নিহত দুই শিশুসহ ১৫ বেসামরিক নাগরিক, আহত ২৮
জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়াতেই বেপরোয়া পাকিস্তান, কাশ্মীরে অতর্কিত গোলাবর্ষণ

- আপডেট : ৭ মে ২০২৫, বুধবার
- / 162
শ্রীনগর: পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার বদলা হিসেবে প্রত্যাঘাত করেছে ভারত। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার অ্যাকশনের পরই কাশ্মীরে সাধারণ নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে পাকিস্তান। বুধবার সকাল থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাক গুলিতে নিহত হয়েছে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক। মৃতদের মধ্যে রয়েছে দুই জন শিশু। তারা হল, মুহাম্মদ জাইন খান (১০) এবং তার বড় বোন জোয়া খান (১২)। আহত হয়েছেন অন্তত ২৮ জন। উপত্যাকার সীমান্তবর্তী জেলা পুঞ্চে পাক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বাড়ি ও দোকান।
সূত্রের খবর, সন্ত্রাসবাদীদের আঁতুড়ঘরে আঘাত হানতেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। বুধবার মধ্যরাতে নিয়ন্ত্রণরেখা লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গোলাগুলি শুরু করে পাক সেনা। নির্বিচারে গোলাবর্ষণ ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। প্রাণ রক্ষার জন্য ওই রাতেই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে তারা। প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়। জম্মু নিকটবর্তী রাজৌরি, কুপওয়ারা জেলার উরি, কারনাহ ও তাংধর সেক্টরেও গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এই হামলার জেরেই মৃত্যু হয়েছে ১৫ জন কাশ্মীরি নাগরিকের। পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ২৮ জন। স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ জাহিদ বলেন, “নিদ্রাহীন ও আতঙ্কের রাত কাটিয়েছি। খুব কাছ থেকে বিস্ফোরণ হচ্ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করলাম। হামলার পর আহতরা সাহায্যের জন্য চিৎকার শুরু করেছিল। পরিবারগুলি সন্তানদের বাঁচাতে সুরক্ষিত জায়গা খুঁজছিল। বহু বাসিন্দা আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।”
পাক সেনার অতর্কিত গোলাবর্ষণ ও হামলাকে ‘বর্বর ও কাপুরুষোচিত’ বলে মন্তব্য করেছে কর্মকর্তা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকা মানকোট, মেন্ধার, থান্ডি কাসি এবং পুঞ্চ শহর লক্ষ্য করে ভারী কামান ও মর্টার দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। হামলায় বাড়িঘর ও দোকানপাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পুঞ্চ এলাকায়। এমনকি পুঞ্চ দুর্গ এবং প্রাচীন মন্দিরগুলির মতো ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিও রেহাই পায়নি। পুলিশ কর্তার কথায়, “নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা সাহসিকতার পরিচয় নয়। এটা পাকিস্তানের কাপুরুষোচিত কাজ।” স্থানীয় বাসিন্দা খুরশিদ আহমেদের কথায়, “গভীর রাতে এমন পরিস্থিতি হবে আমরা আশা করিনি। আমরা ভাগ্যবান যে হামলার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি। তাই আপাতত নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়াই ভালো বলে মনে করছি।”
এদিকে পাক হামলা প্রসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেন, ‘আমরা কেউ যুদ্ধ চাই না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরুক সেটাই চাই আমরা। কিন্তু তার জন্য আমাদের প্রতিবেশীকে দেশকে অস্ত্র তুলে নেওয়া বন্ধ করতে হবে। তাহলেই আমাদের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া করা হবে না।’ যদিও পাক সেনার হামলার যোগ্য ‘সমান মাত্রায়’ জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।