১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ওয়াজাহাতকে গ্রেফতার, এক্স হ্যান্ডেলে সরব অমিত মালব্য

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 56

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই গুরুগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্যকারী শর্মিষ্ঠা পানোলিকে। এবার সেই অভিযোগ কর্তা ওয়াজাহাত খানকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। তিন তিন বার হাজিরা দেওয়ার জন্য শমন পাঠানো হয়েছিল। সেই শমন উপেক্ষা করার অপরাধে গত কয়েকদিন ধরেই ওয়াজাহাতকে খুঁজছিল পুলিশ।

অবশেষে সোমবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটের কেশবচন্দ্র সেন লেনের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হল তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন থানায় অনেকগুলি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বারবার তাঁকে হাজিরার নোটিস পাঠালেও পুলিশের কাছে যাননি তিনি। দিঘা-হাওড়ায় গিয়েও খোঁজ মেলেনি তাঁর।

পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গল্ফগ্রিন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ব্যক্তিই শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, যার ভিত্তিতে গ্রেফতার হন শর্মিষ্ঠা। সোমবার (৯ জুন, ২০২৫) আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা থেকে ওয়াজাহাতকে গ্রেফতার করা হয়। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, সোশাল মিডিয়ায় ঘৃণা ছড়ানো এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, বিএনএসের ১৯৬(১)(এ)/২৯৯/৩৫২/৩৫৩(১)(সি) ধারায় ওয়াজাহাতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

পহেলগাঁও কাণ্ডের প্রত্যাঘাতে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বলিউড তারকারা নীরব থাকায় তাঁদের বিঁধে সমাজমাধ্যমে এক ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের নয়া ‘পোস্টার গার্ল’ শর্মিষ্ঠা পানোলি। ওই ভিডিয়োতে বলিউড তারকাদের নিশানা করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, এমনকী মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও ‘ধর্মীয় বিষ’ উগরে দিয়েছিলেন। বিতর্কিত সেই ভিডিয়ো নিয়ে শোরগোল হতেই তড়িঘড়ি মুছে ফেলেন কলকাতার আনন্দপুরের অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা। যদিও তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ এনে খিদিরপুর থানায় নালিশ ঠোকেন ওয়াজাহাত খান। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩০ মে গুরুগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় পুণের এক আইন কলেজের পড়ুয়া শর্মিষ্ঠাকে। আর ওই গ্রেফতারি নিয়ে রে-রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ে গেরুয়া বাহিনী। গত ৫ জুন কলকাতা হাইকোর্টের তরফে তার জামিন মঞ্জুর করা হয়।

শর্মিষ্ঠা গ্রেফতার হওয়ার পরেই মামলাকারী ওয়াজাহাতের বিরুদ্ধে আসরে নেমে পড়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। গল্ফগ্রিন-সহ একাধিক থানায় তার বিরুদ্ধে হিন্দু দেব-দেবীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে পালটা নালিশ করা হয়। ২ জুন ‘শ্রীরাম স্বাভিমান পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের তরফে মামলা দায়ের করা হয়। সমাজমাধ্যমে হিন্দুত্ববাদীরা অবিলম্বে ওয়াজাহাতকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই ওয়াজাহাতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শমন পাঠায় গল্ফগ্রিন থানা। যদিও গত ১ জুন থেকে উধাও হয়ে যান শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে মামলাকারী। বেশ কয়েকবার শমন পাঠানো সত্ত্বেও দেখা না করায় ওয়াজাহাতের সন্ধানে তল্লাশিতে নামে পুলিশ।

তবে ওয়াজাহাতের গ্রেফতারির পরেই সরব হন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। তিনি ওজাহাতের গ্রেফতারি নিয়ে বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকেই নিশানা করেছেন। সোমবার, অমিত তাঁর এক্স-হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে বলেন, কলকাতা পুলিশ ওয়াজাহাতকে তার অপরাধের জন্য গ্রেফতার করেনি, তাকে নীরবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, কারণ অসম ও হরিয়ানা পুলিশ, হিন্দুদের নিশানা করে ওয়াজাহাতের আপত্তিকর পোস্টের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি এফআইআর করেছে। মালব্য আরও বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন শেখ শাহজাহানকে বাঁচাতে পারেননি, তেমনি তিনি ওয়াজাহাত খানকেও বাঁচাতে পারবেন না। ন্যায়বিচার হবে এবং আইনের জয় হবে। যারা ঘৃণা ছড়ায় তাদের কোনও রাজনৈতিক সুরক্ষা রক্ষা করতে পারবে না। ’

