০২ জুন ২০২৫, সোমবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৮ বছর বয়সে গরুর গাড়ি চেপে বিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীকে স্বীকৃতি, মুলায়ম সিং যাদবের বর্ণময় জীবন

সামিমা এহসানা
  • আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২২, সোমবার
  • / 22

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: দীর্ঘ ৫ দশকেরও বেশি সময়ের জাতীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে ৮২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন মুলায়ম সিং যাদব। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ৩ বার সামলেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব থেকে পার্লামেন্ট, সব চ্যালেঞ্জকেই তুড়ি দিয়ে জয় করেছেন। রাজনৈতিক ওঠাপড়ার পাশাপাশি সামলেছেন ব্যক্তিগত জীবনের ঝড় ঝাপ্টা।১৯৫৭ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মুলায়ম সিং যাদব যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র, তখন তাঁর বিয়ে হয় মালতী দেবীর সঙ্গে। মালতী দেবী অখিলেশ যাদবের মা। মালতী দেবীর সঙ্গে সুখেই কাটছিল মুলায়মের দাম্পত্য জীবন। বলা হয় গরুর গাড়ি চেপে বিয়ে করতে গেছিলেন মুলায়ম সিং যাদব।

রাজনৈতিক সাফল্যের শীর্ষে থাকাকালীন মুলায়মের সঙ্গে পরিচয় হয় সাধনা গুপ্তার। ১৯৮২ সালে মুলায়ম যখন লোকদলের সভাপতি তখন সাধনা দলের সাধারণ একজন কর্মী। সাধনা ছিলেন প্রকৃত সুন্দরি। মুলায়ম যখন সাধনাকে ক্রমশ পছন্দ করতে শুরু করেন, সাধনাও পাল্টা স্বপ্ন বুনতে থাকেন মুলায়মকে ঘিরে। এই স্বপ্নের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের দুজনেরই প্রথম বিয়ে।

আরও পড়ুন: ‘উর্দু পড়িয়ে বাচ্চাদের মৌলবি বানাতে চান’? বিধানসভায় সপা নেতাকে কদর্য আক্রমণ যোগীর

মুলায়ম যখন সংসারের সূত্রে বাঁধা তখন সাধনাও ছিলেন চন্দ্রপ্রকাশ গুপ্তার ঘরণী। চন্দ্রপ্রকাশ ফারুখাবাদের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। মুলায়মের টানে বিবাহ বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন সাধনা। চন্দ্রপ্রকাশের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন সাধনা। আরও একটি বড় বাধা ছিল, তাঁদের বয়সের পার্থক্য। মুলায়মের থেকে ২০ বছরের ছোটো ছিলেন সাধনা। জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে একথা প্রকশ্যে আসলে তা কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি রূপ নিতে পারে, একথা খুব ভালো করেই জানতেন মুলায়ম সিং যাদব। ফলে সাধনাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া বেশ কঠিন কাজই ছিল। কিন্তু খুব বেশি দিন সত্য লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৮ সালে সাধনার গর্ভে জন্ম নিল প্রতীক। মালতী দেবীও ক্রমশ বুঝতে পারলেন তাঁর স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা। ৯০ এর দশকে এই গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লেও প্রকাশ্যে এই বিষয়ে মুখ খোলার সাহস কেও দেখায়নি। এই সময় সৎ মা-র কথা জানতে পারেন অখিলেশ যাদব।

আরও পড়ুন: সংবিধান বাঁচাতে দিদির পাশেই থাকবে সপা: অখিলেশ যাদব

১৯৯৩-২০০৭ সালে যখন মুলায়ম সিং যাদব ক্ষমতার শীর্ষে, এই সময় সম্পত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে সাধনার। ২০০৩ সালে অখিলেশে যাদবের মায়ের মৃত্যুর পর মুলায়ম ব্যস্ত হয়ে পড়েন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে। উইকিপিডিয়ার মতে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ২০০৩ সালে সাধনাকে বিয়ে করেন মুলায়ম। কিন্তু আসল গল্পটা অন্য। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর সাধনা চেয়েছিলেন সামাজিক স্বীকৃতি পেতে। কিন্তু মুলায়ম সেই সিদ্ধান্ত নিতে বারবার পিছু পা হয়েছেন তাঁর পরিবারের চাপে। সাধনা-মুলায়মের এই যাত্রায় সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান অখিলেশ যাদব। ২০০৬ সালে সাধনা অমর সিং এর সঙ্গে যোগাযোগ করে মুলায়মকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। মুলায়ম, সাধনা ও তাঁর পুত্র প্রতীককে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে রাজি হলেও বেঁকে বসেন অখিলেশ। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই জাতীয় রাজনীতি আর ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন পিছনে ফেলে চিরবিদায় জানালেন উত্তরপ্রদেশের দুঁদে রাজনীতিবিদ মুলায়ম সিং যাদব।

আরও পড়ুন: রাজ্যে ২৪ জন আইপিএস বদলি,  বদলির তালিকায় এসপি, ডিআইজি অ্যাডিশনাল এসপি-রা

