০৪ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাড়ছে বিদ্বেষ, অসমে চার্চ পরিচালিত স্কুলগুলিকে হুমকি হিন্দুত্ববাদীদের

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, রবিবার
  • / 59

গুয়াহাটি, ১১ ফেব্রুয়ারি: দিন দিন অসমে বাড়ছে বিদ্বেষ। কোণঠাসা হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত প্রায় নিয়ম করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি ‘কট্টর হিন্দুত্ববাদী’। তাঁর রাজ্যে সংখ্যালঘুরা যে নেহাতই ব্রাত্য সে কথাও ভাষণে এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। এবার কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের নিশানায় অসমের এক খ্রিস্টান পরিচালিত স্কুল। হিন্দুত্ববাদীরা সরাসরি স্কুলে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে হুশিয়ারি দেয়। খ্রিস্টান স্কুল বলে চেনা যায় এমন প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। স্কুলে এমন কোনও অভ্যাস পড়ুয়াদের পড়ানো যাবে না যা দিয়ে তাদের খ্রিস্টান বলে মনে হয়। শুধু তাই নয়, খ্রিস্টান শিক্ষকদের লম্বা আলখাল্লার মতো পোশাকেও আপত্তি জানিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা।

 

আরও পড়ুন: ইতিহাস তৈরি করে ভারতের মেয়েদের বিশ্ব জয়

কট্টোর এই সংস্থাটির নাম কুটুম্ব সুরক্ষা পরিষদ। সংস্থার সভাপতি সত্যরঞ্জন বোরা বলেন, তাদের লক্ষ্য হল এখানে শিক্ষার নাম করে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় প্রচার বন্ধ করা। তার অভিযোগ এই ধরনের স্কুলগুলির মাধ্যমে খ্রিস্টানরা ধর্মীয় প্রচার চালায় এবং ধর্মান্তর করে। হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা থাকতে আর কোনও ধর্মান্তর হতে দেব না। সরাসরি সাংবাদিক সম্মেলন করে বুক ঠুকে এই কথা জানান হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের এই নেতা।

আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার চাপ, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল বহনকারী ভারতগামী ট্যাংকারের পথ পরিবর্তন

 

আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের সংঘর্ষবিরতি ভাঙল পাকিস্তান, লিপা ভ্যালিতে গুলি চালনা

বর্তমানে অসম চলছে ডবল ইঞ্জিন সরকারে। প্রতিদিন আরএসএস ও কেন্দ্রীয় ইঞ্জিনকে তুষ্ট করতে প্রাণপণ করছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। নিশানা করছেন সংখ্যালঘুদের। সামনে লোকসভা, ফলে অসমের মতো ডবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্যগুলিতে খ্রিস্টান সহ বাকি সংখ্যালঘুদের ওপর নেমে আসতে পারে ‘নির্যাতন’এর নয়া কৌশল। সত্যরঞ্জন বোরার নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদীরা হুমকি দিয়ে বলেছে ১৫ দিনের মধ্যে খ্রিস্টান পরিচালিত স্কুলগুলি থেকে যিশু খ্রিস্ট ও মাদার মেরির ছবি ও মূর্তি সরিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। বোরার অভিযোগ এই মূর্তি ও ছবি সামনে রেখেই তারা খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার চালায়।

 

গুয়াহাটির চার্চ বিষক মুলাচিরা বলেন, ‘যে সব অভিযোগ খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা সবকটি ভিত্তিহীন। অহেতুক কেন খ্রিস্টান স্কুলগুলিকে এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, খ্রিস্টানরা এখানে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অসমের প্রত্যন্ত এলাকায় আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। অথচ এখন এমন প্রতিষ্ঠানগুলিকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যদি এমনটা চলতে থাকে তাহলে আমরাও আইনের সাহায্য নেব। এমন অবিচার দীর্ঘদিন সহ্য করা যায় না। তবে স্কুলের শিক্ষক, যাজক ও নানদের বলা হয়েছে তারা যেন স্কুল ক্যাম্পাসে সাধারণ পোশাক পরেন। কোনও ধর্মীয় অনুষঙ্গ যেন তাতে না থাকে।

 

হিন্দুত্ববাদীরা হুমকিতে বলেছে গির্জা চত্বরে যেন কোনও স্কুল না থাকে। এরকম কোনও স্কুল থাকলে অবিলম্বে সেগুলিকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খ্রিস্টান নেতারা জানিয়েছেন তাঁরা এমন হুমকির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দ্বারস্থ হবেন।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাড়ছে বিদ্বেষ, অসমে চার্চ পরিচালিত স্কুলগুলিকে হুমকি হিন্দুত্ববাদীদের

