২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উচ্চশিক্ষায় ড্রপ আউটের কারণ খুঁজতে তৎপর বিকাশভবন

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২২, সোমবার
  • / 20

সেখ কুতুবউদ্দিন: স্কুলে ড্রপআউট শোনা যেত, এবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রপআউটের সংখ্যা বাড়চ্ছে। এই নিয়ে চিন্তায় ফেলেছে বিকাশভবনকে। উচ্চ শিক্ষায় কেন  ড্রপআউট, তা খতিয়ে দেখতে শিক্ষা দফতরের তরফে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

শিক্ষা দফতরের সচিব মনীষ জৈন কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আসন পূরণে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। স্নাতকের ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও স্নাতকোত্তরে ভর্তি অব্যাহত রয়েছে। পড়ুয়ারা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে তার জন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষা দফতর।

আরও পড়ুন: আফগান নারীদের উচ্চ শিক্ষা প্রদানে তৈরি ইরান

শিক্ষা দফতরের তথ্য অনুসারে স্নাতকে এখনও ৪০ শতাংশ আসন ফাঁকা রয়েছে। এদিকে আসন পূরণের জন্য ভর্তির সময়সীমা বাড়ানো হয়। একাধিক কলেজের অধ্যাক্ষদের কথায়, স্নাতকে ভর্তির সময়সীমা একদফা বাড়িয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ রাজ্যের বেশিরভাগ কলেজে এখনও খালি পড়ে রয়েছে অধিকাংশ আসন।

আরও পড়ুন: আর্থিক অবস্থার জেরে উচ্চ শিক্ষায় বাধা ছাত্রের, অবসাদে আত্মঘাতী

এ রাজ্যের কলেজগুলিতে গড়ে ৪০ শতাংশ আসন এখনও শূন্য। বিগত তিন বছরে এটাই সর্বাধিক। তাও দু’দফায় ভর্তি প্রক্রিয়া চালানোর পর। ২০২০ ও ২০২১ সালে এই হারই ছিল যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৩ শতাংশ। প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি পড়ুয়াদের এই অনীহায় চিন্তার ভাঁজ উচ্চশিক্ষা দফতরের কপালে।

আরও পড়ুন: উচ্চমাধ্যমিকে আর হোম সেন্টার নয়, জানাল সংসদ

জানা গিয়েছে, সরকারি ও সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ মিলিয়ে ৮ লক্ষের কিছু বেশি আসন রয়েছে। প্রথম দফার ভর্তির পর খালি আসন পড়েছিল প্রায় ৪৭ শতাংশ। শূন্য আসন পূরণের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফায় ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তির সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্ট আসে দফতরের কাছে। তাতে দেখা যাচ্ছে,  এই দফায় মাত্র ১০ শতাংশ পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন।

অর্থাৎ, এখনও খালি পড়ে রয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ আসন। ইতিমধ্যে কলেজগুলিতে পঠনপাঠন শুরু হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, পুজোর পর তাঁদের ক্লাস শুরু হবে। ফলে নতুন করে আর ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তাই নেই। তাই দফতরের আশঙ্কা, সর্বাধিক শূন্য আসন নিয়েই হয়তো চলতি শিক্ষাবর্ষে পঠন-পাঠন চালাতে  হবে। কেন এই হাল এই সম্পর্কে ইতিমধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের তথ্য জানতে উচ্চ শিক্ষার পোর্টালেও আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা দফতরের দেওয়া তথ্য অনুসারে আসন পূরণ না হওয়ায় শীর্ষে রয়েছে কালিম্পং (৫৯ শতাংশ), দ্বিতীয় স্থানে উত্তর ২৪ পরগনা (৪৯ শতাংশ)। পশ্চিম বর্ধমান ও পূর্ব বর্ধমানে যথাক্রমে ৪৮ এবং ৪৩ শতাংশ আসন খালি। ৪১ শতাংশ শূন্য আসন নিয়ে সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতাও। একমাত্র মালদহ জেলা কিছুটা ব্যতিক্রমী। সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ আসন ফাঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হিসেব ধরলে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কাজি নজরুল, কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা, উত্তরবঙ্গ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিত্র খুব একটা উজ্জ্বল নয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ৪০ শতাংশের বেশি আসন খালি পড়ে রয়েছে। সেই তুলনায় গৌড়বঙ্গ, বিদ্যাসাগর, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। বিষয়গুলির মধ্যে দেখা যাচ্ছে অর্থনীতি ও পরিবেশবিদ্যার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের যথেষ্ট অনীহা। এই দুটি বিষয়ে যথাক্রমে ৭৫ ও ৭৩ শতাংশ আসন খালি। এছাড়াও ফিজিক্স, ফিলোজফি এবং সংস্কৃত বিষয়েও ৫০ শতাংশের বেশি আসন ফাঁকা।

ফাঁকা আসন নিয়ে কলেজের শিক্ষক সংগঠনের গৌড়াঙ্গ দেবনাথ বলেন, শিক্ষক-অধ্যাপক সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি বছর নিয়োগ হচ্ছে না। চাকরির ক্ষেত্রে এখন যা ঘটনা ঘটছে, তাতে সাধারণ ডিগ্রিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করছে পড়ুয়ারা।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

