৩০ জুন ২০২৫, সোমবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উত্তর ও পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার নতুন আক্রমণ, ৫০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার
  • / 32

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: উত্তর এবং পূর্ব ইউক্রেনে ব্যাপক সামরিক আগ্রাসন শুরু করেছে রাশিয়া। মার্কিন সংবাদমাধ্যম The Wall Street Journal-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, রুশ ফৌজ ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের আঞ্চলিক রাজধানী সুমি থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে পৌঁছে গিয়েছে। এই অভিযানে রাশিয়া মোতায়েন করেছে ৫০ হাজারেরও বেশি সেনা। রিজ়ার্ভ বাহিনীতেও রয়েছে প্রায় সমসংখ্যক সৈন্য। পাশাপাশি, ব্যবহার করা হচ্ছে যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল বহর।

রুশ ভূখণ্ড কুর্স্ক পুনর্দখলের পর চলতি মাসের শুরুতেই নতুন করে স্থলপথে আক্রমণ শুরু করেছে পুতিনের বাহিনী। পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে (ডনেৎস্ক ও লুহানস্ক) এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ ৫০ শতাংশেরও বেশি। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর এই দ্বিতীয়বার রাশিয়াকে এমন সরাসরি এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখা গেল।

ইউক্রেনের শীর্ষ সেনাকর্তা জেনারেল ওলেকজান্ডার সিরস্কি রাশিয়ার অগ্রগতির কথা স্বীকার করে বলেছেন, “সংখ্যার জোরে রুশ বাহিনী আমাদের ছাপিয়ে গিয়েছে এবং সেই কৌশলেই তারা অঞ্চল দখলের চেষ্টা করছে।” যুদ্ধবিদ্যার নিরিখে স্থলভূমিতে সফল আক্রমণের জন্য প্রয়োজন হয় তিনগুণ সৈন্য এবং আকাশপথে আধিপত্য—এই সূত্রই প্রয়োগ করছে রাশিয়া।

আরও পড়ুন: রাশিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি: ‘ইরানকে পরমাণু অস্ত্র পাঠাতে প্রস্তুত একাধিক দেশ’

তবুও ইউক্রেন সেনা বাহিনী এখনো প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। জেনারেল সিরস্কির কথায়, “আমাদের এলিট ইউনিটগুলিকে সুমির প্রতিরক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে এবং কিছু জায়গায় রুশ বাহিনীকে পিছু হটতেও হয়েছে।” ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির দফতরের অধীন গুপ্তচর সংস্থা ‘হার’-এর স্পেশাল ফোর্স ইউনিটও সক্রিয়ভাবে এই প্রতিরোধে অংশ নিচ্ছে।

আরও পড়ুন: ইরানের খামেনিকে হত্যার সম্ভাব্য প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন প্রত্যাখ্যান করলেন পুতিন

২০২১ সালে রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া জাপোরিজিয়া ও খেরসন পুনর্দখলের পর, এবারও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেন। কিন্তু মার্কিন সামরিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে কিয়েভে সাহায্য বন্ধ হওয়ায় রাশিয়ার সামরিক পাল্লা ভারী হয়েছে।

আরও পড়ুন: ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

রুশ বাহিনী ধারাবাহিকভাবে ড্রোন, যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। গত এক মাসে প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়ে রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্র প্রসারিত করেছে। এর ফলে ইউক্রেনকেও তার ‘ওয়ার ফ্রন্ট’ বড় করতে হচ্ছে, যার ফলে প্রতিরক্ষাব্যূহ ছিদ্রসন্ধানযোগ্য হয়ে উঠছে।

রাশিয়ার এই নতুন আক্রমণ ইউক্রেনের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, বিশেষ করে সামরিক সাহায্যের ঘাটতি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আসন্ন সপ্তাহগুলিতে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

উত্তর ও পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার নতুন আক্রমণ, ৫০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন

আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: উত্তর এবং পূর্ব ইউক্রেনে ব্যাপক সামরিক আগ্রাসন শুরু করেছে রাশিয়া। মার্কিন সংবাদমাধ্যম The Wall Street Journal-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, রুশ ফৌজ ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের আঞ্চলিক রাজধানী সুমি থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে পৌঁছে গিয়েছে। এই অভিযানে রাশিয়া মোতায়েন করেছে ৫০ হাজারেরও বেশি সেনা। রিজ়ার্ভ বাহিনীতেও রয়েছে প্রায় সমসংখ্যক সৈন্য। পাশাপাশি, ব্যবহার করা হচ্ছে যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল বহর।

রুশ ভূখণ্ড কুর্স্ক পুনর্দখলের পর চলতি মাসের শুরুতেই নতুন করে স্থলপথে আক্রমণ শুরু করেছে পুতিনের বাহিনী। পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে (ডনেৎস্ক ও লুহানস্ক) এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ ৫০ শতাংশেরও বেশি। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর এই দ্বিতীয়বার রাশিয়াকে এমন সরাসরি এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখা গেল।

ইউক্রেনের শীর্ষ সেনাকর্তা জেনারেল ওলেকজান্ডার সিরস্কি রাশিয়ার অগ্রগতির কথা স্বীকার করে বলেছেন, “সংখ্যার জোরে রুশ বাহিনী আমাদের ছাপিয়ে গিয়েছে এবং সেই কৌশলেই তারা অঞ্চল দখলের চেষ্টা করছে।” যুদ্ধবিদ্যার নিরিখে স্থলভূমিতে সফল আক্রমণের জন্য প্রয়োজন হয় তিনগুণ সৈন্য এবং আকাশপথে আধিপত্য—এই সূত্রই প্রয়োগ করছে রাশিয়া।

আরও পড়ুন: রাশিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি: ‘ইরানকে পরমাণু অস্ত্র পাঠাতে প্রস্তুত একাধিক দেশ’

তবুও ইউক্রেন সেনা বাহিনী এখনো প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। জেনারেল সিরস্কির কথায়, “আমাদের এলিট ইউনিটগুলিকে সুমির প্রতিরক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে এবং কিছু জায়গায় রুশ বাহিনীকে পিছু হটতেও হয়েছে।” ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির দফতরের অধীন গুপ্তচর সংস্থা ‘হার’-এর স্পেশাল ফোর্স ইউনিটও সক্রিয়ভাবে এই প্রতিরোধে অংশ নিচ্ছে।

আরও পড়ুন: ইরানের খামেনিকে হত্যার সম্ভাব্য প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন প্রত্যাখ্যান করলেন পুতিন

২০২১ সালে রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া জাপোরিজিয়া ও খেরসন পুনর্দখলের পর, এবারও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেন। কিন্তু মার্কিন সামরিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে কিয়েভে সাহায্য বন্ধ হওয়ায় রাশিয়ার সামরিক পাল্লা ভারী হয়েছে।

আরও পড়ুন: ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

রুশ বাহিনী ধারাবাহিকভাবে ড্রোন, যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। গত এক মাসে প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়ে রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্র প্রসারিত করেছে। এর ফলে ইউক্রেনকেও তার ‘ওয়ার ফ্রন্ট’ বড় করতে হচ্ছে, যার ফলে প্রতিরক্ষাব্যূহ ছিদ্রসন্ধানযোগ্য হয়ে উঠছে।

রাশিয়ার এই নতুন আক্রমণ ইউক্রেনের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, বিশেষ করে সামরিক সাহায্যের ঘাটতি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আসন্ন সপ্তাহগুলিতে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।