১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুজরাত: রেশন বঞ্চিত ১০ লক্ষ

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 55

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিকের বিনামূল্যে রেশন পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনে। প্রতিটি রাজ্যের নাগরিকরা এই সুবিধা পেয়ে থাকে।

কিন্তু গুজরাতে এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেখানে ১০ লক্ষ মানুষ রেশন পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্রে রয়েছে বিজেপির সরকার। গুজরাতেও ক্ষমতায় বিজেপি। তারপরও এই হাল কেন?

আরও পড়ুন: আমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার জের, ড্রিমলাইনারের সমস্ত পরিষেবা বন্ধ রাখার চিন্তা কেন্দ্রের

রাজ্যের নিজস্ব আইপিডিএস পোর্টাল থেকে এই তথ্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে প্রায় ১০ লক্ষ সুবিধাভোগী রেশন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর এটা হয়েছে কেওয়াইসি’র আনুষ্ঠানিকতার কারণে।

আরও পড়ুন: ভেঙে পড়া বিমানে মৃত্যু গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর

সময়মতো কেওয়াইসি জমা করতে পারেনি তারা। অথবা, তাদের কেওয়াইসি অসম্পূর্ণ ছিল। আর এই নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের কটাক্ষ, কেন্দ্র একের পর নতুন নতুন নিয়ম তৈরি করছে। আর তার ফাঁসে নাভিশ্বাস উঠছে আম জনতার।

আরও পড়ুন: আহমেদাবাদে ভাঙল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান, নিহত কমপক্ষে ২০০

তাদের বক্তব্য, এই ধরনের ত্রুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পরিকল্পনা রূপায়ণ ও তার বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে কি বিরাট ফারাক রয়েছে। আর তার ফলে লক্ষ লক্ষ অর্থিকভাবে দুর্বল নাগরিক আমলাতান্ত্রিক বাধার কারণে ক্ষুধার্ততার মধ্যে লড়াই করছে।

অন্ন সুরক্ষা অধিকার অভিযান অনুসারে, কেন্দ্রের এনডিপিএস পোর্টালে গুজরাতে ৩.৮২ কোটি সুবিধাভোগীর তালিকা রয়েছে। কিন্তু, গত তিন মাসের হিসেবে প্রকৃত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩.৭২ কোটি থেকে ৩.৭৬ কোটির মধ্যে রয়েছে—যা প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের ঘাটতি।

আর এই বাদ পড়ার নেপথ্যে ঠিক কী কী কারণ রয়েছে। শুধুই কি কেওয়াইসি? শুধুই কি ই-কেওয়াইসি’তে বিলম্ব এবং ত্রুটি? যদিও এটিই একমাত্র কারণ নয়। ‘নিষ্ক্রিয়’ রেশন কার্ডের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সংকটের আরও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত তিন মাসেই গুজরাতে ৪ লক্ষেরও বেশি এই ধরনের নিষ্ক্রিয় কার্ড নথিভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত রেশন কার্ডগুলি টানা তিন মাস ব্যবহার না করলে তা আপনা থেকেই অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

অন্ন সুরক্ষা অধিকার অভিযানের কো-অর্ডিনেটর পঙক্তি যোগ বলেন, ‘কাগজে দেখা যাচ্ছে যে উপভোক্তারা রেশন সংগ্রহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু পরিবারগুলির দাবি অসম্পূর্ণ ই-কেওয়াইসির কারণে রেশন ডিলাররা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। তাদের রেশন দেওয়া হয়নি। আর এভাবেই দীর্ঘ সময় অব্যবহারের কারণে তাদের রেশনকার্ড সিস্টেম নিয়ম মতো ‘নিষ্ক্রিয়’ করে দিয়েছে। কারণ, সিস্টেম মনে করছে ওই উপভোক্তারা রেশন তুলছে না।

কিন্তু, রেশন ডিলাররা যে তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে রেশন না দিয়ে সেটা সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে সমস্যা হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, ই-কেওয়াইসির সমস্যার কারণে মানুষকে রেশন থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং তারপরে তাদের কার্ডগুলিকে নিষ্ক্রিয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ক্ষুধার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার জন্য কে দায়ী?

প্রতিটি রেশন কার্ড সাধারণত তিন বা ততধিক পরিবারের সদস্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা দশ লক্ষেরও বেশি হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে সংসদে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন পাস হয়। এর লক্ষ্য ছিল, শিশু থেকে বৃদ্ধ—প্রত্যেক ভারতীয়কে আইনের মাধ্যমে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আনা।

ফলাফল? খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি একটি আইন এখন ত্রুটিপূর্ণ প্রযুক্তি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আটকে রয়েছে। ফলে যাদের খাদ্য সুরক্ষা দেওয়াই এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তারাই বিপদে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের ই-কেওয়াইসি ঠিক করে দিতে কেন সরকারের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না যাতে তারা ফের রেশনের সুবিধা পেতে পারে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গুজরাত: রেশন বঞ্চিত ১০ লক্ষ

আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিকের বিনামূল্যে রেশন পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনে। প্রতিটি রাজ্যের নাগরিকরা এই সুবিধা পেয়ে থাকে।

কিন্তু গুজরাতে এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেখানে ১০ লক্ষ মানুষ রেশন পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্রে রয়েছে বিজেপির সরকার। গুজরাতেও ক্ষমতায় বিজেপি। তারপরও এই হাল কেন?

