২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুরসভার দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই – ইডি, সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল ডিভিশন বেঞ্চেও

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৬ জুন ২০২৩, শুক্রবার
  • / 29

পারিজাত মোল্লা :  পুর মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ধাক্কা খেল রাজ্য।বৃহস্পতিবার পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

বহাল রইল সিবিআই তদন্তের নির্দেশ। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, -‘২১ এপ্রিল সিঙ্গল বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা বহাল থাকবে’।বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি সিনহা তাঁর নির্দেশে জানিয়েছিলেন , -‘ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি আর পুর নিয়োগ দুর্নীতির মধ্যে যোগ রয়েছে, তাই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়েই তদন্ত করাতে হবে’।একই পর্যবেক্ষণ ডিভিশন বেঞ্চেরও।

আরও পড়ুন: সন্দেশখালি কান্ডে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ককে নি:শর্ত জামিন দিল ডিভিশন বেঞ্চ

রাজ্যের অধীন দুটো দফতরে একই ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলে মন্তব্য ডিভিশন বেঞ্চের। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছিল রাজ্য। সেই মামলাতেই বৃহস্পতিবার রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় অয়ন শীল গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম পুর নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। সেসময় ইডি অয়ন শীলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুরসভা নিয়োগের কাগজপত্র পেয়েছিল।সেই মামলায় প্রথমে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই মামলার বেঞ্চ বদল হয়।

আরও পড়ুন: যৌথ তদন্তে অনাস্থা, ফের সিবিআই চেয়ে ডিভিশন বেঞ্চে ইডি

এরপর মামলা ওঠে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। তিনিও সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল রাখেন। এরপর ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সিবিআই কেন তদন্ত করবে? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পুরসভায় সিবিআই তল্লাশিতে অফিসারদের হেনস্থা করা হয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন রাজ্যের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন শুনানি শেষে নির্দেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ।ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, – ‘পুরসভা ও শিক্ষা দফতর, রাজ্যের অধীন দুটি জায়গাতেই একই ধরনের দুর্নীতি যা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।’

আরও পড়ুন: চাকরিহারাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে চায় ডিভিশন বেঞ্চ

সিঙ্গল বেঞ্চের রায় যুক্তিযুক্ত ছিল বলেও উল্লেখ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের পর্যেবক্ষণে এই দুর্নীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, -‘ এটা অসত্‍ উপায়ে টাকা সংগ্রহের একটা উপায়। এর প্রভাব জনসাধারণের উপর পড়েছে। তাই সিবিআই ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে কোনও তদন্ত সম্ভব নয়’ বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানিয়েছে , -‘ দুই দুর্নীতিতে প্রভাবিত হয়েছেন অনেকেই’। রাজ্যের পুরসভাগুলিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি। ইডির আবেদনের ভিত্তিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে মামলাটির এজলাস বদল হয়। বিচারপতি অমৃতা সিন্‌হার বেঞ্চও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ বহাল রাখে। সিঙ্গল বেঞ্চের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য।হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টেও যায় রাজ্য সরকার। গত সপ্তাহে রাজ্যের এই ভূমিকায় কলকাতা হাইকোর্ট অসন্তুষ্ট হলে সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) প্রত্যাহার করে নেয় রাজ্য।

হাইকোর্টে রাজ্যের দাবি , -‘ পুরসভার মামলা শোনার এক্তিয়ার নেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। কিন্তু তিনি এই মামলা শুনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন’।রায় ঘোষণায় ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, -‘ রাজ্যের অধীনে পুরসভা এবং শিক্ষা দফতরে একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দু’টি দুর্নীতি অবিচ্ছেদ্য ভাবে যুক্ত। যুক্ত রয়েছেন একই ব্যক্তিরা। এই মাপের দুর্নীতির জন্য মোহভঙ্গ হয়েছে তরুণ প্রজন্মের। তাই সিবিআই ছাড়া অন্য কোনও তদন্ত নয়। সিঙ্গল বেঞ্চের রায় যথার্থ ছিল। অসত্‍ উপায়ে টাকা সংগ্রহের জন্য এই দুর্নীতি। জনসাধারণের উপর এর প্রভাব ফেলেছে। এরফলে এই মুহূর্তে আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করবে না’। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক পুরসভায় তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে তল্লাশি চালিয়েও বহু নথি উদ্ধার করা হয়েছে। যা নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা যায় রাজ্য রাজনীতিতে।

