১৫ জুন ২০২৫, রবিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উদ্ধার হলেন বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো চার পরিযায়ী শ্রমিক

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, রবিবার
  • / 25

জিশান আলি মিঞা, মুর্শিদাবাদ: চার ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার পর তাদের ফেরত নিয়ে আসতে বাধ্য হল বিএসএফ।  মুম্বইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়।

কোনওরকম যাচাই না করেই তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় সীমান্তরক্ষী। প্রায় পাঁচ দিন পর উদ্ধার হলেন তারা। জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে রবিবার বিকেলে উদ্ধার হন তারা। ওই তিন নাগরিককে নিজেদের হাতে নেওয়ার পর বিএসএফ কোচবিহারের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর হামলার গুজব ছড়িয়েছে বিজেপি নেতারা, স্ট্যালিন ও জেডিইউ -র অভিযোগ

সোমবার তাদের ঘরে ফেরার কথা। ওই চারজনের মধ্যে তিনজন মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তারা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মন্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রাম পঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ।

আরও পড়ুন: বাংলায় পরিযায়ী শ্রমিক কত?  রাজ্যের কাছে হলফনামা তলব প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের 

অপরজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তারা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তারা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাদের কাছে বৈধ নথি থাকা স্বত্তেও তাদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে দুই বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশে পথদুর্ঘটনা, কেড়ে নিল উত্তরদিনাজপুরের ৪ পরিযায়ী শ্রমিকের প্রাণ

সূত্রের খবর, দু’দিন ধরে তারা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন। স্থানীয়দের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাদের ফেরানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্য সভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও অন্য জনপ্রতিনিধিরা।

পুলিশ ও বিএসএএফকে বিষয়টি জানান তারা। হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিয়ো বার্তা দেখে জেলা পরিষদের সদস্য জিল্লার রহমান ও বিধায়ক নিয়ামত শেখকে বিষয়টি জানাই। তারপর তাদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তারা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভাল লাগছে।

সূত্রের খবর, ১০ জুন তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাদের মুম্বই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। তাদের মারধর করে বিএসএফ বাংলাদেশের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ওই শ্রমিকদের টাকা, মোবাইল ফোনও নাকি কেড়ে নেওয়া হয়।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন প্রায় দুবছর ধরে মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। রবিবার সকালে তার স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়।

তারপরই তাদের ঘরে ফেরানোর জন্য তৎপরতা শুরু হয়। হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এদেশেরই নাগরিক। তার বৈধ নথি আছে। তার মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। বিষয়টি দলনেত্রীকে জানিয়েছি। রবিবার বিকেলে তারা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তারা ঘরে ফিরবেন।

নাজিমুদ্দিনের স্ত্রী পিংকি বিবি বলেন, উদ্ধার হয়েছে জেনে আনন্দ হচ্ছে। যারা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছেন প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই।

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে রবিবার জানানো হয়, মুর্শিদাবাদের তিন বাসিন্দা এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার এক বাসিন্দাকে মুম্বই পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে। পরে তাদের শিলিগুড়িতে বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ।

বিষয়টি জানতে পেরে জেলা পুলিশ প্রশাসন তাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় যাচাইয়ের পর সেসব নথি বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে সকলকে ফিরিয়ে আনে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। জেলা পুলিশের একটা দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। আগামীকাল সোমবার তাদের চারজনকে ফিরিয়ে আনা হবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

উদ্ধার হলেন বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো চার পরিযায়ী শ্রমিক

আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, রবিবার

জিশান আলি মিঞা, মুর্শিদাবাদ: চার ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার পর তাদের ফেরত নিয়ে আসতে বাধ্য হল বিএসএফ।  মুম্বইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়।

কোনওরকম যাচাই না করেই তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় সীমান্তরক্ষী। প্রায় পাঁচ দিন পর উদ্ধার হলেন তারা। জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে রবিবার বিকেলে উদ্ধার হন তারা। ওই তিন নাগরিককে নিজেদের হাতে নেওয়ার পর বিএসএফ কোচবিহারের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর হামলার গুজব ছড়িয়েছে বিজেপি নেতারা, স্ট্যালিন ও জেডিইউ -র অভিযোগ

সোমবার তাদের ঘরে ফেরার কথা। ওই চারজনের মধ্যে তিনজন মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তারা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মন্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রাম পঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ।

আরও পড়ুন: বাংলায় পরিযায়ী শ্রমিক কত?  রাজ্যের কাছে হলফনামা তলব প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের 

অপরজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তারা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তারা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাদের কাছে বৈধ নথি থাকা স্বত্তেও তাদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে দুই বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশে পথদুর্ঘটনা, কেড়ে নিল উত্তরদিনাজপুরের ৪ পরিযায়ী শ্রমিকের প্রাণ

সূত্রের খবর, দু’দিন ধরে তারা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন। স্থানীয়দের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাদের ফেরানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্য সভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও অন্য জনপ্রতিনিধিরা।

পুলিশ ও বিএসএএফকে বিষয়টি জানান তারা। হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিয়ো বার্তা দেখে জেলা পরিষদের সদস্য জিল্লার রহমান ও বিধায়ক নিয়ামত শেখকে বিষয়টি জানাই। তারপর তাদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তারা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভাল লাগছে।

সূত্রের খবর, ১০ জুন তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাদের মুম্বই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। তাদের মারধর করে বিএসএফ বাংলাদেশের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ওই শ্রমিকদের টাকা, মোবাইল ফোনও নাকি কেড়ে নেওয়া হয়।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন প্রায় দুবছর ধরে মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। রবিবার সকালে তার স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়।

তারপরই তাদের ঘরে ফেরানোর জন্য তৎপরতা শুরু হয়। হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এদেশেরই নাগরিক। তার বৈধ নথি আছে। তার মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। বিষয়টি দলনেত্রীকে জানিয়েছি। রবিবার বিকেলে তারা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তারা ঘরে ফিরবেন।

নাজিমুদ্দিনের স্ত্রী পিংকি বিবি বলেন, উদ্ধার হয়েছে জেনে আনন্দ হচ্ছে। যারা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছেন প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই।

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে রবিবার জানানো হয়, মুর্শিদাবাদের তিন বাসিন্দা এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার এক বাসিন্দাকে মুম্বই পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে। পরে তাদের শিলিগুড়িতে বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ।

বিষয়টি জানতে পেরে জেলা পুলিশ প্রশাসন তাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় যাচাইয়ের পর সেসব নথি বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে সকলকে ফিরিয়ে আনে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। জেলা পুলিশের একটা দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। আগামীকাল সোমবার তাদের চারজনকে ফিরিয়ে আনা হবে।