ওবিসি নির্ণয়ে খুশি অনগ্রসর হিন্দু-মুসলিমরা, ধন্যবাদ দিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে

- আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 79
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি ওবিসি নির্ণয়ে যে সমীক্ষা করা হয়, তার সমস্ত নথিপত্র ১০ জুন, ২০২৫ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পেশ করা হয়েছে। এই সমীক্ষা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস কমিশন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে বলেছেন, ব্যাকওয়ার্ডনেস বা পশ্চাৎপদতা নির্ণয়ে ধর্মের বিষয়টি মোটেই বিবেচনা করা হয়নি। যা বিবেচ্য ছিল তাহল, কোন শ্রেণি বা গোষ্ঠী কতটা পিছিয়ে রয়েছে।
এই অনগ্রসর শ্রেণি নির্ণয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগকে সবাই প্রশংসা করেছেন। ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস কমিশন দ্বারা যে সূচকগুলিকে অনগ্রসর শ্রেণি নির্ণয়ে বিবেচনায় রাখা হয়েছে তাহল, ১) সামাজিক পশ্চাদপদতা ২) অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা ৩) শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাদপদতা।
এ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন সচিব আইএএস নুরুল হক সাহেব পুবের কলম-কে বলেন, অনগ্রসরতা বা পশ্চাদপদতা নির্ণয়ে ভারতে প্রথম থেকে এই তিনটি সূচককেই মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। তিনি আরও বলেন, সমীক্ষার ভিত্তিতে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর পশ্চাদপদতা নির্ণয়ের যে কাজটি ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস কমিশন করেছে, তা খুবই সঠিক পদক্ষেপ হয়েছে। এর ফলে অনগ্রসরতার সূচকগুলিকেই মূল ভিত্তি করা হয়েছে। তিনি এই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তারিফ করেছেন।
জনাব নুরুল হক পুবের কলম-কে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক সরকার সমীক্ষার নথিপত্রসমূহ বিধানসভায় লে করেছে অর্থাৎ পেশ করেছে। এর ফলে অনগ্রসরতার সূচকে যে সম্প্রদায়গুলি সংরক্ষণ পাওয়ার যোগ্য বলে ঘোষিত হয়েছে তারা সেই সংরক্ষণের সুবিধা পাবে। অর্থাৎ চাকরিতে নিয়োগ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ অনুযায়ী আবেদন করতে কোনও বাধা রইল না। আর সংরক্ষণের যোগ্য প্রার্থীরা এই দুই ক্ষেত্রেই সংরক্ষণের সুবিধা পাবে।
নুরুল হক সাহেব এই প্রতিবেদককে আরও বলেন, যেহেতু সংরক্ষণের জন্য পশ্চাদপদতা নির্ণয়ের নথিপত্র বিধানসভায় পেশ করা হয়েছে, তাই এ সম্পর্কে রাজ্যপালের আলাদা অনুমোদনের কোনও প্রয়োজন নেই। এই সংরক্ষণ সরাসরি লাগু হবে।
ব্যাকওয়ার্ড কমিশনের অন্যতম সদস্য সামিরুল ইসলাম পুবের কলম-এর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নস্যশেখ সম্প্রদায় এর আগে ওবিসি-এ ক্যাটাগরি ভুক্ত ছিল। কিন্তু এখন নতুন সমীক্ষায় তাদের ওবিসি-বি ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি শুরু করেছে। সামিরুল ইসলাম আরও বলেন, যদি কোনও পক্ষ সন্তুষ্ট না হয় তাহলে তাদের ব্যাকওয়ার্ড কমিশনে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে পূর্বের ওবিসি সংরক্ষণ বাতিল বলে ঘোষণা করেছিল। ফলে বেশকিছু অনগ্রসর শ্রেণি শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। নতুন করে সমীক্ষার দ্বারা যেভাবে সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাতে তাদের বঞ্চনা প্রশমিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে যারা নতুনভাবে পুনরায় সংরক্ষণ পেয়েছে তারা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস কমিশনকে ধন্যবাদ দিয়েছে যে তারা সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অবশ্য নতুন করে সংরক্ষণ পেলেও মোট সংরক্ষণের শতাংশ কিন্তু আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এর আগেও সংরক্ষণের পরিমাণ ছিল ওবিসি-এ এবং বি মিলিয়ে ১৭ শতাংশ। এবারও কিন্তু নয়া ব্যবস্থায় ওই সংরক্ষণের পরিমাণ ১৭ শতাংশই থাকছে।
যদিও ভারতে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ চালু রয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে কোনও কোনও রাজ্যে তার পরিমাণ বেড়েছে। যেমন তামিলনাড়ু। কিন্তু বিজেপি এই সংরক্ষণ বৃদ্ধির এবং নীতিগতভাবে সংরক্ষণেরই বিরোধী।
এদিকে বিজেপি এবং তাদের শাখা-সংগঠনগুলি ব্যাকওয়ার্ড কমিশনের সার্ভেতে মুসলিমরা বেশি সুযোগ পাবেন বলে দাবি করেছে।
উল্লেখ্য, ওবিসি নির্ণয়ের নয়া সার্ভেতে ১৪০টি গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৯টি হচ্ছে মুসলিম গোষ্ঠী এবং ৪১টি হচ্ছে অমুসলিম গোষ্ঠী। অর্থাৎ নতুন মুসলিম গোষ্ঠীগুলি ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণের আওতায় আসছে। আর অমুসলিম গোষ্ঠীগুলি আসছে ৪৪ শতাংশ। ৪১টি গোষ্ঠীর জন্য এখনও সার্ভে চলছে।
কিন্তু সমগ্র বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে আসার জন্য বিজেপি ও তার নেতারা বদ্ধপরিকর। অথচ যারা নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করছেন তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন করে বলেছেন, ওবিসি সার্ভেতে ধর্ম বিবেচনা করা হয়নি। বিবেচনা করা হয়েছে সম্প্রদায়ের বা শ্রেণির অনগ্রসরতাকে।