১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোযায় আপন শরীর-মন শুদ্ধ হয়

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 31

সোনালি চক্রবর্তী বন্দোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। পবিত্র রমযান মাসের রোযা সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পুবের কলমের পাঠকের জন্য নিজেই কলম ধরলেন।

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক  : পবিত্র রমজান মাসে ধর্মনিষ্ঠ মুসলমানরা যে রোজা পালন করেন, আমি তার মধ্যে উপবাসের তপশ্চর্যাকে খুঁজে পাই। দিনান্তে সকলে মিলে তাঁরা যে ইফতার উদ্যাপন করেন, তার মধ্যে পাই কৌম-ভোজনের পরম্পরাকে। এই সবেরই মধ্যে আছে আন্তঃ-সাংস্কৃতিক ব্যঞ্জনা।

সত্যিই বলছি, তপঃক্লিষ্ট উপবাসের আবেদন সর্বজনীন। এগারো-বারো ক্লাসে পার্ক সার্কাস অঞ্চলে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে (কিংবা পরবর্তী কালে প্রেসিডেন্সি কলেজ কি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে) পড়ার সময় যখনই চারপাশে রমজানের রোজা পালন দেখতাম, তখনই আমার চোখের সামনে ফুটে উঠত ঠাকুরমা প্রফুল্লনলিনীর মুখচ্ছবি। মধ্যযৌবনে বিধবা হওয়া ইস্তক আমার ঠাকুরমা একাদশী-অম্বুবাচীতে যে নিরম্বু উপবাস করতেন, তার সঙ্গে রোজার অনশনে আমি কোনও পার্থক্য দেখিনি।

আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকে স্টেশন, রোযাদারদের হাতে ইফতারের সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন প্রাক্তন হকি আম্পায়ার

রোজার পর ইফতারে যে সানন্দ সার্বজনিক ভোজ হয়, আমি তার মধ্যেও খুঁজে পাই গুষ্ঠিসুখের আহ্লাদ। বর্ধমান জেলায় আমার শ্বশুরবাড়ির গ্রামে কালীপুজোয় দিনভর উপোস করার পর পুজোশেষে সবাই যে একসঙ্গে খেতে বসে, তার সঙ্গে ইফতারের পংক্তিভোজনের কোনও তফাৎ আমি খুঁজে পাই না। বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে কিংবা আমাদের ঠাকুরনগরে মতুয়াতীর্থে যে সামূহিকতা দেখি, সেই একই সামূহিকতার প্রকাশ সকল সম্মিলন-উৎসবে।

আরও পড়ুন: রোযা রাখার ৮টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

আসলে এই সবই হল নীতির ভিত্তিতে গোষ্ঠী-বন্ধন মজবুত করার রীতি-প্রকরণ। উপবাসে আপন শরীর-মন শুদ্ধ হল, সামূহিক উপবাসভঙ্গে গোষ্ঠীর প্রীতি-বন্ধন শক্ত হল , এই হল তাৎপর্য। উপবাসভঙ্গের মহিমা বুদ্ধের পায়স-ভক্ষণেও দেখি, মহাত্মা গান্ধির শরবত-পানেও দেখি ­ যেন সকল মুক্তিকামী মানুষের সাধনা মূর্ত হয় তপস্যার এই সব উদ্যাপনে। সাধনাশীর্ণ মানুষের চেহারা সর্বত্রই এক।

আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যে আজ শুরু রোযা

আমাদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত-পালির পাশাপাশি আরবি- ফার্সিও পড়ানো হয়, বহু সংস্কৃতির উদ্ভাস পাই এই শিক্ষাঙ্গনে। এই বহুত্বের আধারে, সকল ধর্মের সকল শ্রেষ্ঠ প্রকাশের মূল তাৎপর্য পাই একটিই বাক্যে, আপনারে লইয়া বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে! রোজা-ইফতারের বাণীও ওইটিই, সকলের তরে সকলে আমরা– প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রোযায় আপন শরীর-মন শুদ্ধ হয়

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক  : পবিত্র রমজান মাসে ধর্মনিষ্ঠ মুসলমানরা যে রোজা পালন করেন, আমি তার মধ্যে উপবাসের তপশ্চর্যাকে খুঁজে পাই। দিনান্তে সকলে মিলে তাঁরা যে ইফতার উদ্যাপন করেন, তার মধ্যে পাই কৌম-ভোজনের পরম্পরাকে। এই সবেরই মধ্যে আছে আন্তঃ-সাংস্কৃতিক ব্যঞ্জনা।

সত্যিই বলছি, তপঃক্লিষ্ট উপবাসের আবেদন সর্বজনীন। এগারো-বারো ক্লাসে পার্ক সার্কাস অঞ্চলে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে (কিংবা পরবর্তী কালে প্রেসিডেন্সি কলেজ কি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে) পড়ার সময় যখনই চারপাশে রমজানের রোজা পালন দেখতাম, তখনই আমার চোখের সামনে ফুটে উঠত ঠাকুরমা প্রফুল্লনলিনীর মুখচ্ছবি। মধ্যযৌবনে বিধবা হওয়া ইস্তক আমার ঠাকুরমা একাদশী-অম্বুবাচীতে যে নিরম্বু উপবাস করতেন, তার সঙ্গে রোজার অনশনে আমি কোনও পার্থক্য দেখিনি।

আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকে স্টেশন, রোযাদারদের হাতে ইফতারের সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন প্রাক্তন হকি আম্পায়ার

রোজার পর ইফতারে যে সানন্দ সার্বজনিক ভোজ হয়, আমি তার মধ্যেও খুঁজে পাই গুষ্ঠিসুখের আহ্লাদ। বর্ধমান জেলায় আমার শ্বশুরবাড়ির গ্রামে কালীপুজোয় দিনভর উপোস করার পর পুজোশেষে সবাই যে একসঙ্গে খেতে বসে, তার সঙ্গে ইফতারের পংক্তিভোজনের কোনও তফাৎ আমি খুঁজে পাই না। বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে কিংবা আমাদের ঠাকুরনগরে মতুয়াতীর্থে যে সামূহিকতা দেখি, সেই একই সামূহিকতার প্রকাশ সকল সম্মিলন-উৎসবে।

আরও পড়ুন: রোযা রাখার ৮টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

আসলে এই সবই হল নীতির ভিত্তিতে গোষ্ঠী-বন্ধন মজবুত করার রীতি-প্রকরণ। উপবাসে আপন শরীর-মন শুদ্ধ হল, সামূহিক উপবাসভঙ্গে গোষ্ঠীর প্রীতি-বন্ধন শক্ত হল , এই হল তাৎপর্য। উপবাসভঙ্গের মহিমা বুদ্ধের পায়স-ভক্ষণেও দেখি, মহাত্মা গান্ধির শরবত-পানেও দেখি ­ যেন সকল মুক্তিকামী মানুষের সাধনা মূর্ত হয় তপস্যার এই সব উদ্যাপনে। সাধনাশীর্ণ মানুষের চেহারা সর্বত্রই এক।

আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যে আজ শুরু রোযা

আমাদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত-পালির পাশাপাশি আরবি- ফার্সিও পড়ানো হয়, বহু সংস্কৃতির উদ্ভাস পাই এই শিক্ষাঙ্গনে। এই বহুত্বের আধারে, সকল ধর্মের সকল শ্রেষ্ঠ প্রকাশের মূল তাৎপর্য পাই একটিই বাক্যে, আপনারে লইয়া বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে! রোজা-ইফতারের বাণীও ওইটিই, সকলের তরে সকলে আমরা– প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।