০১ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরির অন্যতম হাতিয়াব রমযান

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৮ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার
  • / 80

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম প্রতিবেদক  : ‘সাওম’ মানে ‘বিরত থাকা’। কুকর্ম, কুচিন্তা ও ইন্দ্রিয় পরিচর্যা পরিহার করে সংযমী হওয়াই রোযার শিক্ষা। ‘রমযান’ এর শাব্দিক অর্থ দগ্ধ করা’। সিয়াম সাধনার উত্তাপে, ধৈর্যের অগ্নিদহনে মুসলমান মাত্রই এই মাসে কুপ্রবৃত্তিকে দগ্ধ করে শুদ্ধ পরিশোধিত মানুষে পরিণত হয়। তাই রমযানুল মুবারক হচ্ছে, দৈহিক, আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণের মাস।

 

আরও পড়ুন: ২ মিনিটে ভাঙা হাড় জুড়ে যাবে! যুগান্তকারী ‘Bone Glue’ আবিষ্কার চিনের বিজ্ঞানীদের

নৈতিক পরিশুদ্ধিঃ যখন রমযান মাস শুরু হয়, মহান আল্লাহ্ জান্নাতের দরজা উম্মুক্ত করে দেন, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখেন। যার কারণে ইবাদাত, যিকির, তেলাওয়াত, কৃচছ্র সাধনা ও আল্লাহর একনিষ্ঠ আনুগত্যের স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পানাহার ও পাপাচার ত্যাগ করলেই রোযা পালন হয় না, সেই সঙ্গে সর্বপ্রকার অন্যায় ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অন্তরকে করতে হবে পরিচ্ছন্ন। তবেই রোযা মুমিনের জীবনে নিয়ে আসবে অফুরন্ত রহমত ও বরকত। এই প্রসঙ্গে মহানবী সা. বলেন ­ ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোযা রাখে, সে যেন কোনও রকম অশ্লীলতা ও হই-হুল্লোড় না করে। কেউ যদি তাকে গালিগালাজ বা তার সঙ্গে ঝগড়া করে সে যেন বলে ‘আমি রোযাদার’।’’(বুখারি, মুসলিম) । রোযা ধৈর্য, সংযম ও নৈতিক উৎকর্ষের জন্ম দেয়। শিষ্টাচারের মাধ্যমে নৈতিক চরিত্র গঠন রমযানের সিয়াম সাধনার একটি মৌলিক শিক্ষা।

আরও পড়ুন: শুধু রমযান নয়, কখনোই অনুমতি দেওয়া হবে না: ফ্যাশন শো নিয়ে আবদুল্লাহ

 

আরও পড়ুন: রমযান: হৃদয় পরিবর্তনের বরকতময় এক মাস

সামাজিক পরিশুদ্ধি : শুদ্ধতার এই অমোঘ মাসটিতে সাধনায় সিদ্ধি লাভ করার সুযোগ অবারিত হয়। সিয়ামের অর্থ হচ্ছে তাক্ওয়ার (খোদাভীতির) অনুশীলন আর তাক্ওয়ার অনুশীলনই অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরির অন্যতম হাতিয়ার। রমযান মানুষের মধ্যে মানবিকতাবোধের উন্মেষ ঘটায়।মহানবী সা.-এর ভাষায় ­ ‘সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যরে মাস মাহে রমযান।’ (বায়হাকী)

 

কেননা, ধনী ও বিত্তশালীরা সারাদিন রোযা রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জঠর জ্বালার দহন-বেদনা বুঝতে সক্ষম হন। ফলে তাদের মধ্যে সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। রমযান মাসে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে অর্থ ব্যয় করা অত্যন্ত সওয়াবের (পুণ্যের) কাজ। মহানবী সা. বলেন ­ ‘হে আয়েশা! অভাবগ্রস্তকে ফেরত দিয়ো না। একটি খেজুরকে টুকরো টুকরো করে হলেও দান করো। দরিদ্র মানুষকে ভালোবেসে কাছে টানো। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ তোমাকে কাছে টানবেন।’

 

সমাজের প্রতিটি সদস্য সিয়াম সাধনার (রোযার) ফলে অর্জিত সহমর্মিতার শিক্ষা বছরের বাকি ১১ মাসে যদি অনুশীলন করতে পারে, তাহলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়া সম্ভব। রমযান মাস এলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্য-ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী মওজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অত্যধিক মুনাফা লাভের আশায়। এটা অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় কাজ। মহানবী সা. বলেছেন ­‘মওজুদদার অভিশপ্ত।’

 

রমযানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা, কামনা-বাসনা প্রভৃতি অন্যায় আচরণ পরিহার করে, মানবীয় জীবনের দীক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করে থাকে। অতএব, মাহে রমযানের সিয়াম (রোযা) সাধনা আল্লাহ্পাকের এক অপূর্ব নিয়ামত, যা অফুরন্ত কল্যাণের পথ উন্মোচিত করে।

