০৯ জুন ২০২৫, সোমবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিল্লি দাঙ্গায় অনেকটাই দায়ী ফেসবুকঃ মার্কিন সংবাদপত্র

পুবের কলম
  • আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার
  • / 23

দিল্লি দাঙ্গার সময় ফেসবুকে ঘৃণামূলক পোস্ট বেড়ে গিয়েছিল ৩০০ শতাংশ বলে জানাচ্ছে সংস্থার অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ তদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল– মুসলিম-বিরোধী পোস্টগুলি দিয়ে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি এই সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাটি। তবে রিপোর্ট সেখানেই শেষ হয়নি। সম্প্রতি তদন্ত রিপোর্টে আরও জানা গেছে– ফেসবুকের উত্তেজক এবং উসকানিমূলক পোস্ট ২০২০ সালের ফেব্র&য়ারি মাসে দিল্লি দাঙ্গার জন্য অনেকটাই দায়ী। এই দাঙ্গায় মারা গিয়েছিলেন ৫৩ জন। ২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী প্রতিবাদের সময় ঘৃণা উদ্রেককারী পোস্টের সংখ্যা ফেসবুকে বেড়ে গিয়েছিল ৩০০ শতাংশ। ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ তদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে মার্কিন সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছিল ভুয়ো খবর ছড়িয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে হিংসায় উসকানি দেওয়া হয়েছিল দিল্লি দাঙ্গার সময়। এই রিপোর্ট নিয়ে ফেসবুকের তরফে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করা হয়। অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্টে এও বলা হয়েছে যে– মুসলিমদের উপর বিভিন্ন পোস্টে কোভিড-১৯ সংক্রমণ দেশে ছড়ানোর দায় চাপানো হয়েছিল। এও পোস্ট করা হয়েছিল যে– মুসলিম পুরুষ হিন্দু মহিলাদের প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করত ভারতে মুসলিম শাসন প্রত্যাবর্তনের স্বার্থে। তদন্তকারীরা তাদের রিপোর্টে লিখেছেন– কীভাবে প্ররোচনা এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারের সাহায্যে নিশানা করা হত ভারতীয় মুসলিমদের। ফেসবুক তদন্তকারীরা দিল্লি এসে একাধিক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই বলেছেন– তাঁরা ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত এমন সব দুরভিসন্ধিমূলক মেসেজ পেতেন– যেগুলি খুবই বিপজ্জনক। সেইসব মেসেজে লেখা হত ‘হিন্দুরা বিপদে আছেন’– ‘মুসলমানরা হিন্দুদের হত্যা করতে তৈরি হচ্ছে’ ইত্যাদি। তদন্তকারীদের মুম্বইয়ের এক মুসলিম ব্যক্তি জানিয়েছিলেন– এই ধরনের ঘৃণাজনিত মেসেজগুলির জন্য তিনি নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন না– পরিস্থিতি সত্যি খুব ভীতিপ্রদ। বহু ইউজার মনে করতেন ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে এই ধরনের মেসেজ আটকানোর দায়িত্ব খোদ ফেসবুক সংস্থার।
ফেসবুক তদন্তকারীরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে– ভারতের শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত দু’টি হিন্দু অতি জাতীয়তাবাদী সংগঠন এই ধরনের মুসলিম-বিরোধী এবং উসকানিমূলক পোস্ট করত। তদন্তকারীরা ফেসবুক সংস্থাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল এই গোষ্ঠীদের পোস্ট বাদ দেওয়া উচিত। কিন্তু তবুও সেই দু’টি হিন্দু গোষ্ঠী নিয়মিত উত্তেজক পোস্ট করে গেছে। তদন্তকারীদের রিপোর্টে জানানো হয়েছে– বিভিন্ন পোস্টে হিংসায় প্ররোচনা দেওয়া হত। এমনকী মুসলমানদের শূকর এবং সারমেয়র সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছিল। কিছু পোস্টে আবার দাবি করা হয়েছিল পবিত্র কুরআনে ধর্ষণ করার নিদান দেওয়া হয়েছে (নাউজোবিল্লাহ)। এসব দেখেও এই হিন্দু গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্ট ফেসবুক থেকে সরানো হয়নি। তারা রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তাদের বার্তা নিয়মিত পোস্ট করে গেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লি বিধানসভার ‘পিস অ্যান্ড হারমোনি কমিটি’ জানিয়েছিল প্রাথমিকভাবে তারা ফেসবুকের হেট স্পিচ এবং দিল্লি দাঙ্গার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। ‘ফেসবুক হেট স্পিচ রুলস কোলাইড উইথ ইন্ডিয়ান পলিটিক্স’ শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে– ফেসবুক সংস্থার ভারতে নিযুক্ত পাবলিক পলিসি অধিকর্তা আঁখি দাস ব্যবসার অজুহাতে হেটস্পিচ নীতি লাগু করেননি শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে সম্পৃত্ত গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: ব্যবহারকারীকে না জানিয়েই সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হচ্ছে, কেন্দ্রকে নোটিস সুপ্রিম কোর্টের

আরও খবর পড়ুনঃ

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুর ফেসবুক পেজ হ্যাক  

আরও পড়ুন: ঈদ মিলন ও ঈদসংখ্যা:  আলিয়ায় পুবের কলম-এর অনুষ্ঠান শনিবার, সরাসরি সম্প্রচারিত হবে ফেসবুক ও ইউটিউবে