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ওয়াজাহাতকে গ্রেফতার, এক্স হ্যান্ডেলে সরব অমিত মালব্য

আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই গুরুগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্যকারী শর্মিষ্ঠা পানোলিকে। এবার সেই অভিযোগ কর্তা ওয়াজাহাত খানকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। তিন তিন বার হাজিরা দেওয়ার জন্য শমন পাঠানো হয়েছিল। সেই শমন উপেক্ষা করার অপরাধে গত কয়েকদিন ধরেই ওয়াজাহাতকে খুঁজছিল পুলিশ।

অবশেষে সোমবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটের কেশবচন্দ্র সেন লেনের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হল তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন থানায় অনেকগুলি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বারবার তাঁকে হাজিরার নোটিস পাঠালেও পুলিশের কাছে যাননি তিনি। দিঘা-হাওড়ায় গিয়েও খোঁজ মেলেনি তাঁর।

পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গল্ফগ্রিন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ব্যক্তিই শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, যার ভিত্তিতে গ্রেফতার হন শর্মিষ্ঠা। সোমবার (৯ জুন, ২০২৫) আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা থেকে ওয়াজাহাতকে গ্রেফতার করা হয়। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, সোশাল মিডিয়ায় ঘৃণা ছড়ানো এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, বিএনএসের ১৯৬(১)(এ)/২৯৯/৩৫২/৩৫৩(১)(সি) ধারায় ওয়াজাহাতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

পহেলগাঁও কাণ্ডের প্রত্যাঘাতে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বলিউড তারকারা নীরব থাকায় তাঁদের বিঁধে সমাজমাধ্যমে এক ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের নয়া ‘পোস্টার গার্ল’ শর্মিষ্ঠা পানোলি। ওই ভিডিয়োতে বলিউড তারকাদের নিশানা করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, এমনকী মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও ‘ধর্মীয় বিষ’ উগরে দিয়েছিলেন। বিতর্কিত সেই ভিডিয়ো নিয়ে শোরগোল হতেই তড়িঘড়ি মুছে ফেলেন কলকাতার আনন্দপুরের অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা। যদিও তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ এনে খিদিরপুর থানায় নালিশ ঠোকেন ওয়াজাহাত খান। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩০ মে গুরুগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় পুণের এক আইন কলেজের পড়ুয়া শর্মিষ্ঠাকে। আর ওই গ্রেফতারি নিয়ে রে-রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ে গেরুয়া বাহিনী। গত ৫ জুন কলকাতা হাইকোর্টের তরফে তার জামিন মঞ্জুর করা হয়।

শর্মিষ্ঠা গ্রেফতার হওয়ার পরেই মামলাকারী ওয়াজাহাতের বিরুদ্ধে আসরে নেমে পড়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। গল্ফগ্রিন-সহ একাধিক থানায় তার বিরুদ্ধে হিন্দু দেব-দেবীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে পালটা নালিশ করা হয়। ২ জুন ‘শ্রীরাম স্বাভিমান পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের তরফে মামলা দায়ের করা হয়। সমাজমাধ্যমে হিন্দুত্ববাদীরা অবিলম্বে ওয়াজাহাতকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই ওয়াজাহাতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শমন পাঠায় গল্ফগ্রিন থানা। যদিও গত ১ জুন থেকে উধাও হয়ে যান শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে মামলাকারী। বেশ কয়েকবার শমন পাঠানো সত্ত্বেও দেখা না করায় ওয়াজাহাতের সন্ধানে তল্লাশিতে নামে পুলিশ।

তবে ওয়াজাহাতের গ্রেফতারির পরেই সরব হন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। তিনি ওজাহাতের গ্রেফতারি নিয়ে বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকেই নিশানা করেছেন। সোমবার, অমিত তাঁর এক্স-হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে বলেন, কলকাতা পুলিশ ওয়াজাহাতকে তার অপরাধের জন্য গ্রেফতার করেনি, তাকে নীরবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, কারণ অসম ও হরিয়ানা পুলিশ, হিন্দুদের নিশানা করে ওয়াজাহাতের আপত্তিকর পোস্টের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি এফআইআর করেছে। মালব্য আরও বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন শেখ শাহজাহানকে বাঁচাতে পারেননি, তেমনি তিনি ওয়াজাহাত খানকেও বাঁচাতে পারবেন না। ন্যায়বিচার হবে এবং আইনের জয় হবে। যারা ঘৃণা ছড়ায় তাদের কোনও রাজনৈতিক সুরক্ষা রক্ষা করতে পারবে না। ’