উচ্চশিক্ষায় ড্রপ আউটের কারণ খুঁজতে তৎপর বিকাশভবন

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২২, সোমবার

সেখ কুতুবউদ্দিন: স্কুলে ড্রপআউট শোনা যেত, এবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রপআউটের সংখ্যা বাড়চ্ছে। এই নিয়ে চিন্তায় ফেলেছে বিকাশভবনকে। উচ্চ শিক্ষায় কেন  ড্রপআউট, তা খতিয়ে দেখতে শিক্ষা দফতরের তরফে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

শিক্ষা দফতরের সচিব মনীষ জৈন কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আসন পূরণে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। স্নাতকের ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও স্নাতকোত্তরে ভর্তি অব্যাহত রয়েছে। পড়ুয়ারা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে তার জন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষা দফতর।

আরও পড়ুন: আফগান নারীদের উচ্চ শিক্ষা প্রদানে তৈরি ইরান

শিক্ষা দফতরের তথ্য অনুসারে স্নাতকে এখনও ৪০ শতাংশ আসন ফাঁকা রয়েছে। এদিকে আসন পূরণের জন্য ভর্তির সময়সীমা বাড়ানো হয়। একাধিক কলেজের অধ্যাক্ষদের কথায়, স্নাতকে ভর্তির সময়সীমা একদফা বাড়িয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ রাজ্যের বেশিরভাগ কলেজে এখনও খালি পড়ে রয়েছে অধিকাংশ আসন।

আরও পড়ুন: আর্থিক অবস্থার জেরে উচ্চ শিক্ষায় বাধা ছাত্রের, অবসাদে আত্মঘাতী

এ রাজ্যের কলেজগুলিতে গড়ে ৪০ শতাংশ আসন এখনও শূন্য। বিগত তিন বছরে এটাই সর্বাধিক। তাও দু’দফায় ভর্তি প্রক্রিয়া চালানোর পর। ২০২০ ও ২০২১ সালে এই হারই ছিল যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৩ শতাংশ। প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি পড়ুয়াদের এই অনীহায় চিন্তার ভাঁজ উচ্চশিক্ষা দফতরের কপালে।

আরও পড়ুন: উচ্চমাধ্যমিকে আর হোম সেন্টার নয়, জানাল সংসদ

জানা গিয়েছে, সরকারি ও সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ মিলিয়ে ৮ লক্ষের কিছু বেশি আসন রয়েছে। প্রথম দফার ভর্তির পর খালি আসন পড়েছিল প্রায় ৪৭ শতাংশ। শূন্য আসন পূরণের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফায় ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তির সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্ট আসে দফতরের কাছে। তাতে দেখা যাচ্ছে,  এই দফায় মাত্র ১০ শতাংশ পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন।

অর্থাৎ, এখনও খালি পড়ে রয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ আসন। ইতিমধ্যে কলেজগুলিতে পঠনপাঠন শুরু হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, পুজোর পর তাঁদের ক্লাস শুরু হবে। ফলে নতুন করে আর ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তাই নেই। তাই দফতরের আশঙ্কা, সর্বাধিক শূন্য আসন নিয়েই হয়তো চলতি শিক্ষাবর্ষে পঠন-পাঠন চালাতে  হবে। কেন এই হাল এই সম্পর্কে ইতিমধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের তথ্য জানতে উচ্চ শিক্ষার পোর্টালেও আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা দফতরের দেওয়া তথ্য অনুসারে আসন পূরণ না হওয়ায় শীর্ষে রয়েছে কালিম্পং (৫৯ শতাংশ), দ্বিতীয় স্থানে উত্তর ২৪ পরগনা (৪৯ শতাংশ)। পশ্চিম বর্ধমান ও পূর্ব বর্ধমানে যথাক্রমে ৪৮ এবং ৪৩ শতাংশ আসন খালি। ৪১ শতাংশ শূন্য আসন নিয়ে সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতাও। একমাত্র মালদহ জেলা কিছুটা ব্যতিক্রমী। সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ আসন ফাঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হিসেব ধরলে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কাজি নজরুল, কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা, উত্তরবঙ্গ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিত্র খুব একটা উজ্জ্বল নয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ৪০ শতাংশের বেশি আসন খালি পড়ে রয়েছে। সেই তুলনায় গৌড়বঙ্গ, বিদ্যাসাগর, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। বিষয়গুলির মধ্যে দেখা যাচ্ছে অর্থনীতি ও পরিবেশবিদ্যার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের যথেষ্ট অনীহা। এই দুটি বিষয়ে যথাক্রমে ৭৫ ও ৭৩ শতাংশ আসন খালি। এছাড়াও ফিজিক্স, ফিলোজফি এবং সংস্কৃত বিষয়েও ৫০ শতাংশের বেশি আসন ফাঁকা।

ফাঁকা আসন নিয়ে কলেজের শিক্ষক সংগঠনের গৌড়াঙ্গ দেবনাথ বলেন, শিক্ষক-অধ্যাপক সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি বছর নিয়োগ হচ্ছে না। চাকরির ক্ষেত্রে এখন যা ঘটনা ঘটছে, তাতে সাধারণ ডিগ্রিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করছে পড়ুয়ারা।