১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার
  • / 24

ছবি: সন্দীপ সাহা

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: রাজ কাপুর আর নার্গিস অভিনীত শ্রী ৪২০ সিনেমার সেই বিখ্যাত দৃশ্য নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। সাদা-কালোয় ফুটে উঠেছিল রাজ-নার্গিসের প্রেমের কাহিনি। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ঠোঁটে বিখ্যাত গান প্যায়ার হুয়া ইকরার হুয়া হে ফির প্যায়ার সে কিঁউ ডরতা হ্যায় দিল। আর তাদের প্রেমের সাক্ষী বৃষ্টি আর ছাতা। ঝমঝমে বৃষ্টিতে মাথা বাঁচিয়ে পথ চলতে ছাতার মতো সঙ্গী আর নেই। ছাতা মানেই ভরসা, নিশ্চিন্তি আর আগলে রাখার আশ্বাস। কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন- “তোমার মতো পথে বিছায় ছায়া ছাতিম ডালের ছাতা।”

 

ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি
ছবি: সন্দীপ সাহা

বাংলায় বেশ কয়েকটি প্রাচীন উৎসব রয়েছে যাদের প্রধান উপকরণ হল এই ছাতা। মানভূমের ছাতা পরব তারই উদাহরণ। ছাতা নিয়ে কাহিনির শেষ নেই। বৃষ্টির অভিসারে ছাতা বিশ্বস্ত সঙ্গী। মুষলধারে বৃষ্টির হাত থেকে মাথা বাঁচতে ছাতার জুড়ি নেই। তাই তো রবি ঠাকুর সহজ পাঠে বর্ষার সঙ্গে ছাতার বন্ধুত্ব নিয়ে লিখেছিলেন, ঘন মেঘ বলে ঋ/ দিন বড় বিশ্রি।/শ ষ স বাদল দিনে/ ঘরে যায় ছাতা কিনে।” আবার জীবনানন্দ, “ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি” দেখে ততটাই আহ্লাদি হয়েছেন।

ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি
ছবি: সন্দীপ সাহা

ছাতার ব্যবহার যে কত প্রাচীন, তা বলা কঠিন। ছাতার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘আমব্রেলা’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন  শব্দ ‘আমব্রা’ থেকে, যার অর্থ ‘ছায়া’। প্রায় চার হাজার বছর আগের গ্রিস ও চিন দেশের চিত্রকর্মে ছাতার দেখা মেলে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০-২৪০০ অব্দের মিশরীয় চিত্রলিপি, সমাধি ও মন্দিরে আঁকা ছবিতে রাজা ও দেবতাদের মাথার উপরে চারকোনা সমতল ছাতার ব্যবহার রয়েছে। এর কয়েক শতক পর মেসোপটেমিয়া বর্তমানে ইরাকে রাজছত্র আবিষ্কার হয়। টাইগ্রিস নদীর তীরে প্রাচীন আসিরিয়া নগরের নানিভে এক খোদাইচিত্রে রয়েছে, তাতে রাজার মাথার উপর গোলাকার একটি ছাতা ধরে রাখা হয়েছে।

বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান ‘জেমস স্মিথ অ্যান্ড সন্স’।  চালু হয় ১৮৩০ সালে। লন্ডনের ৫৩ নিউ অক্সফোর্ড স্ট্রিটে এই দোকান আজও  আছে।  ১৮৫২ সালে স্বয়ংক্রিয় সুইচের সাহায্যে ছাতা খোলার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন গেজ। ১৯২০ সালে প্রথম ফোল্ডিং ছাতা তৈরি করেন জার্মানির হ্যানস হাপট। ১৯৬০ সালে বানানো হয় পলিয়েস্টার কাপড়ের ছাতা।  ‘দি আমব্রেলা স্কাই’ প্রকল্পের আওতায় রোদ-বৃষ্টি বা যে কোনও প্রতিকূল আবহাওয়ায় মানুষের পথ-চলাকে আরামদায়ক করে তুলতে ২০১২ সালে পর্তুগালের অ্যাগুয়েডা শহরের পথে পথে শত শত রঙিন ছাতা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। রঙবেরঙের ছাতায় ঢাকা আলো-ছায়াময় সে সব রাস্তায় হাঁটতে সমগ্র বিশ্বের বহু পর্যটক আসেন।

 

ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ছাতা তৈরি হয় ‘ছাতার রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত চিনের সোংজিয়া শহরে। এখানে এক হাজারেরও বেশি ছাতার কারখানায় এক জন কারিগর দিনে ৩০০টির বেশি ছাতা তৈরি করেন। বিদেশি ছাতার মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় চাইনিজ ছাতা ছাড়াও বার্মা, তাইল্যান্ড, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ান ছাতারও চাহিদা আছে। কেবল বৃষ্টি বা রোদ থেকে বাঁচতে নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে নানা রং, নকশা ও কাপড়ের ছাতা।