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দিল্লি দাঙ্গায় অনেকটাই দায়ী ফেসবুকঃ মার্কিন সংবাদপত্র

আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার

দিল্লি দাঙ্গার সময় ফেসবুকে ঘৃণামূলক পোস্ট বেড়ে গিয়েছিল ৩০০ শতাংশ বলে জানাচ্ছে সংস্থার অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ তদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল– মুসলিম-বিরোধী পোস্টগুলি দিয়ে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি এই সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাটি। তবে রিপোর্ট সেখানেই শেষ হয়নি। সম্প্রতি তদন্ত রিপোর্টে আরও জানা গেছে– ফেসবুকের উত্তেজক এবং উসকানিমূলক পোস্ট ২০২০ সালের ফেব্র&য়ারি মাসে দিল্লি দাঙ্গার জন্য অনেকটাই দায়ী। এই দাঙ্গায় মারা গিয়েছিলেন ৫৩ জন। ২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী প্রতিবাদের সময় ঘৃণা উদ্রেককারী পোস্টের সংখ্যা ফেসবুকে বেড়ে গিয়েছিল ৩০০ শতাংশ। ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ তদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে মার্কিন সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছিল ভুয়ো খবর ছড়িয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে হিংসায় উসকানি দেওয়া হয়েছিল দিল্লি দাঙ্গার সময়। এই রিপোর্ট নিয়ে ফেসবুকের তরফে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করা হয়। অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্টে এও বলা হয়েছে যে– মুসলিমদের উপর বিভিন্ন পোস্টে কোভিড-১৯ সংক্রমণ দেশে ছড়ানোর দায় চাপানো হয়েছিল। এও পোস্ট করা হয়েছিল যে– মুসলিম পুরুষ হিন্দু মহিলাদের প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করত ভারতে মুসলিম শাসন প্রত্যাবর্তনের স্বার্থে। তদন্তকারীরা তাদের রিপোর্টে লিখেছেন– কীভাবে প্ররোচনা এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারের সাহায্যে নিশানা করা হত ভারতীয় মুসলিমদের। ফেসবুক তদন্তকারীরা দিল্লি এসে একাধিক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই বলেছেন– তাঁরা ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত এমন সব দুরভিসন্ধিমূলক মেসেজ পেতেন– যেগুলি খুবই বিপজ্জনক। সেইসব মেসেজে লেখা হত ‘হিন্দুরা বিপদে আছেন’– ‘মুসলমানরা হিন্দুদের হত্যা করতে তৈরি হচ্ছে’ ইত্যাদি। তদন্তকারীদের মুম্বইয়ের এক মুসলিম ব্যক্তি জানিয়েছিলেন– এই ধরনের ঘৃণাজনিত মেসেজগুলির জন্য তিনি নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন না– পরিস্থিতি সত্যি খুব ভীতিপ্রদ। বহু ইউজার মনে করতেন ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে এই ধরনের মেসেজ আটকানোর দায়িত্ব খোদ ফেসবুক সংস্থার।
ফেসবুক তদন্তকারীরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে– ভারতের শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত দু’টি হিন্দু অতি জাতীয়তাবাদী সংগঠন এই ধরনের মুসলিম-বিরোধী এবং উসকানিমূলক পোস্ট করত। তদন্তকারীরা ফেসবুক সংস্থাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল এই গোষ্ঠীদের পোস্ট বাদ দেওয়া উচিত। কিন্তু তবুও সেই দু’টি হিন্দু গোষ্ঠী নিয়মিত উত্তেজক পোস্ট করে গেছে। তদন্তকারীদের রিপোর্টে জানানো হয়েছে– বিভিন্ন পোস্টে হিংসায় প্ররোচনা দেওয়া হত। এমনকী মুসলমানদের শূকর এবং সারমেয়র সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছিল। কিছু পোস্টে আবার দাবি করা হয়েছিল পবিত্র কুরআনে ধর্ষণ করার নিদান দেওয়া হয়েছে (নাউজোবিল্লাহ)। এসব দেখেও এই হিন্দু গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্ট ফেসবুক থেকে সরানো হয়নি। তারা রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তাদের বার্তা নিয়মিত পোস্ট করে গেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লি বিধানসভার ‘পিস অ্যান্ড হারমোনি কমিটি’ জানিয়েছিল প্রাথমিকভাবে তারা ফেসবুকের হেট স্পিচ এবং দিল্লি দাঙ্গার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। ‘ফেসবুক হেট স্পিচ রুলস কোলাইড উইথ ইন্ডিয়ান পলিটিক্স’ শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে– ফেসবুক সংস্থার ভারতে নিযুক্ত পাবলিক পলিসি অধিকর্তা আঁখি দাস ব্যবসার অজুহাতে হেটস্পিচ নীতি লাগু করেননি শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে সম্পৃত্ত গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: ব্যবহারকারীকে না জানিয়েই সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হচ্ছে, কেন্দ্রকে নোটিস সুপ্রিম কোর্টের

আরও খবর পড়ুনঃ

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুর ফেসবুক পেজ হ্যাক  

আরও পড়ুন: ঈদ মিলন ও ঈদসংখ্যা:  আলিয়ায় পুবের কলম-এর অনুষ্ঠান শনিবার, সরাসরি সম্প্রচারিত হবে ফেসবুক ও ইউটিউবে