পলাতক মূল অভিযুক্ত যুব মোর্চার নেতা পারিজাত
গাড়ি থামিয়ে গরু ব্যবসায়ীদের মারধরের ঘটনা: ধৃত ২ বিজেপি কর্মী

- আপডেট : ২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
- / 15
পুবের কলম প্রতিবেদক : বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নিপীড়ন এবং মারধরের ঘটনা খুবই চেনা ছবি। কিন্তু ধর্মীয় ভেদাভেদে হামলা-হাঙ্গাগার উর্ধ্বে থাকা সম্প্রীতির অন্যতম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। তবে মাঝে মধ্যে কিছু বিজেপি উগ্রবাদী ঘৃণা-বিভাজন ছড়াচ্ছে।
এবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে বৈধ চালান থাকা সত্ত্বেও গরু ব্যবসায়ীদের ‘পাচারকারী’ সন্দেহে গলায় দড়ি বেঁধে অপদস্থ করার ঘটনায় চমকে উঠেছে গোটা সমাজ। তাদের জোর করে জয় শ্রীরাম বলানো হয় বলে অভিযোগ। আক্রান্তরা সকলে মুসলিম।
এ ঘটনায় দীপক দাস ও অনীশ ভট্টাচার্য নামে দু’জনকে কোক-ওভেন থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মূল অভিযুক্ত বিজেপির যুব মোর্চার নেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ঘটনায় ১৫ জন বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের হাট আশুড়িয়া থেকে বৈধ চালান ও রসিদ-সহ গরু কিনে ফিরছিলেন জেমুয়া গ্রামের বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ গরু ব্যবসায়ী। দামোদর ব্যারাজ হয়ে দুর্গাপুরে ঢোকার পর বিজেপি যুব মোর্চার নেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একদল বিজেপি কর্মী তাদের পথ আটকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে দেখা যায়, কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায় মাটিতে বসে আছেন এবং কেউ কেউ কান ধরে হাঁটছেন। কাউকে লাঠি পেটা করা হচ্ছে আর তারা অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে কাকুতি-মিনতি করছেন। এ সময় তাদের জোরজবস্তি জয় শ্রীরাম বলানো হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আরও জানা গিয়েছে, ট্রাকে প্রায় ২২টি গোরু ছিল। পারিজাত ও তার অনুগামীরা ওই ট্রাকে থাকা কয়েকজনকে টেনে-হিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার উপর বসায়। কান ধরে ওঠবস করারও নিদান দেন। তাদের কান ধরে রাস্তায় হাটানো হয়।
ঘটনার পরপরই তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কোক-ওভেন থানায় উপস্থিত হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু গরিব মানুষ হাট থেকে গরু কিনে ফিরছিলেন। যাদের মারধর করা হয়েছে তারা পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের জেমুয়া গ্রামের বাসিন্দা। ওরা বৈধভাবে গরু কিনে ফিরছিল। তাদের কাছে হাটের রসিদ ছিল। তবু তাদের গরু পাচারকারী বলে অপবাদ দিয়ে মারধর করা হয় এবং টাকাপয়সা কেড়ে নেয়। এটা চরম অমানবিক ও ভয়াবহ। অভিযুক্তরা সকলে বিজেপি কর্মী।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে দুই অভিযুক্ত দীপক দাস ও অনীশ ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জনই স্থানীয় বিজেপি কর্মী বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। মূল অভিযুক্ত পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়ের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী শুক্রবার রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ‘যারা এই কাজ করেছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, কাউকে রেয়াত করা হবে না।
১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। কমিশনার আরও জানান, গরু বোঝাই গাড়িটির সমস্ত কাগজপত্র বৈধ ছিল। কোনও গরু পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পারিজাতকে এখনও গ্রেফতার না করতে পারার কারণ হিসেবে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল। তবে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই ধরা হবে।’