০৩ নভেম্বর ২০২৫, সোমবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Badruddin Umar: ইন্তেকাল করলেন লেখক, গবেষক বদরুদ্দীন উমর (ইন্না লিল্লাহে)

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রবিবার
  • / 283

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: ইন্তেকাল করলেন লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি (Badruddin Umar) বদরুদ্দীন উমর ( ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৪। দীর্ঘদিন ধরে নানা রকম শারিরীক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

জানা গেছে, রবিবার সকাল স্থানীয় সময় সাড়ে ৯ টা নাগাদ বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (Badruddin Umar)। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক মইনুল হক

ফয়জুল হাকিম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঢাকার এক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, প্রায় এক মাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। এই সময়কালে  একাধিকবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: TMCP-র প্রতিষ্ঠা দিবসে বিজেপিকে ‘ললিপপ সরকার’ বলে আক্রমণ Mamata Banerjee-র

বদরুদ্দীন উমর বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক ছিলেন। এছাড়া রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়িয়ে তিনি একজন লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন ও নানা প্রয়োজনের সময় তিনি দক্ষতার সঙ্গে বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

আরও পড়ুন: মাত্র ৫৫ তেই প্রয়াত পাঠচক্র কোচ পার্থ সেন

তার উল্লেখযোগ্য গবেষণাধর্মী গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ (তিন খণ্ডে), ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি’, ‘বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর’, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ’ এবং ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক’। ষাটের দশকে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আর ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে তার লেখা বইগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করা বদরুদ্দীন উমর পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।

তার জন্ম ( ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর)  বর্ধমান জেলার এক উচ্চবিত্ত পরিবারে। বাবা বিখ্যাত রাজনীতিবিদ আবুল হাশিম, অবিভক্ত বাংলায় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বদরুদ্দীন উমরের পিতা আবুল হাশিম ছিলেন এই অঞ্চলে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, তিনি অখণ্ড বাংলার পক্ষে কাজ করেছেন। তৎকালীন রাজনৈতিক কোনও কারণবশত ১৯৫০ সালে সপরিবারে ঢাকায় চলে যান আবুল হাশিম। ১৯৫২ সালে সেই ভাষা-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরে এই আন্দোলন নিয়ে উমর অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি, বিশ্লেষণ পদ্ধতি, কঠিন শ্রম দিয়ে গবেষণাকাজ সম্পন্ন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে উমর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণা প্রকল্পে কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড যান এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন্স কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং দেশে ফিরে পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে উমর দর্শন বিভাগ ছেড়ে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে ১৯৬৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে সরাসরি বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হন।

চলতি বছর লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরসহ ৮ বিশিষ্টজনকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার। তবে বদরুদ্দীন উমর পুরস্কারটি ফিরিয়ে দেন।

এই প্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটি গ্রহণ করিনি।

এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

 

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

Badruddin Umar: ইন্তেকাল করলেন লেখক, গবেষক বদরুদ্দীন উমর (ইন্না লিল্লাহে)

আপডেট : ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: ইন্তেকাল করলেন লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি (Badruddin Umar) বদরুদ্দীন উমর ( ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৪। দীর্ঘদিন ধরে নানা রকম শারিরীক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

জানা গেছে, রবিবার সকাল স্থানীয় সময় সাড়ে ৯ টা নাগাদ বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (Badruddin Umar)। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক মইনুল হক

ফয়জুল হাকিম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঢাকার এক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, প্রায় এক মাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। এই সময়কালে  একাধিকবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: TMCP-র প্রতিষ্ঠা দিবসে বিজেপিকে ‘ললিপপ সরকার’ বলে আক্রমণ Mamata Banerjee-র

বদরুদ্দীন উমর বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক ছিলেন। এছাড়া রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়িয়ে তিনি একজন লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন ও নানা প্রয়োজনের সময় তিনি দক্ষতার সঙ্গে বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

আরও পড়ুন: মাত্র ৫৫ তেই প্রয়াত পাঠচক্র কোচ পার্থ সেন

তার উল্লেখযোগ্য গবেষণাধর্মী গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ (তিন খণ্ডে), ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি’, ‘বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর’, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ’ এবং ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক’। ষাটের দশকে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আর ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে তার লেখা বইগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করা বদরুদ্দীন উমর পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।

তার জন্ম ( ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর)  বর্ধমান জেলার এক উচ্চবিত্ত পরিবারে। বাবা বিখ্যাত রাজনীতিবিদ আবুল হাশিম, অবিভক্ত বাংলায় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বদরুদ্দীন উমরের পিতা আবুল হাশিম ছিলেন এই অঞ্চলে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, তিনি অখণ্ড বাংলার পক্ষে কাজ করেছেন। তৎকালীন রাজনৈতিক কোনও কারণবশত ১৯৫০ সালে সপরিবারে ঢাকায় চলে যান আবুল হাশিম। ১৯৫২ সালে সেই ভাষা-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরে এই আন্দোলন নিয়ে উমর অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি, বিশ্লেষণ পদ্ধতি, কঠিন শ্রম দিয়ে গবেষণাকাজ সম্পন্ন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে উমর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণা প্রকল্পে কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড যান এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন্স কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং দেশে ফিরে পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে উমর দর্শন বিভাগ ছেড়ে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে ১৯৬৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে সরাসরি বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হন।

চলতি বছর লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরসহ ৮ বিশিষ্টজনকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার। তবে বদরুদ্দীন উমর পুরস্কারটি ফিরিয়ে দেন।

এই প্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটি গ্রহণ করিনি।

এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।