০৯ জুন ২০২৫, সোমবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন্দ্রীয় সরকারের পেনশন নীতি, প্রতিবাদে লাগাতার শ্রমিক আন্দোলন

রফিকুল হাসান
  • আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২১, বুধবার
  • / 29

বিক্ষোভে শ্রমিকরা। ছবি- রূপেশ খাঁ।

কার্তিক ঘোষ, বাঁকুড়া: কেন্দ্রীয় সরকার ধারাবাহিকভাবে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে। একের পর এক অডিয়েন্স জারি করে শ্রমিকদের ভাতে মারার চেষ্টা করছে। যার প্রতিবাদে ডিভিসির এমটিপিএস প্রকল্পের কর্মরত শ্রমিকরা গত ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের দাবি পুরানো পেনশন নীতি ফিরিয়ে আনা হোক।

 এই প্রকল্পের জমিহারা, বাস্তুহারা ৫২০ টি পরিবার থেথে গ্রুপ সি/ডি ও আপগ্রেডেশন গ্রুপ বি কর্মীরা গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আন্দোলনরত কর্মীরা প্রত্যেকদিন অফিসে হাজিরা দেন এবং যারা শিফটিং ডিউটি করেন তারা বেলা ১১ টা থেকে একসাথে মিলিত হয়ে ১ ঘন্টা চিফ ইঞ্জিনিয়ারের অফিস বিদ্যুৎ ভবনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি অবিলম্বে সকল ভূমিহারা পরিবার থেকে ডিভিসিতে স্থায়ী চাকরি পাওয়া কর্মীদের পুরানো পেনশন স্কিমের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে তারা পেন ডাউন করে কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হবেন।   আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক দেবাশীষ মুখার্জী জানালেন গত শতাব্দীর আটের দশকের শেষে ডিভিসি এমটিপিএসের নির্মাণ কাজ শুরু করে। কারখানা করতে এখানকার বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষ জমি ও বাস্তু বাড়ি অধিগ্রহণ করার ব্যবস্থা করে দেয় রাজ্য সরকার। জমি ও বাস্তুহারাদের দাবি মত ১৯৯৪ সালে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে ডিভিসি ও রাজ্য  সরকারের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পর ৫২০ জন ভূমিহারাকে ডিভিসিতে স্থায়ী চাকরি দেওয়া হবে। লিখিত চুক্তিতে বলা হয় প্রকল্পের ৩ নম্বর ইউনিট চালু হওয়ার সাথে সাথে এই সমস্ত ভূমিহারাদের নিয়োগ করা হবে।  ১৯৯৮ সালে ডিভিসির ৩ টি ইউনিট থেকেই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করলেও ভূমিহারা পরিবার থেকে সকলকে নিয়োগ করা হয়নি। ২০০৪ সালের আগে পর্যন্ত ২৮০ জনকে নিয়োগ করা হলেও বাকিদের নিয়োগ হয় ২০০৮ সালে। ইতিমধ্যে ভারত সরকার একটি সার্কুলার প্রকাশ করে জানান ১ জানুয়ারি, ২০০৪ সালের পরে যারা কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় নিয়োগ হয়েছেন তারা পেনশন প্রকল্প থেকে বাদ যাবেন। দেবাশিসবাবু আরো বলেন, পরে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফের কেন্দ্রীয় সরকারের আরেকটি সার্কুলারে বলা হয় ১ জানুয়ারি ২০০৪ এর আগে যাদের ইন্টারভিউ হয়ে প্যানেল ভুক্ত হয়ে আছেন তারা পেনশন আওতার সুযোগ পাবেন। আন্দোলনকারী কর্মী প্রশান্ত মন্ডলের দাবি, তারা সকলেই চুক্তিমত ১৯৯৪ সাল থেকেই প্যানেল ভুক্ত। ডিভিসি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্যানেলের অর্ধেক চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ করে বাকিদের বঞ্চিত করেছে।  ডিভিসিতে জমি দিয়ে এক শরিককে ১৯৯৬ সালে চাকরি দেওয়া হয় অন্য শরিককে দেওয়া হল ২০০৮ সালে। প্রথম জন পেনশন পাবেন অথচ দ্বিতীয় জন কেন পাবেন না এই নিয়েই আমাদের আন্দোলন। এদের সকলেরই ২০০৪ সালের আগে ডিভিসি নিয়মানুযায়ী ইন্টারভিউ নিয়ে তালিকা ভুক্ত করেছে। নিয়োগ না করে ওদের চাকরির মেয়াদ যেমন কমেছে তেমনি পেনশন থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা অনৈতিক ও নিয়ম বিরুদ্ধ। 

আরও পড়ুন: আমাদের উদ্ধার করুন’ – অসহায় আফ্রিদি, রাফেজারা

এ বিষয়ে এমটিপিএসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্প প্রধান সঞ্জয়কুমার ঘোষ বলেন, “বিষয়টি আমার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তবে একজন কর্মী অবসর নেওয়ার পরে যদি পেনশন না পান তাহলে তার যে দুর্দশা হয় সেটা অনুভব করতে পারি। ওনারা যে দাবি পত্রটি দিয়েছেন সেটি বিবেচনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। উনারা প্রকল্পের উৎপাদন ব্যাহত না করে আন্দোলন করতেই পারেন”।

আরও পড়ুন: উজালা গ্যাসে কাটমানি, সংঘের নেত্রীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ

আরও পড়ুন: গরু খুটান উৎসবে নাচলেন মন্ত্রী, আর বিধায়ক কি করলেন

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কেন্দ্রীয় সরকারের পেনশন নীতি, প্রতিবাদে লাগাতার শ্রমিক আন্দোলন

আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২১, বুধবার

কার্তিক ঘোষ, বাঁকুড়া: কেন্দ্রীয় সরকার ধারাবাহিকভাবে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে। একের পর এক অডিয়েন্স জারি করে শ্রমিকদের ভাতে মারার চেষ্টা করছে। যার প্রতিবাদে ডিভিসির এমটিপিএস প্রকল্পের কর্মরত শ্রমিকরা গত ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের দাবি পুরানো পেনশন নীতি ফিরিয়ে আনা হোক।

 এই প্রকল্পের জমিহারা, বাস্তুহারা ৫২০ টি পরিবার থেথে গ্রুপ সি/ডি ও আপগ্রেডেশন গ্রুপ বি কর্মীরা গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আন্দোলনরত কর্মীরা প্রত্যেকদিন অফিসে হাজিরা দেন এবং যারা শিফটিং ডিউটি করেন তারা বেলা ১১ টা থেকে একসাথে মিলিত হয়ে ১ ঘন্টা চিফ ইঞ্জিনিয়ারের অফিস বিদ্যুৎ ভবনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি অবিলম্বে সকল ভূমিহারা পরিবার থেকে ডিভিসিতে স্থায়ী চাকরি পাওয়া কর্মীদের পুরানো পেনশন স্কিমের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে তারা পেন ডাউন করে কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হবেন।   আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক দেবাশীষ মুখার্জী জানালেন গত শতাব্দীর আটের দশকের শেষে ডিভিসি এমটিপিএসের নির্মাণ কাজ শুরু করে। কারখানা করতে এখানকার বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষ জমি ও বাস্তু বাড়ি অধিগ্রহণ করার ব্যবস্থা করে দেয় রাজ্য সরকার। জমি ও বাস্তুহারাদের দাবি মত ১৯৯৪ সালে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে ডিভিসি ও রাজ্য  সরকারের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পর ৫২০ জন ভূমিহারাকে ডিভিসিতে স্থায়ী চাকরি দেওয়া হবে। লিখিত চুক্তিতে বলা হয় প্রকল্পের ৩ নম্বর ইউনিট চালু হওয়ার সাথে সাথে এই সমস্ত ভূমিহারাদের নিয়োগ করা হবে।  ১৯৯৮ সালে ডিভিসির ৩ টি ইউনিট থেকেই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করলেও ভূমিহারা পরিবার থেকে সকলকে নিয়োগ করা হয়নি। ২০০৪ সালের আগে পর্যন্ত ২৮০ জনকে নিয়োগ করা হলেও বাকিদের নিয়োগ হয় ২০০৮ সালে। ইতিমধ্যে ভারত সরকার একটি সার্কুলার প্রকাশ করে জানান ১ জানুয়ারি, ২০০৪ সালের পরে যারা কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় নিয়োগ হয়েছেন তারা পেনশন প্রকল্প থেকে বাদ যাবেন। দেবাশিসবাবু আরো বলেন, পরে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফের কেন্দ্রীয় সরকারের আরেকটি সার্কুলারে বলা হয় ১ জানুয়ারি ২০০৪ এর আগে যাদের ইন্টারভিউ হয়ে প্যানেল ভুক্ত হয়ে আছেন তারা পেনশন আওতার সুযোগ পাবেন। আন্দোলনকারী কর্মী প্রশান্ত মন্ডলের দাবি, তারা সকলেই চুক্তিমত ১৯৯৪ সাল থেকেই প্যানেল ভুক্ত। ডিভিসি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্যানেলের অর্ধেক চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ করে বাকিদের বঞ্চিত করেছে।  ডিভিসিতে জমি দিয়ে এক শরিককে ১৯৯৬ সালে চাকরি দেওয়া হয় অন্য শরিককে দেওয়া হল ২০০৮ সালে। প্রথম জন পেনশন পাবেন অথচ দ্বিতীয় জন কেন পাবেন না এই নিয়েই আমাদের আন্দোলন। এদের সকলেরই ২০০৪ সালের আগে ডিভিসি নিয়মানুযায়ী ইন্টারভিউ নিয়ে তালিকা ভুক্ত করেছে। নিয়োগ না করে ওদের চাকরির মেয়াদ যেমন কমেছে তেমনি পেনশন থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা অনৈতিক ও নিয়ম বিরুদ্ধ। 

আরও পড়ুন: আমাদের উদ্ধার করুন’ – অসহায় আফ্রিদি, রাফেজারা

এ বিষয়ে এমটিপিএসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্প প্রধান সঞ্জয়কুমার ঘোষ বলেন, “বিষয়টি আমার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তবে একজন কর্মী অবসর নেওয়ার পরে যদি পেনশন না পান তাহলে তার যে দুর্দশা হয় সেটা অনুভব করতে পারি। ওনারা যে দাবি পত্রটি দিয়েছেন সেটি বিবেচনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। উনারা প্রকল্পের উৎপাদন ব্যাহত না করে আন্দোলন করতেই পারেন”।

আরও পড়ুন: উজালা গ্যাসে কাটমানি, সংঘের নেত্রীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ

আরও পড়ুন: গরু খুটান উৎসবে নাচলেন মন্ত্রী, আর বিধায়ক কি করলেন