 

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরির অন্যতম হাতিয়াব রমযান

আপডেট : ৮ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম প্রতিবেদক  : ‘সাওম’ মানে ‘বিরত থাকা’। কুকর্ম, কুচিন্তা ও ইন্দ্রিয় পরিচর্যা পরিহার করে সংযমী হওয়াই রোযার শিক্ষা। ‘রমযান’ এর শাব্দিক অর্থ দগ্ধ করা’। সিয়াম সাধনার উত্তাপে, ধৈর্যের অগ্নিদহনে মুসলমান মাত্রই এই মাসে কুপ্রবৃত্তিকে দগ্ধ করে শুদ্ধ পরিশোধিত মানুষে পরিণত হয়। তাই রমযানুল মুবারক হচ্ছে, দৈহিক, আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণের মাস।

 

আরও পড়ুন: ২ মিনিটে ভাঙা হাড় জুড়ে যাবে! যুগান্তকারী ‘Bone Glue’ আবিষ্কার চিনের বিজ্ঞানীদের

নৈতিক পরিশুদ্ধিঃ যখন রমযান মাস শুরু হয়, মহান আল্লাহ্ জান্নাতের দরজা উম্মুক্ত করে দেন, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখেন। যার কারণে ইবাদাত, যিকির, তেলাওয়াত, কৃচছ্র সাধনা ও আল্লাহর একনিষ্ঠ আনুগত্যের স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পানাহার ও পাপাচার ত্যাগ করলেই রোযা পালন হয় না, সেই সঙ্গে সর্বপ্রকার অন্যায় ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অন্তরকে করতে হবে পরিচ্ছন্ন। তবেই রোযা মুমিনের জীবনে নিয়ে আসবে অফুরন্ত রহমত ও বরকত। এই প্রসঙ্গে মহানবী সা. বলেন ­ ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোযা রাখে, সে যেন কোনও রকম অশ্লীলতা ও হই-হুল্লোড় না করে। কেউ যদি তাকে গালিগালাজ বা তার সঙ্গে ঝগড়া করে সে যেন বলে ‘আমি রোযাদার’।’’(বুখারি, মুসলিম) । রোযা ধৈর্য, সংযম ও নৈতিক উৎকর্ষের জন্ম দেয়। শিষ্টাচারের মাধ্যমে নৈতিক চরিত্র গঠন রমযানের সিয়াম সাধনার একটি মৌলিক শিক্ষা।

আরও পড়ুন: শুধু রমযান নয়, কখনোই অনুমতি দেওয়া হবে না: ফ্যাশন শো নিয়ে আবদুল্লাহ

 

আরও পড়ুন: রমযান: হৃদয় পরিবর্তনের বরকতময় এক মাস

সামাজিক পরিশুদ্ধি : শুদ্ধতার এই অমোঘ মাসটিতে সাধনায় সিদ্ধি লাভ করার সুযোগ অবারিত হয়। সিয়ামের অর্থ হচ্ছে তাক্ওয়ার (খোদাভীতির) অনুশীলন আর তাক্ওয়ার অনুশীলনই অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরির অন্যতম হাতিয়ার। রমযান মানুষের মধ্যে মানবিকতাবোধের উন্মেষ ঘটায়।মহানবী সা.-এর ভাষায় ­ ‘সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যরে মাস মাহে রমযান।’ (বায়হাকী)

 

কেননা, ধনী ও বিত্তশালীরা সারাদিন রোযা রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জঠর জ্বালার দহন-বেদনা বুঝতে সক্ষম হন। ফলে তাদের মধ্যে সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। রমযান মাসে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে অর্থ ব্যয় করা অত্যন্ত সওয়াবের (পুণ্যের) কাজ। মহানবী সা. বলেন ­ ‘হে আয়েশা! অভাবগ্রস্তকে ফেরত দিয়ো না। একটি খেজুরকে টুকরো টুকরো করে হলেও দান করো। দরিদ্র মানুষকে ভালোবেসে কাছে টানো। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ তোমাকে কাছে টানবেন।’

 

সমাজের প্রতিটি সদস্য সিয়াম সাধনার (রোযার) ফলে অর্জিত সহমর্মিতার শিক্ষা বছরের বাকি ১১ মাসে যদি অনুশীলন করতে পারে, তাহলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়া সম্ভব। রমযান মাস এলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্য-ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী মওজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অত্যধিক মুনাফা লাভের আশায়। এটা অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় কাজ। মহানবী সা. বলেছেন ­‘মওজুদদার অভিশপ্ত।’

 

রমযানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা, কামনা-বাসনা প্রভৃতি অন্যায় আচরণ পরিহার করে, মানবীয় জীবনের দীক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করে থাকে। অতএব, মাহে রমযানের সিয়াম (রোযা) সাধনা আল্লাহ্পাকের এক অপূর্ব নিয়ামত, যা অফুরন্ত কল্যাণের পথ উন্মোচিত করে।