-মাংস আলাদা করে মসলা মিশিয়ে ব্যাগে ভরা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে ঢাকার মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি। হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে। ঢাকায় পুলিশের নজরদারির কারণে হত্যার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় কলকাতাকে। হত্যাকারীরা এমনভাবে এমপি আনারের লাশ গুমের চেষ্টা করেছে যাতে কোনো হদিস না মেলে। লাশ গুমের জন্য হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করে পৃথক পৃথক ট্রলিতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মাংস নিয়ে যাওয়ার সময় যাতে কেউ আটকালেও বুঝতে না পারে, সে জন্য মাংসের সঙ্গে মসলা মিশিয়ে খাবার উপযোগী মাংসের মতো বানানো হয়। তিনি বলেন, বিদেশের মাটিতে অপরাধ করলে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে আসবে না বলেই অপরাধীরা কলকাতাকে বেছে নেয়। তবে আমরা তিনজকে  গ্রেফতার   করেছি। আরও কয়েকজনকে নজরাদিতে রাখা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। তবে তার লাশ পুরোপুরি না মিললেও অংশ বিশেষ পাওয়া যাবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন এমপি আনার। পরে আরও তিনজন সেখানে যায়। তাদের মধ্যে দুজনকে ১৪ মে সকালে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখা যায়। ওই দিন বিকেলের দিকে বেরিয়ে যান আরও একজন, সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে সেই ছবি। কিন্তু ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখা গেলেও আনারকে বের হতে দেখা যায়নি। পারিপার্শ্বিক এ তথ্যপ্রমাণ থেকেই পুলিশ খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সামনে এসেছে সিলিস্তি রহমান নামে এক নারীর নাম। তিনি এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সময় নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটেই অবস্থান করছিলেন সিলিস্তি রহমান। তাদের ধারণা, এমপি আনারকে কলকাতা নিতে এ নারীকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন।

কলকাতা পুলিশও ফ্ল্যাট কম্পাউন্ডের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৩ মে ওই ফ্ল্যাটে তিনজন একসঙ্গে ঢোকেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। একদিন ফ্ল্যাটে অবস্থানের পর বের হয়ে আসেন এক পুরুষ ও এক নারী। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীই সিলিস্তি। ১৩ মে তিনি আমানউল্লাহ ও এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকতে পারেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র বলছে, তাদেরও ধারণা ওই নারীই সিলিস্তি। কারণ তিনি ১৫ মে বিমানযোগে দেশে ফেরেন। তার সঙ্গে দেশে ফেরেন মূল ঘাতক আমানউল্লাহ।

কলকাতা পুলিশ ওই ফ্ল্যাট ও আশপাশের ভবনের সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমান ও তার সহযোগীদের ট্রলিব্যাগ আনা-নেওয়া, এমপি আনারের বাইরে রাখা জুতো ভেতরে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। এছাড়া সিলিস্তি রহমান নামে শাহীনের বান্ধবীর বাইরে থেকে পলিথিন ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে আসার দৃশ্যও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

এমপি আনারের হাড়-মাংস আলাদা করে মশলা মিশিয়ে ব্যাগে ভরা হয় খুনে নারী-যোগ

আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক:   বাংলাদেশের আওয়ামী লিগের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার খুন হয়েছেন কলকাতার নিউ টাউনে। আনারকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, এমপি আনারকে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য হাড়-মাংস আলাদা করে মসলা মিশিয়ে ব্যাগে ভরা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে ঢাকার মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি। হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে। ঢাকায় পুলিশের নজরদারির কারণে হত্যার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় কলকাতাকে। হত্যাকারীরা এমনভাবে এমপি আনারের লাশ গুমের চেষ্টা করেছে যাতে কোনো হদিস না মেলে। লাশ গুমের জন্য হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করে পৃথক পৃথক ট্রলিতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মাংস নিয়ে যাওয়ার সময় যাতে কেউ আটকালেও বুঝতে না পারে, সে জন্য মাংসের সঙ্গে মসলা মিশিয়ে খাবার উপযোগী মাংসের মতো বানানো হয়। তিনি বলেন, বিদেশের মাটিতে অপরাধ করলে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে আসবে না বলেই অপরাধীরা কলকাতাকে বেছে নেয়। তবে আমরা তিনজকে  গ্রেফতার   করেছি। আরও কয়েকজনকে নজরাদিতে রাখা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। তবে তার লাশ পুরোপুরি না মিললেও অংশ বিশেষ পাওয়া যাবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন এমপি আনার। পরে আরও তিনজন সেখানে যায়। তাদের মধ্যে দুজনকে ১৪ মে সকালে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখা যায়। ওই দিন বিকেলের দিকে বেরিয়ে যান আরও একজন, সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে সেই ছবি। কিন্তু ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখা গেলেও আনারকে বের হতে দেখা যায়নি। পারিপার্শ্বিক এ তথ্যপ্রমাণ থেকেই পুলিশ খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সামনে এসেছে সিলিস্তি রহমান নামে এক নারীর নাম। তিনি এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সময় নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটেই অবস্থান করছিলেন সিলিস্তি রহমান। তাদের ধারণা, এমপি আনারকে কলকাতা নিতে এ নারীকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন।

কলকাতা পুলিশও ফ্ল্যাট কম্পাউন্ডের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৩ মে ওই ফ্ল্যাটে তিনজন একসঙ্গে ঢোকেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। একদিন ফ্ল্যাটে অবস্থানের পর বের হয়ে আসেন এক পুরুষ ও এক নারী। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীই সিলিস্তি। ১৩ মে তিনি আমানউল্লাহ ও এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকতে পারেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র বলছে, তাদেরও ধারণা ওই নারীই সিলিস্তি। কারণ তিনি ১৫ মে বিমানযোগে দেশে ফেরেন। তার সঙ্গে দেশে ফেরেন মূল ঘাতক আমানউল্লাহ।

কলকাতা পুলিশ ওই ফ্ল্যাট ও আশপাশের ভবনের সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমান ও তার সহযোগীদের ট্রলিব্যাগ আনা-নেওয়া, এমপি আনারের বাইরে রাখা জুতো ভেতরে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। এছাড়া সিলিস্তি রহমান নামে শাহীনের বান্ধবীর বাইরে থেকে পলিথিন ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে আসার দৃশ্যও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে।