১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজ্যে ১০ দিনে রাজনৈতিক সহিংসতায় খুন ৭ জন, সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদানের আবেদন বিশিষ্টদের

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৯ জুন ২০২৩, সোমবার
  • / 22

আবদুল ওদুদ:  রাজ্যে ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট।  ভোটের দিনক্ষণ  ঘোষণার পর থেকে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে লাগাতার আসছে অশান্তির খবর। মনোনয়ন থেকে স্ক্রুটিনি পর্ব, নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত নির্বাচনী হিংসায় মৃত ৭। যদিও পুলিশের রিপোর্টে মৃত্যুর কোনও রিপোর্ট কমিশনে পাঠানো হয়নি। যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে আহত ১০৪ জন। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। এছাড়াও বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ১১টি। উদ্ধার হয়েছে ৭২টি বোমা। এদিকে মৃত্যুর কথা বলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও । তারপরেও কেন মৃত্যুর কথা বলছে না পুলিশ পুলিশ তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এদিকে মুর্শিদাবাদ থেকে কোচবিহার রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে লাগাতার এসেছে মৃত্যুর খবর। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রথম মৃত্যু হয় ৯ জুন। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের রতনপুরে গুলিতে মৃত্যু হয় ফুলচাঁদ শেখ নামে এক ব্যক্তির। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। আহত হন কবিরুল শেখ নামে আরও এক ব্যক্তি। রক্তাক্ত অবস্থায় ফুলচাঁদকে উদ্ধার করে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তিনি কংগ্রেস করতেন। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যপালের কাছে চিঠিও দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।

আরও পড়ুন: মুসলিম ও কাশ্মীরিদের টার্গেট করবেন না, আর্জি পহেলগাঁও কাণ্ডে শহিদ বিনয়ের স্ত্রীর

 

আরও পড়ুন: কানাডায় ভারতীয় যুবককে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন, আটক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি

এর পর সবথেকে বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গরে। গত ১৫ জুন অগ্নিগর্ভ ভাঙড়ে মৃত্যু হয় তিন জনের। ওইদিন রক্ত ঝরে নবগ্রামেও। মনোনয়ন জমার শেষদিনে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় ভাঙড়ে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারে। চলে দেদার বোমাবাজি। চলে গুলি। মৃত্যু হয় তিনজনের। ওইদিন ২ জন তৃণমূলের কর্মী। একজন আইএসএফের কর্মী। মৃত আইএসএফ কর্মী মইনুদ্দিন মোল্লার বাড়ি ভাঙড়ের কাশীপুর থানার জয়পুরে। অন্যদিকে মৃত তৃণমূল কর্মী রাজু নস্করের বাড়ি কলকতার লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার হাটগাছায়। মারা গিয়েছেন তৃণমূল কর্মী রশিদ মোল্লা। তাঁর বাড়ি জীবনতলা থানা এলাকার মৌখালি এলাকায়।

আরও পড়ুন: রাজ্যের নয়া মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল

 

এই দিনই আবার মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে খবর মেলে। এলাকায় তিনি তৃণমূল কর্মী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। মোজাম্মেল শেখ নামে ওই ব্যক্তি হজবিবি ডাঙা এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ছিলেন বলে খবর। অভিযোগের তির কংগ্রেসের দিকে।

মালদহের সুজাপুরে তৃণমূলের এক নেতাকে খুনের অভিযোগ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। জানা যায়, বাড়ি থেকে বের হতেই বাঁশ-লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারা হয় তৃণমূল নেতা মোস্তফা শেখকে। প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরে দলের কিছু কর্মীর সঙ্গে তাঁর ঝামেলা চলছিল। জেলার মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন দাবি করেন কংগ্রেসীরা পিটিয়ে খুন করেছে। এই ঘটনার একদিন না পার হতেই রবিবার কোচবিহারে ফের রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

কোচবিহারের দিনহাটায় বিজেপি প্রার্থীর দেওরকে খুনের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের কিসামত দশগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের টিয়াদহ এলাকায়। শনিবার গভীর রাতে বিজেপি প্রার্থী বিশাখা দাসের দেওয়ার শম্ভু দাসকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।

 

রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক সহিংতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন কলকাতা নাখোদা মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিক কাসেমি। তিনি বলেন ভোট হোক সুষ্ঠ ভাবে। যে যার গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুক সুষ্ঠভাবে। কেন হানা হানি ঘটবে। এই বিষয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দল গুলিকে সুষ্ঠভাবে ভোটদানের আবেদন জানিয়েছেন।

একইভাবে সুষ্ঠভাবে ভোট দানের আহ´ান জানিয়েছে রাজ্যের প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ইসহাক মাদানি, সারা বাংলা সংখ্যলঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মাওলানা কামরুজ্জামান, রাজ্য আহলে হাদিসের রাজ্য সম্পাদক আলমগীর সরদার,প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ ফাইন্ডেশনের রাজ্যসভাপতি মাওলানা সিয়ামত আলি। তাঁরা বলেন, ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে বাংলা ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের উচিত মারা মারা হানি না করে। সুষ্ঠভাবে ভোটদানে এগিয়ে আসা। রাজ্য সরকার এবং নিবার্চন কমিশনকে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটদানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেখতে হবে কোনো নাগরিকে অধিকার যাতে হরন না হয়।

 



Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রাজ্যে ১০ দিনে রাজনৈতিক সহিংসতায় খুন ৭ জন, সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদানের আবেদন বিশিষ্টদের

আপডেট : ১৯ জুন ২০২৩, সোমবার

আবদুল ওদুদ:  রাজ্যে ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট।  ভোটের দিনক্ষণ  ঘোষণার পর থেকে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে লাগাতার আসছে অশান্তির খবর। মনোনয়ন থেকে স্ক্রুটিনি পর্ব, নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত নির্বাচনী হিংসায় মৃত ৭। যদিও পুলিশের রিপোর্টে মৃত্যুর কোনও রিপোর্ট কমিশনে পাঠানো হয়নি। যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে আহত ১০৪ জন। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। এছাড়াও বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ১১টি। উদ্ধার হয়েছে ৭২টি বোমা। এদিকে মৃত্যুর কথা বলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও । তারপরেও কেন মৃত্যুর কথা বলছে না পুলিশ পুলিশ তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এদিকে মুর্শিদাবাদ থেকে কোচবিহার রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে লাগাতার এসেছে মৃত্যুর খবর। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রথম মৃত্যু হয় ৯ জুন। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের রতনপুরে গুলিতে মৃত্যু হয় ফুলচাঁদ শেখ নামে এক ব্যক্তির। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। আহত হন কবিরুল শেখ নামে আরও এক ব্যক্তি। রক্তাক্ত অবস্থায় ফুলচাঁদকে উদ্ধার করে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তিনি কংগ্রেস করতেন। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যপালের কাছে চিঠিও দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।

আরও পড়ুন: মুসলিম ও কাশ্মীরিদের টার্গেট করবেন না, আর্জি পহেলগাঁও কাণ্ডে শহিদ বিনয়ের স্ত্রীর

 

আরও পড়ুন: কানাডায় ভারতীয় যুবককে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন, আটক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি

এর পর সবথেকে বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গরে। গত ১৫ জুন অগ্নিগর্ভ ভাঙড়ে মৃত্যু হয় তিন জনের। ওইদিন রক্ত ঝরে নবগ্রামেও। মনোনয়ন জমার শেষদিনে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় ভাঙড়ে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারে। চলে দেদার বোমাবাজি। চলে গুলি। মৃত্যু হয় তিনজনের। ওইদিন ২ জন তৃণমূলের কর্মী। একজন আইএসএফের কর্মী। মৃত আইএসএফ কর্মী মইনুদ্দিন মোল্লার বাড়ি ভাঙড়ের কাশীপুর থানার জয়পুরে। অন্যদিকে মৃত তৃণমূল কর্মী রাজু নস্করের বাড়ি কলকতার লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার হাটগাছায়। মারা গিয়েছেন তৃণমূল কর্মী রশিদ মোল্লা। তাঁর বাড়ি জীবনতলা থানা এলাকার মৌখালি এলাকায়।

আরও পড়ুন: রাজ্যের নয়া মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল

 

এই দিনই আবার মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে খবর মেলে। এলাকায় তিনি তৃণমূল কর্মী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। মোজাম্মেল শেখ নামে ওই ব্যক্তি হজবিবি ডাঙা এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ছিলেন বলে খবর। অভিযোগের তির কংগ্রেসের দিকে।

মালদহের সুজাপুরে তৃণমূলের এক নেতাকে খুনের অভিযোগ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। জানা যায়, বাড়ি থেকে বের হতেই বাঁশ-লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারা হয় তৃণমূল নেতা মোস্তফা শেখকে। প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরে দলের কিছু কর্মীর সঙ্গে তাঁর ঝামেলা চলছিল। জেলার মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন দাবি করেন কংগ্রেসীরা পিটিয়ে খুন করেছে। এই ঘটনার একদিন না পার হতেই রবিবার কোচবিহারে ফের রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

কোচবিহারের দিনহাটায় বিজেপি প্রার্থীর দেওরকে খুনের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের কিসামত দশগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের টিয়াদহ এলাকায়। শনিবার গভীর রাতে বিজেপি প্রার্থী বিশাখা দাসের দেওয়ার শম্ভু দাসকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।

 

রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক সহিংতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন কলকাতা নাখোদা মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিক কাসেমি। তিনি বলেন ভোট হোক সুষ্ঠ ভাবে। যে যার গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুক সুষ্ঠভাবে। কেন হানা হানি ঘটবে। এই বিষয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দল গুলিকে সুষ্ঠভাবে ভোটদানের আবেদন জানিয়েছেন।

একইভাবে সুষ্ঠভাবে ভোট দানের আহ´ান জানিয়েছে রাজ্যের প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ইসহাক মাদানি, সারা বাংলা সংখ্যলঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মাওলানা কামরুজ্জামান, রাজ্য আহলে হাদিসের রাজ্য সম্পাদক আলমগীর সরদার,প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ ফাইন্ডেশনের রাজ্যসভাপতি মাওলানা সিয়ামত আলি। তাঁরা বলেন, ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে বাংলা ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের উচিত মারা মারা হানি না করে। সুষ্ঠভাবে ভোটদানে এগিয়ে আসা। রাজ্য সরকার এবং নিবার্চন কমিশনকে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটদানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেখতে হবে কোনো নাগরিকে অধিকার যাতে হরন না হয়।