আজ থেকে শুরু পবিত্র হজের মূল পর্ব
তীব্র মরু উত্তাপ উপেক্ষা করে মিনামুখী ১৫ লক্ষ হজযাত্রী

- আপডেট : ৪ জুন ২০২৫, বুধবার
- / 89
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পবিত্র মক্কায় শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের হজ মৌসুম। আরবি বর্ষপঞ্জির ৮ যিলহজ থেকে ১৩ যিলহজ পর্যন্ত চলবে হজের আনুষ্ঠানিকতা। সউদি আরবের সর্বোচ্চ আদালত যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর চলতি বছরের হজ শুরু হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
সে অনুযায়ী, আজ থেকে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। পরদিন ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন; ইয়াওমে আরাফা বা আরাফাত দিবস। হজের সূচনায় হাজিরা ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। ৮ যিলহজ জোহরের আগেই মিনায় পৌঁছনো সুন্নত।
মক্কা শহরের প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মিনার আয়তন প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার। মক্কা থেকে আরাফার ময়দানে যাওয়ার প্রধান সড়কের পাশেই এই পবিত্র উপত্যকার অবস্থান। মিনায় অবস্থানের সময় হাজিরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়, রাতযাপন এবং সর্বক্ষণ আমল-ইবাদতে মশগুল থাকেন। তারা উচ্চারণ করেন তালবিয়া; ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকখ’, করেন জিকির-আজকার ও কুরআন তিলাওয়াত। এই সময়টুকু হজযাত্রীদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। তাই সামান্য সময়ও যেন গাফিলতি না ঘটে; সে ব্যাপারে সকলেই সচেতন থাকেন।
প্রচণ্ড গরম আর রুক্ষ মরু হাওয়ার মাঝেও পবিত্র হজ পালনের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ১৫ লাখ হজযাত্রী জড়ো হয়েছেন মক্কায়। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও হজযাত্রীদের চোখেমুখে ক্লান্তির চিহ্ন নেই;আছে শুধু তৃপ্তি, কৃতজ্ঞতা ও আত্মিক প্রশান্তি।
ফিলিপাইনের শরিয়া পরামর্শদাতা ও আইনজীবী আধুল মাজিদ আতী বলেন, ‘এটা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এক পরিপূর্ণ নিয়ামত। মক্কায় এসে মনে হচ্ছে জান্নাতের ছায়ায় বসে আছি।’ নাইজেরিয়ার ২৭ বছর বয়সি তরুণ আবদুল হামিদ টানা দ্বিতীয়বার হজ করতে এসেছেন। তিনি বলেন,‘এখানে খুবই গরম। কিন্তু আল্লাহ্ যখন ডাকেন, তখন আর কোনও বাধা থাকে না।’ ৫২ বছর বয়সি সেনেগালের নারী হজযাত্রী, মারিয়ামা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি, ‘আমি সারাজীবন এই স্বপ্ন দেখেছি। অবশেষে সেই মুহূর্ত এসেছে। এখন শুধু প্রার্থনা করি;এই হজ যেন কবুল হয়।’
হজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম এবং জীবনে একবার পালনের ফরজ ইবাদত। তবে শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা শর্ত। পাঁচ দিনের এই হজযাত্রা কেবল একটি আচার নয় ; এটি আত্মশুদ্ধি, সহনশীলতা, ধৈর্য, এবং আল্লাহ্র প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়।
হাজিরা অনেক সময় প্রতিদিন ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি পথ হেঁটে অতিক্রম করেন, অপরিচিত ভাষা, রুটিন ও পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে হয়। সামান্য ব্যক্তিগত পরিসর, ক্লান্তির মাঝেও এই যাত্রা বহু মানুষের জীবনে এক অলৌকিক পরিবর্তন নিয়ে আসে।
আলজেরিয়ার বেলহাজ বিয়াফো বলেন, ‘এটাই আমার প্রথম হজ। আল্লাহ্ যেন তাওফিক দেন’ আমি রীতিনীতি সম্পন্ন করেছি, আশাকরি সবাই হজ আদায় করতে পারবেন।’
মিশরের লায়লা সাদ হজযাত্রাকে শুধু ধর্মীয় না বলে ব্যক্তিগতভাবে গভীর অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেন। ‘আমার প্রথম দোয়া হবে গাজা ও সুদানের জন্য। আল্লাহ্ যেন আরব দেশগুলোতে রক্তপাত বন্ধ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাবা শরীফে পৌঁছনোর মুহূর্তটা ভাষায় বোঝানো যায় না।, এ এক অসাধারণ সুন্দর অনুভূতি। যদি আরও আগেই এই সুযোগ পেতাম। তবুও আলহামদুলিল্লাহ।’