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পুরসভার দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই – ইডি, সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল ডিভিশন বেঞ্চেও

আপডেট : ১৬ জুন ২০২৩, শুক্রবার

পারিজাত মোল্লা :  পুর মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ধাক্কা খেল রাজ্য।বৃহস্পতিবার পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

বহাল রইল সিবিআই তদন্তের নির্দেশ। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, -‘২১ এপ্রিল সিঙ্গল বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা বহাল থাকবে’।বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি সিনহা তাঁর নির্দেশে জানিয়েছিলেন , -‘ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি আর পুর নিয়োগ দুর্নীতির মধ্যে যোগ রয়েছে, তাই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়েই তদন্ত করাতে হবে’।একই পর্যবেক্ষণ ডিভিশন বেঞ্চেরও।

আরও পড়ুন: সন্দেশখালি কান্ডে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ককে নি:শর্ত জামিন দিল ডিভিশন বেঞ্চ

রাজ্যের অধীন দুটো দফতরে একই ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলে মন্তব্য ডিভিশন বেঞ্চের। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছিল রাজ্য। সেই মামলাতেই বৃহস্পতিবার রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় অয়ন শীল গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম পুর নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। সেসময় ইডি অয়ন শীলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুরসভা নিয়োগের কাগজপত্র পেয়েছিল।সেই মামলায় প্রথমে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই মামলার বেঞ্চ বদল হয়।

আরও পড়ুন: যৌথ তদন্তে অনাস্থা, ফের সিবিআই চেয়ে ডিভিশন বেঞ্চে ইডি

এরপর মামলা ওঠে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। তিনিও সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল রাখেন। এরপর ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সিবিআই কেন তদন্ত করবে? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পুরসভায় সিবিআই তল্লাশিতে অফিসারদের হেনস্থা করা হয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন রাজ্যের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন শুনানি শেষে নির্দেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ।ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, – ‘পুরসভা ও শিক্ষা দফতর, রাজ্যের অধীন দুটি জায়গাতেই একই ধরনের দুর্নীতি যা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।’

আরও পড়ুন: চাকরিহারাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে চায় ডিভিশন বেঞ্চ

সিঙ্গল বেঞ্চের রায় যুক্তিযুক্ত ছিল বলেও উল্লেখ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের পর্যেবক্ষণে এই দুর্নীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, -‘ এটা অসত্‍ উপায়ে টাকা সংগ্রহের একটা উপায়। এর প্রভাব জনসাধারণের উপর পড়েছে। তাই সিবিআই ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে কোনও তদন্ত সম্ভব নয়’ বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানিয়েছে , -‘ দুই দুর্নীতিতে প্রভাবিত হয়েছেন অনেকেই’। রাজ্যের পুরসভাগুলিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি। ইডির আবেদনের ভিত্তিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে মামলাটির এজলাস বদল হয়। বিচারপতি অমৃতা সিন্‌হার বেঞ্চও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ বহাল রাখে। সিঙ্গল বেঞ্চের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য।হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টেও যায় রাজ্য সরকার। গত সপ্তাহে রাজ্যের এই ভূমিকায় কলকাতা হাইকোর্ট অসন্তুষ্ট হলে সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) প্রত্যাহার করে নেয় রাজ্য।

হাইকোর্টে রাজ্যের দাবি , -‘ পুরসভার মামলা শোনার এক্তিয়ার নেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। কিন্তু তিনি এই মামলা শুনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন’।রায় ঘোষণায় ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, -‘ রাজ্যের অধীনে পুরসভা এবং শিক্ষা দফতরে একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দু’টি দুর্নীতি অবিচ্ছেদ্য ভাবে যুক্ত। যুক্ত রয়েছেন একই ব্যক্তিরা। এই মাপের দুর্নীতির জন্য মোহভঙ্গ হয়েছে তরুণ প্রজন্মের। তাই সিবিআই ছাড়া অন্য কোনও তদন্ত নয়। সিঙ্গল বেঞ্চের রায় যথার্থ ছিল। অসত্‍ উপায়ে টাকা সংগ্রহের জন্য এই দুর্নীতি। জনসাধারণের উপর এর প্রভাব ফেলেছে। এরফলে এই মুহূর্তে আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করবে না’। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক পুরসভায় তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে তল্লাশি চালিয়েও বহু নথি উদ্ধার করা হয়েছে। যা নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা যায় রাজ্য রাজনীতিতে।