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

১৮ বছর বয়সে গরুর গাড়ি চেপে বিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীকে স্বীকৃতি, মুলায়ম সিং যাদবের বর্ণময় জীবন

আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২২, সোমবার

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: দীর্ঘ ৫ দশকেরও বেশি সময়ের জাতীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে ৮২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন মুলায়ম সিং যাদব। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ৩ বার সামলেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব থেকে পার্লামেন্ট, সব চ্যালেঞ্জকেই তুড়ি দিয়ে জয় করেছেন। রাজনৈতিক ওঠাপড়ার পাশাপাশি সামলেছেন ব্যক্তিগত জীবনের ঝড় ঝাপ্টা।১৯৫৭ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মুলায়ম সিং যাদব যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র, তখন তাঁর বিয়ে হয় মালতী দেবীর সঙ্গে। মালতী দেবী অখিলেশ যাদবের মা। মালতী দেবীর সঙ্গে সুখেই কাটছিল মুলায়মের দাম্পত্য জীবন। বলা হয় গরুর গাড়ি চেপে বিয়ে করতে গেছিলেন মুলায়ম সিং যাদব।

রাজনৈতিক সাফল্যের শীর্ষে থাকাকালীন মুলায়মের সঙ্গে পরিচয় হয় সাধনা গুপ্তার। ১৯৮২ সালে মুলায়ম যখন লোকদলের সভাপতি তখন সাধনা দলের সাধারণ একজন কর্মী। সাধনা ছিলেন প্রকৃত সুন্দরি। মুলায়ম যখন সাধনাকে ক্রমশ পছন্দ করতে শুরু করেন, সাধনাও পাল্টা স্বপ্ন বুনতে থাকেন মুলায়মকে ঘিরে। এই স্বপ্নের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের দুজনেরই প্রথম বিয়ে।

আরও পড়ুন: ‘উর্দু পড়িয়ে বাচ্চাদের মৌলবি বানাতে চান’? বিধানসভায় সপা নেতাকে কদর্য আক্রমণ যোগীর

মুলায়ম যখন সংসারের সূত্রে বাঁধা তখন সাধনাও ছিলেন চন্দ্রপ্রকাশ গুপ্তার ঘরণী। চন্দ্রপ্রকাশ ফারুখাবাদের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। মুলায়মের টানে বিবাহ বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন সাধনা। চন্দ্রপ্রকাশের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন সাধনা। আরও একটি বড় বাধা ছিল, তাঁদের বয়সের পার্থক্য। মুলায়মের থেকে ২০ বছরের ছোটো ছিলেন সাধনা। জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে একথা প্রকশ্যে আসলে তা কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি রূপ নিতে পারে, একথা খুব ভালো করেই জানতেন মুলায়ম সিং যাদব। ফলে সাধনাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া বেশ কঠিন কাজই ছিল। কিন্তু খুব বেশি দিন সত্য লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৮ সালে সাধনার গর্ভে জন্ম নিল প্রতীক। মালতী দেবীও ক্রমশ বুঝতে পারলেন তাঁর স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা। ৯০ এর দশকে এই গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লেও প্রকাশ্যে এই বিষয়ে মুখ খোলার সাহস কেও দেখায়নি। এই সময় সৎ মা-র কথা জানতে পারেন অখিলেশ যাদব।

আরও পড়ুন: সংবিধান বাঁচাতে দিদির পাশেই থাকবে সপা: অখিলেশ যাদব

১৯৯৩-২০০৭ সালে যখন মুলায়ম সিং যাদব ক্ষমতার শীর্ষে, এই সময় সম্পত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে সাধনার। ২০০৩ সালে অখিলেশে যাদবের মায়ের মৃত্যুর পর মুলায়ম ব্যস্ত হয়ে পড়েন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে। উইকিপিডিয়ার মতে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ২০০৩ সালে সাধনাকে বিয়ে করেন মুলায়ম। কিন্তু আসল গল্পটা অন্য। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর সাধনা চেয়েছিলেন সামাজিক স্বীকৃতি পেতে। কিন্তু মুলায়ম সেই সিদ্ধান্ত নিতে বারবার পিছু পা হয়েছেন তাঁর পরিবারের চাপে। সাধনা-মুলায়মের এই যাত্রায় সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান অখিলেশ যাদব। ২০০৬ সালে সাধনা অমর সিং এর সঙ্গে যোগাযোগ করে মুলায়মকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। মুলায়ম, সাধনা ও তাঁর পুত্র প্রতীককে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে রাজি হলেও বেঁকে বসেন অখিলেশ। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই জাতীয় রাজনীতি আর ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন পিছনে ফেলে চিরবিদায় জানালেন উত্তরপ্রদেশের দুঁদে রাজনীতিবিদ মুলায়ম সিং যাদব।

আরও পড়ুন: রাজ্যে ২৪ জন আইপিএস বদলি,  বদলির তালিকায় এসপি, ডিআইজি অ্যাডিশনাল এসপি-রা