 

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: রাজ কাপুর আর নার্গিস অভিনীত শ্রী ৪২০ সিনেমার সেই বিখ্যাত দৃশ্য নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। সাদা-কালোয় ফুটে উঠেছিল রাজ-নার্গিসের প্রেমের কাহিনি। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ঠোঁটে বিখ্যাত গান প্যায়ার হুয়া ইকরার হুয়া হে ফির প্যায়ার সে কিঁউ ডরতা হ্যায় দিল। আর তাদের প্রেমের সাক্ষী বৃষ্টি আর ছাতা। ঝমঝমে বৃষ্টিতে মাথা বাঁচিয়ে পথ চলতে ছাতার মতো সঙ্গী আর নেই। ছাতা মানেই ভরসা, নিশ্চিন্তি আর আগলে রাখার আশ্বাস। কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন- “তোমার মতো পথে বিছায় ছায়া ছাতিম ডালের ছাতা।”

 

ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি
ছবি: সন্দীপ সাহা

বাংলায় বেশ কয়েকটি প্রাচীন উৎসব রয়েছে যাদের প্রধান উপকরণ হল এই ছাতা। মানভূমের ছাতা পরব তারই উদাহরণ। ছাতা নিয়ে কাহিনির শেষ নেই। বৃষ্টির অভিসারে ছাতা বিশ্বস্ত সঙ্গী। মুষলধারে বৃষ্টির হাত থেকে মাথা বাঁচতে ছাতার জুড়ি নেই। তাই তো রবি ঠাকুর সহজ পাঠে বর্ষার সঙ্গে ছাতার বন্ধুত্ব নিয়ে লিখেছিলেন, ঘন মেঘ বলে ঋ/ দিন বড় বিশ্রি।/শ ষ স বাদল দিনে/ ঘরে যায় ছাতা কিনে।” আবার জীবনানন্দ, “ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি” দেখে ততটাই আহ্লাদি হয়েছেন।

ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি
ছবি: সন্দীপ সাহা

ছাতার ব্যবহার যে কত প্রাচীন, তা বলা কঠিন। ছাতার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘আমব্রেলা’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন  শব্দ ‘আমব্রা’ থেকে, যার অর্থ ‘ছায়া’। প্রায় চার হাজার বছর আগের গ্রিস ও চিন দেশের চিত্রকর্মে ছাতার দেখা মেলে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০-২৪০০ অব্দের মিশরীয় চিত্রলিপি, সমাধি ও মন্দিরে আঁকা ছবিতে রাজা ও দেবতাদের মাথার উপরে চারকোনা সমতল ছাতার ব্যবহার রয়েছে। এর কয়েক শতক পর মেসোপটেমিয়া বর্তমানে ইরাকে রাজছত্র আবিষ্কার হয়। টাইগ্রিস নদীর তীরে প্রাচীন আসিরিয়া নগরের নানিভে এক খোদাইচিত্রে রয়েছে, তাতে রাজার মাথার উপর গোলাকার একটি ছাতা ধরে রাখা হয়েছে।

বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান ‘জেমস স্মিথ অ্যান্ড সন্স’।  চালু হয় ১৮৩০ সালে। লন্ডনের ৫৩ নিউ অক্সফোর্ড স্ট্রিটে এই দোকান আজও  আছে।  ১৮৫২ সালে স্বয়ংক্রিয় সুইচের সাহায্যে ছাতা খোলার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন গেজ। ১৯২০ সালে প্রথম ফোল্ডিং ছাতা তৈরি করেন জার্মানির হ্যানস হাপট। ১৯৬০ সালে বানানো হয় পলিয়েস্টার কাপড়ের ছাতা।  ‘দি আমব্রেলা স্কাই’ প্রকল্পের আওতায় রোদ-বৃষ্টি বা যে কোনও প্রতিকূল আবহাওয়ায় মানুষের পথ-চলাকে আরামদায়ক করে তুলতে ২০১২ সালে পর্তুগালের অ্যাগুয়েডা শহরের পথে পথে শত শত রঙিন ছাতা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। রঙবেরঙের ছাতায় ঢাকা আলো-ছায়াময় সে সব রাস্তায় হাঁটতে সমগ্র বিশ্বের বহু পর্যটক আসেন।

 

ছাতার মতন বড় পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ছাতা তৈরি হয় ‘ছাতার রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত চিনের সোংজিয়া শহরে। এখানে এক হাজারেরও বেশি ছাতার কারখানায় এক জন কারিগর দিনে ৩০০টির বেশি ছাতা তৈরি করেন। বিদেশি ছাতার মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় চাইনিজ ছাতা ছাড়াও বার্মা, তাইল্যান্ড, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ান ছাতারও চাহিদা আছে। কেবল বৃষ্টি বা রোদ থেকে বাঁচতে নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে নানা রং, নকশা ও কাপড়ের ছাতা।