আরও পড়ুন: আমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার জের, ড্রিমলাইনারের সমস্ত পরিষেবা বন্ধ রাখার চিন্তা কেন্দ্রের

রাজ্যের নিজস্ব আইপিডিএস পোর্টাল থেকে এই তথ্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে প্রায় ১০ লক্ষ সুবিধাভোগী রেশন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর এটা হয়েছে কেওয়াইসি’র আনুষ্ঠানিকতার কারণে।

আরও পড়ুন: ভেঙে পড়া বিমানে মৃত্যু গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর

সময়মতো কেওয়াইসি জমা করতে পারেনি তারা। অথবা, তাদের কেওয়াইসি অসম্পূর্ণ ছিল। আর এই নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের কটাক্ষ, কেন্দ্র একের পর নতুন নতুন নিয়ম তৈরি করছে। আর তার ফাঁসে নাভিশ্বাস উঠছে আম জনতার।

আরও পড়ুন: আহমেদাবাদে ভাঙল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান, নিহত কমপক্ষে ২০০

তাদের বক্তব্য, এই ধরনের ত্রুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পরিকল্পনা রূপায়ণ ও তার বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে কি বিরাট ফারাক রয়েছে। আর তার ফলে লক্ষ লক্ষ অর্থিকভাবে দুর্বল নাগরিক আমলাতান্ত্রিক বাধার কারণে ক্ষুধার্ততার মধ্যে লড়াই করছে।

অন্ন সুরক্ষা অধিকার অভিযান অনুসারে, কেন্দ্রের এনডিপিএস পোর্টালে গুজরাতে ৩.৮২ কোটি সুবিধাভোগীর তালিকা রয়েছে। কিন্তু, গত তিন মাসের হিসেবে প্রকৃত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩.৭২ কোটি থেকে ৩.৭৬ কোটির মধ্যে রয়েছে—যা প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের ঘাটতি।

আর এই বাদ পড়ার নেপথ্যে ঠিক কী কী কারণ রয়েছে। শুধুই কি কেওয়াইসি? শুধুই কি ই-কেওয়াইসি’তে বিলম্ব এবং ত্রুটি? যদিও এটিই একমাত্র কারণ নয়। ‘নিষ্ক্রিয়’ রেশন কার্ডের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সংকটের আরও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত তিন মাসেই গুজরাতে ৪ লক্ষেরও বেশি এই ধরনের নিষ্ক্রিয় কার্ড নথিভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত রেশন কার্ডগুলি টানা তিন মাস ব্যবহার না করলে তা আপনা থেকেই অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

অন্ন সুরক্ষা অধিকার অভিযানের কো-অর্ডিনেটর পঙক্তি যোগ বলেন, ‘কাগজে দেখা যাচ্ছে যে উপভোক্তারা রেশন সংগ্রহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু পরিবারগুলির দাবি অসম্পূর্ণ ই-কেওয়াইসির কারণে রেশন ডিলাররা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। তাদের রেশন দেওয়া হয়নি। আর এভাবেই দীর্ঘ সময় অব্যবহারের কারণে তাদের রেশনকার্ড সিস্টেম নিয়ম মতো ‘নিষ্ক্রিয়’ করে দিয়েছে। কারণ, সিস্টেম মনে করছে ওই উপভোক্তারা রেশন তুলছে না।

কিন্তু, রেশন ডিলাররা যে তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে রেশন না দিয়ে সেটা সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে সমস্যা হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, ই-কেওয়াইসির সমস্যার কারণে মানুষকে রেশন থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং তারপরে তাদের কার্ডগুলিকে নিষ্ক্রিয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ক্ষুধার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার জন্য কে দায়ী?

প্রতিটি রেশন কার্ড সাধারণত তিন বা ততধিক পরিবারের সদস্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা দশ লক্ষেরও বেশি হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে সংসদে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন পাস হয়। এর লক্ষ্য ছিল, শিশু থেকে বৃদ্ধ—প্রত্যেক ভারতীয়কে আইনের মাধ্যমে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আনা।

ফলাফল? খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি একটি আইন এখন ত্রুটিপূর্ণ প্রযুক্তি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আটকে রয়েছে। ফলে যাদের খাদ্য সুরক্ষা দেওয়াই এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তারাই বিপদে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের ই-কেওয়াইসি ঠিক করে দিতে কেন সরকারের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না যাতে তারা ফের রেশনের সুবিধা পেতে পারে।