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, রবিবার

গুয়াহাটি, ১১ ফেব্রুয়ারি: দিন দিন অসমে বাড়ছে বিদ্বেষ। কোণঠাসা হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত প্রায় নিয়ম করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি ‘কট্টর হিন্দুত্ববাদী’। তাঁর রাজ্যে সংখ্যালঘুরা যে নেহাতই ব্রাত্য সে কথাও ভাষণে এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। এবার কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের নিশানায় অসমের এক খ্রিস্টান পরিচালিত স্কুল। হিন্দুত্ববাদীরা সরাসরি স্কুলে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে হুশিয়ারি দেয়। খ্রিস্টান স্কুল বলে চেনা যায় এমন প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। স্কুলে এমন কোনও অভ্যাস পড়ুয়াদের পড়ানো যাবে না যা দিয়ে তাদের খ্রিস্টান বলে মনে হয়। শুধু তাই নয়, খ্রিস্টান শিক্ষকদের লম্বা আলখাল্লার মতো পোশাকেও আপত্তি জানিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা।

 

আরও পড়ুন: ইতিহাস তৈরি করে ভারতের মেয়েদের বিশ্ব জয়

কট্টোর এই সংস্থাটির নাম কুটুম্ব সুরক্ষা পরিষদ। সংস্থার সভাপতি সত্যরঞ্জন বোরা বলেন, তাদের লক্ষ্য হল এখানে শিক্ষার নাম করে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় প্রচার বন্ধ করা। তার অভিযোগ এই ধরনের স্কুলগুলির মাধ্যমে খ্রিস্টানরা ধর্মীয় প্রচার চালায় এবং ধর্মান্তর করে। হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা থাকতে আর কোনও ধর্মান্তর হতে দেব না। সরাসরি সাংবাদিক সম্মেলন করে বুক ঠুকে এই কথা জানান হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের এই নেতা।

আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার চাপ, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল বহনকারী ভারতগামী ট্যাংকারের পথ পরিবর্তন

 

আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের সংঘর্ষবিরতি ভাঙল পাকিস্তান, লিপা ভ্যালিতে গুলি চালনা

বর্তমানে অসম চলছে ডবল ইঞ্জিন সরকারে। প্রতিদিন আরএসএস ও কেন্দ্রীয় ইঞ্জিনকে তুষ্ট করতে প্রাণপণ করছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। নিশানা করছেন সংখ্যালঘুদের। সামনে লোকসভা, ফলে অসমের মতো ডবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্যগুলিতে খ্রিস্টান সহ বাকি সংখ্যালঘুদের ওপর নেমে আসতে পারে ‘নির্যাতন’এর নয়া কৌশল। সত্যরঞ্জন বোরার নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদীরা হুমকি দিয়ে বলেছে ১৫ দিনের মধ্যে খ্রিস্টান পরিচালিত স্কুলগুলি থেকে যিশু খ্রিস্ট ও মাদার মেরির ছবি ও মূর্তি সরিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। বোরার অভিযোগ এই মূর্তি ও ছবি সামনে রেখেই তারা খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার চালায়।

 

গুয়াহাটির চার্চ বিষক মুলাচিরা বলেন, ‘যে সব অভিযোগ খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা সবকটি ভিত্তিহীন। অহেতুক কেন খ্রিস্টান স্কুলগুলিকে এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, খ্রিস্টানরা এখানে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অসমের প্রত্যন্ত এলাকায় আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। অথচ এখন এমন প্রতিষ্ঠানগুলিকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যদি এমনটা চলতে থাকে তাহলে আমরাও আইনের সাহায্য নেব। এমন অবিচার দীর্ঘদিন সহ্য করা যায় না। তবে স্কুলের শিক্ষক, যাজক ও নানদের বলা হয়েছে তারা যেন স্কুল ক্যাম্পাসে সাধারণ পোশাক পরেন। কোনও ধর্মীয় অনুষঙ্গ যেন তাতে না থাকে।

 

হিন্দুত্ববাদীরা হুমকিতে বলেছে গির্জা চত্বরে যেন কোনও স্কুল না থাকে। এরকম কোনও স্কুল থাকলে অবিলম্বে সেগুলিকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খ্রিস্টান নেতারা জানিয়েছেন তাঁরা এমন হুমকির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দ্বারস্থ হবেন।