জীবন সায়াহ্নে ছাত্রছাত্রীদের গ্রন্থাগার উপহার দিতে চান আবদুল্লাহ স্যার
- আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার
- / 13
পারভেজ রহমান– দিনহাটা শিক্ষা সকলেরই অধিকার– কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট বা অন্যান্য কারণে কোনও শিক্ষার্থীকে যেন পিছিয়ে পড়তে না হয় সেইলক্ষ্যে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাব। নিজের বাড়িতে এক সাক্ষাৎকারে এমনই কথা জানালেন আবদুল্লাহ স্যার।
শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০৭ সালে। তারপর এই দীর্ঘ ১৫ বছর অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের বিনা পারিশ্রমিকে বাড়ি গিয়ে পড়িয়েছেন। এখন শরীর সায় দেন না। কাজ থেকে বিশ্রাম নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। তাই প্রিয়ছাত্রছাত্রীদেরজন্য কিছু করে যেতে চান। নিজ বাসভবনে গ্রন্থাগার তৈরিই তাঁর স্বপ্ন এখন। তিনি জানান– আমার অনেক ছাত্রছাত্রী আজ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এমন অনেকে আছে যারা আর্থিক কারনে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না– কেউবা চাকরির পরীক্ষায় পিছিয়ে পরে। আমার এখন অনেক বয়স– খুব বেশি ছাত্রছাত্রীকে পড়াতে পারিনা। তাই আমি ঠিক করেছি সকলের জন্য একটা গ্রন্থাগার তৈরি করব।
শুধু শিক্ষক হিসেবেই নয়– আবদুল্লাহ সাহেবের পরিচিতি একজন কবি– ব্যাকরণবিদ ও সমাজসেবী হিসেবেও। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলি হল ‘উদুল বুকের আঁচল’– ‘ভ্যালারে নrদলাল’– ‘সবেমাত্র হাত ধরেছি’– ‘লকডাউন’– ‘একটু তুমি ইচ্ছেমাফিক’– ‘ভালোবাসা অন্য ঘরে’– রাজবংশী ভাষায় লেখা ‘এ্যাকনা কথা কং’ ও ‘তোর্সাপারের রানী’। এছাড়াও প্রকাশিত হওয়ার পথে তিনটি কাব্যগ্রন্থ হল বিশেষ কম্পন– মাটি ডোবে অন্ধকারে ও প্রেমের কবিতা। এছাড়াও লিখেছেন ‘শুধু ব্যাকরণ’ নামে বাংলা ব্যাকরণ ও একটি ইংরেজি ব্যাকরণ যা প্রকাশিত হওয়ার পথে। এর পাশাপাশি অসহায়ের মেয়ের বিয়েতে সাহায্য– বস্ত্র বিতরণ– বই বিতরণ– গাছ লাগানো ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সকল দায়িত্ব নেওয়া। সবটাই পেনশনের টাকা দিয়েই চালান।
দীর্ঘ সময়ের শিক্ষকতা জীবনে জমিয়েছেন অসংখ্য বই। কিন্তু তারমধ্যে অনেক বই বিতরণ করে চলেছেন দুস্থ ও অসহায় ছাত্রছাত্রীদের। তিনি জানিয়েছেন– গ্রন্থাগার খোলার লক্ষ্যে আমার কাছে প্রায় ২ হাজারের মত বই আছে। আরও কিছু সংগ্রহ করে গ্রন্থাগারের কাজটা শুরু করব। তাঁর ইচ্ছে এই গ্রন্থাগারে যেমন স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থাকবে– তেমনই থাকবে বিভিন্ন উপন্যাস– কাব্যগ্রন্থ– চাকরির পরীক্ষার প্রতিযোগিতামূলক বইয়ের পাশাপাশি তাঁর জোগাড় করা নানা ধরনের ইসলামিক বই। বই পড়ে জ্ঞান আরোহণের পাশাপাশি মনের শান্তি বজায় থাকে– তাই শুধু ছাত্রছাত্রীদের নয়– সবারই বই পড়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।
তিন ছেলের সকলেই প্রতিষ্ঠিত। চাকরি সূত্রে বাড়ির বাইরে থাকেন। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে একা আবদুল্লাহ স্যার। তাই মাস্টারমশাই নিজের নাতি-নাতনির ভালোবাসায় খুঁজে ফেরেন তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। তাঁর কথায়–ওদের বাবা কাকাকে পড়িয়েছি– ওরা আমার নাতি-নাতনির মত। ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ভালো লাগে। তাই সকাল বিকেল এই বয়সেও সাইকেল নিয়ে বাড়ি বাড়ি ছোটেন বিনা পয়সার মাস্টারমশাই।